আমার বই পড়ে শঙ্খবাবুর মনে হয়েছিল তিনি কেন লেখেন? ভাবা যায়!

তাঁর একাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ করেছি আমি। তিনি ইরাকি কবিতার অনুবাদ করেছিলেন। পরে বই হয়ে প্রকাশিত হয় 'তালপাতা' প্রকাশনা থেকে। সেই বইয়ে আমার প্রচ্ছদ ছিল। প্রচ্ছদটি আমারও বেশ প্রিয়।

আমার বই পড়ে শঙ্খবাবুর মনে হয়েছিল তিনি কেন লেখেন? ভাবা যায়!
শঙ্খ ঘোষের স্মৃতিচারণে হিরণ মিত্র
Follow Us:
| Updated on: Apr 21, 2021 | 9:49 PM

হিরণ মিত্র: ১৯৯৫ সালে আমার ছবি নিয়ে একটা প্রদর্শনী হয় বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। প্রায় ২৫ বছর বাদে এটা আমার ছবির বড় প্রদর্শনী। সেই প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে কবি শঙ্খ ঘোষ এসেছিলেন। তিনি ছবি দেখতে ভালবাসতেন। আমকেও খুব ভালবাসতেন। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনও প্রদীপ জ্বলেনি এবং ফিতে কাটা হয়নি। তিনি ঘুরে ঘুরে আমার ছবি দেখলেন। তারপর একটা কবিতা লিখলেন। ৫ লাইনের কবিতাটি এরকম:

হারিয়ে যাওয়া দেশের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া সময়ের মধ্যে নিজেকে ফিরে ফিরে পাওয়া দৃশ্যে স্পর্শে ভাল লাগবার সম্পূর্ণ এক অনুভব।

এই কবিতা দিয়ে সেবার আমার চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন হয়েছিল। ২০০৩ সালে কবি শঙ্খ ঘোষের জন্মদিনে আমি একটা লেখা লিখি। সেখানে এই ঘটনাটা উল্লেখ করেছিলাম। সেই সময় দে’জ পাবলিশিং থেকে শঙ্খদাকে নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়। সম্পাদনা করেছিলেন দেবেশ রায়। সম্পাদকের অনুরোধে আমি পুরো বইটির অলংকরণ করি। এই সংকলনে আমার একটা দীর্ঘ লেখাটি প্রকাশিত হয়।

তাঁর একাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ করেছি আমি। তিনি ইরাকি কবিতার অনুবাদ করেছিলেন। পরে বই হয়ে প্রকাশিত হয় ‘তালপাতা’ প্রকাশনা থেকে। সেই বইয়ে আমার প্রচ্ছদ ছিল। প্রচ্ছদটি আমারও বেশ প্রিয়। শঙ্খদা প্রকাশককে বলেছিলেন, বইটার প্রচ্ছদ যেন আমি করি। আমি মন দিয়ে করে দিয়েছিলাম এবং তাঁরও খুব পছন্দ হয়েছিল। শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ১৯৯৪ সালে আমার একটা বই বেরয়। নাম ‘আমার ছবি লেখা’। সেটা ওনার প্রিয় বই হয়ে উঠেছিল। এ কথা তিনিই আমাকে বলেছিলেন।

একবার ‘অহর্নিশ’ পত্রিকা আমাকে সংবর্ধনা দেয় জীবনানন্দ সভাঘরে। সেই পত্রিকার সম্পাদককে শঙ্খদা বলেছিলেন– আমি হিরণের হাতে সংবর্ধনা তুলে দিতে চাই। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হয়। তিনি সময় মতো আসেন। সেদিন তিনি আমাকে একটা অবিশ্বাস্য কথা বলেছিলেন। কথাটা হল ‘আমার ছবি লেখা’ বইটি পড়ে তাঁর মনে হয়েছে তিনি কেন লেখেন! ভাবা যায়? এমন কথাও তিনি নির্দ্বিধায় বলতে পারতেন।

তাঁর সঙ্গে নানা আড্ডার স্মৃতি মনে পড়ছে। একটা মজার স্মৃতি বলছি। ২০১৫ সালের নভেম্বরে কবিবন্ধু রাহুল পুরকায়স্থর বাড়িতে ভুমেন্দ্র গুহর ‘কবিতা সমগ্র’ উদ্বোধন করেতে এলেন শঙ্খ ঘোষ। বইটি খুব যত্নে সম্পাদনা করেছে রাহুল। সেখানেও আমার প্রচ্ছদ! তো উদ্বোধনের দিন আমরা ভেবেছি, তিনি বুঝি বইটি উদ্বোধন করে চলে যাবেন। কিন্তু আড্ডা এতই জমে গিয়েছে যে তিনি আর উঠতে চাইছেন না! এদিকে আমরা পড়েছি মহা ফাঁপরে! রাহুল উশখুশ করছে। ভুমেনদাও ছটফট করছে পানের জন্য। আমারও বেশ নেশা পেয়েছে। এমন সময় শঙ্খদাকে বলা হল– আমরা একটু পান করতে চাই। আপনি কি থাকবেন? তিনি এতই রসিক, একথা শুনে বললেন– আমি থাকলে কি তোমাদের অসুবিধে হবে? আমার তো কোনও অসুবিধে নেই! তারপর পান শুরু হল। তিনি আমাদের সঙ্গ দিলেন, পান না করেই। সনন্দে আমাদের সঙ্গে রয়ে গেলেন অনেকটা সময়। আড্ডা গড়াল রাত অব্দি। সত্যি কথা বলতে, তিনি আমাদের খুব প্রশ্রয় দিয়েছিলেন।

শঙ্খ ঘোষের স্কেচ: হিরণ মিত্র