HC On SSC Recruitment Case: পাশ না করেও ৬০৯ জনের চাকরি! এসএসসি দুর্নীতিতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম

HC On SSC Recruitment Case: এই মামলায় একক বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে আগে বারবার সোচ্চার হতে দেখা গিয়েছে শান্তিপ্রসাদ সিনহা। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ প্রথম থেকেই বলে আসছিল, এই ঘটনায় 'মেইন কালপ্রিট' শান্তিপ্রসাদ সিনহা।

HC On SSC Recruitment Case: পাশ না করেও ৬০৯ জনের চাকরি! এসএসসি দুর্নীতিতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম
পার্থ চট্টোপাধ্যায়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 11, 2022 | 2:11 PM

কলকাতা: চাকরি পাওয়া ৬০৯ জন পাশই করেননি। এসএসসি কাণ্ডে বিস্ফোরক রিপোর্ট পেশ করল তদন্ত কমিটি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্যানেলে ওই ৬০৯ জনের র‍্যাঙ্ক বদলানো হয়েছে। তাহলে সেক্ষেত্রে কি পিছনে কোনও প্রভাবশালীর মাথা কাজ করেছেন? এবার এসএসসি কেলেঙ্কারিতে নাম জড়াল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর তৈরি করা সুপারিশ কমিটিই নাকি বেআইনি। রিপোর্ট পেশ করল তদন্ত কমিটি। আরও চাপ বাড়ল স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা-সহ চার কর্তার।

 ভরা এজলাসে প্রভাবশালীদের নাম করে রিপোর্ট পাঠ

সোমবারের শুনানিতে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন শান্তিপ্রসাদ সিনহা। তখনই রিপোর্ট পেশ করে বিচারপতি আর কে বাগের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি। এই রিপোর্ট পড়ে শোনানো হয়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, গ্রুপ ডি-র ক্ষেত্রে এই ৬০৯ জনকেই ভুয়ো নিয়োগ করা হয়েছিল। কমিটির বক্তব্য, ২০১৯ সালে ১ নভেম্বর একটি সুপারিশ কমিটি তৈরি হয়েছিল। তারাই গ্রুপ ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ৬০৯ জনের প্যানেল তৈরি করেছিল। এক্ষেত্রে দফতরের প্রথম সারির বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। মূলত তাঁদের সুপারিশেই তৈরি হয়েছিল প্যানেল। আর সেগুলিকে রেজিস্ট্রারে নথিভুক্তও রাখা হয়েছিল। শর্মিলা মিত্র, সুবিলেশ ভট্টচার্য, মহুয়া মৈত্র, অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শেখ সিরাজউদ্দিনের নাম উঠে এসেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা যেতে পারে। অন্যদিকে সমরজিৎ আচার্য ও শান্তিপ্রসাদ সিনহার বিরুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ আদালতের। আদালত বলছে, তাঁরাই মূলত ভুয়ো সুপারিশ পত্র তৈরি করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ভুয়ো নথি বানানোর অভিযোগে একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হতে পারে।

শান্তিপ্রসাদই ‘প্রধান কালপ্রিট’

এই মামলায় একক বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে আগে বারবার সোচ্চার হতে দেখা গিয়েছে শান্তিপ্রসাদ সিনহা। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ প্রথম থেকেই বলে আসছিল, এই ঘটনায় ‘মেইন কালপ্রিট’ শান্তিপ্রসাদ সিনহা। প্রয়োজনে সিবিআই তাঁকে জেলে পুরেও জেরা করতে পারেন বলে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। শান্তিপ্রসাদ প্রথম থেকেই দাবি করছিলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সঠিক নয়। কিন্তু তদন্ত কমিটির এই রিপোর্ট আদালতে পেশের পর শান্তিপ্রসাদের মুখ কার্যত বন্ধ হয়ে গেল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখ্য, কাঠগোড়ায় দাঁড়ানো বাকি আধিকারিকদের বয়ানেও একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। তাও প্রমাণ করেছে এই রিপোর্ট।

আদালতের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ হতে পারে?

গত শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছিল। তদন্ত কমিটির পেশ করা রিপোর্টেও স্পষ্ট হল, একক বেঞ্চের পর্যবেক্ষণই সঠিক। একাধিক দুর্নীতি হয়েছে নিয়োগে। এবার প্রশ্ন, কী পদক্ষেপ করা হতে পারে আদালতের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে? এক, পাশ না করেই যাঁদের নিয়োগ হয়েছিল, তাঁদের চাকরি বাতিল করে দেওয়া হবে। আর যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁদের জন্য নতুন প্যানেল তৈরি করে নিয়োগ করা হবে। কিন্তু বিষয়টা এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। এই দুর্নীতিতে বোর্ডের রাঘব বোয়ালদের যোগ থাকার প্রমাণ আরও সুদৃঢ় হচ্ছে, সেক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়, সেটা দেখার।

মামলাকারীর আইনজীবীর বক্তব্য

মামলাকারীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলেন, “টাকার লেনদেন হয়েছিল কিনা, সে ব্যাপারে কমিটি তদন্ত করেনি। তবে কমিটি বলেছে, মানি ট্রেলের ব্যাপার তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হলে, তা খতিয়ে দেখতে পারে। এতদিন ধরে কর্তারা বলে আসছিল, কমিটির রিপোর্ট না এলে তদন্ত করা যাবে না। আজ তদন্ত কমিটি রিপোর্টে স্পষ্ট বলেছে, এসপি সিনহার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে দুর্নীতিতে। আইপিসি ৪২০ কেসে অভিযোগ রয়েছে। এরপরে আর স্বস্তির জায়গা নেই তাঁর।”

নাম জড়াল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের

এই ঘটনার এতদিন পর্যন্ত কোথাও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম আসেনি। তবে এদিনের শুনানিতে এসেছে। অভিযোগ যে,নিয়োগের আগে যে সুপারিশ কমিটি তৈরি হয়েছিল, তা হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ মাফিক। এ প্রসঙ্গে আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলেন, “আদালত সুপারিশ কমিটি গঠনের বিষয়টিকেই বেআইনি বলেছে। কারণ কেউ এই কমিটি গঠনই করতে পারে না। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই কমিটি কোনও সরকারি আদেশে হয়নি। মন্ত্রীর নির্দেশে জয়েন্ট সেক্রেটারি করেছেন। তাই এই কমিটিই বেআইনি।”

তদন্ত কমিটির নজরে এসএসসি দুর্নীতি

♦ এসএসসি কেলেঙ্গারিতে সরাসরি নাম জড়াল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর

♦  হাইকোর্টে নিযুক্ত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম

♦  পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তৈরি করা তদন্ত কমিটি বেআইনি

♦  ডিভিশন বেঞ্চে জানাল আদালতের তৈরি করা তদন্ত কমিটি

♦  নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে সরাসরি যুক্ত শান্তিপ্রসাদ সিনহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম

♦  ভুয়ো সুপারিশপত্র তৈরি করেছিলেন শান্তিপ্রসাদ

♦  শান্তিপ্রসাদ ভুয়ো সুপারিশপত্র দেন পর্যদ সভাপতিকে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে FIR-র সুপারিশ কমিটির। বাকিদের ক্ষেত্রেও এফআইআর-এর সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।