Explained: ‘রিমুভাল অব ডিফিক্যাল্টি’ প্রয়োগ করেও কেন ধাক্কা খেল রাজ্য? উপাচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত কেন ‘অসাংবিধানিক’?

Explained: আদালত রাজ্যের সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছে। অন্যান্য উপাচার্যদের ভবিষ্যৎ নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

Explained: ‘রিমুভাল অব ডিফিক্যাল্টি’ প্রয়োগ করেও কেন ধাক্কা খেল রাজ্য? উপাচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত কেন 'অসাংবিধানিক'?
সুপ্রিম কোর্টে খারিজ রাজ্যের আবেদন
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 11, 2022 | 8:25 PM

কলকাতা: একদিকে যখন রাজ্য সরকার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কার্যত জেরবার, অন্যদিকে তখনই আরও একটা বড় ধাক্কা খেল রাজ্য। আচার্য তথা রাজ্যপালের অনুমতি না নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছিল, রাজ্যের সেই সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। বিশেষ আইনের সাহায্য নিয়ে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপাচার্য পদে পুনর্বহাল করেছিল রাজ্য। তবে এ ক্ষেত্রে আইনের অপব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি শীর্ষ আদালতের।

‘রিমুভাল অব ডিফিক্যাল্টি’ (সমস্যা নিবারণ), কী সেই ধারা?

এই ধারা কোনও রাজ্যের সরকারকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়। যখন কোনও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাধা আসছে, তখন তা সরাতে এই ধারার সাহায্য নিতে পারে সরকার। ওই ধারায় বলা আছে, ‘যদি কোনও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়’, অর্থাৎ চাইলেই যে এই ধারা প্রয়োগ করা যায় না, সেটা স্পষ্ট।

‘সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক’, কেন ধাক্কা খেল রাজ্য?

আইনজীবীদের মতে, এই ধারায় কোনও ছোট খাটো সিদ্ধান্ত নিতে পারে রাজ্য সরকার। যেমন ধরা যাক, কোনও উপাচার্যের পদ যদি ফাঁকা থাকে, তখন রাজ্য কাকে সাময়িকভাবে ওই পদে বসাবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু কোনও উপাচার্য পদে কাউকে বহাল করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে রাজ্যপালের অনুমতি বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি অভিযোগ ছিল, সার্চ কমিটি গঠন না করেই রাজ্য উপাচার্যদের বহাল করেছে। তাই সোনালি চক্রবর্তীকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে পুনর্বহালের বিজ্ঞপ্তি খারিজ করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টও সেই নির্দেশ বহাল রাখল।

কেন মান্যতা পেল না রাজ্যের সিদ্ধান্ত?

রাজ্যপাল পদে জগদীপ ধনখড় থাকাকালীন প্রায়শই সরকার ও রাজভবনের সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে। তিনি পদে থাকাকালীনই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্য সরকার উপাচার্য নিয়োগ করে রাজ্যপাল তথা আচার্যের অনুমতি ছাড়াই।

কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছিল, এ ভাবে আচার্যের অনুমতিক না নেওয়ার অর্থ সাংবিধানিক পদ তথা রাজভবনকে অস্বীকার করা। এই সিদ্ধান্ত এটা সর্বোতভাবে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছিল হাইকোর্ট। পরে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার।

‘প্রশাসনিক মূর্খামি’ বলছেন শিক্ষাবিদরা

যাঁকে রাজ্য সরকার উপাচার্য পদে পুনর্বহাল করেছিল, আদালতে নির্দেশে তাঁকে সরতে হচ্ছে। এতে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে লাঞ্ছিত হতে হল বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষা ক্ষেত্রে এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা বলে দাবি করেছেন শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত ব্যথিত। রাজ্য সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য উপাচার্যকে জনসমক্ষে লাঞ্ছিত হতে হল। রাজ্যপালের অনুমতি ছাড়া উপাচার্যকে নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগ করা যায় না। যে ভাবে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে অবজ্ঞার স্বীকার হতে হল, তাকে আমি ধিক্কার জানাই।’

শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারও রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বের কাছে শিক্ষার জন্য উন্নত বলে পরিচিত বাঙালির মাথা হেঁট হয়ে গেল। এটা সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপরাধ নয়। প্রশাসনিক মূর্খামির জন্য আজ শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকে লাঞ্ছিত হল।’ সোনালি চক্রবর্তীর অপসারণের পর ওই একই ভাবে নিয়োগ করা উপাচার্যদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।