দেশের প্রথম করোনা আক্রান্ত মহিলা হিসেবে জ্যোৎস্না বসুর মরণোত্তর দেহদানে নজির কলকাতায়
এ রাজ্যে এই নিয়ে মোট তিনজন করোনা (COVID 19) আক্রান্তের দেখ চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার কাজে লাগানো হচ্ছে।
কলকাতা: মরণোত্তর দেহদানের নজির আগেও তৈরি হয়েছে এ রাজ্যে। তবে করোনাকালে এই দেহদানের ঘটনা দেশ জুড়ে নজির তৈরি করছে। সম্প্রতি কলকাতার চিকিৎসা মহলে বিপ্লব ঘটিয়ে করোনায় মৃত ব্রজ রায়ের প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সি করা হয়। আর এবার জ্যোৎস্না বসু নামে এক মহিলার দেহদানের ঘটনায় ফের নজির গড়ল কলকাতা। প্রথম মহিলা করোনা আক্রান্ত হিসেবে জ্যোৎস্না দেবীর দেহ চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার কাজে লাগানো হচ্ছে।
মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনের পুরোধা ব্রজ রায়ের দেহের অটোপ্সি হওয়ার পর আরও জ্যোৎস্না দেবীকে নিয়ে আরও দু’জন আক্রান্তের দেহ দান করা হল। জ্যোৎস্না বসুর পর দেহদান করা হয়েছে এক চিকিৎসকের। ড. বিশ্বজিত চক্রবর্তী নামে ওই চিকিৎসক পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় ব্যক্তি, যার দেহদান করা হয়েছে। গত ১৪ মে করোনা আক্রান্ত হয়ে শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন জ্যোৎস্না বসু। ভর্তি হওয়ার দু’দিন পর হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
জ্যোৎস্না দেবীর নাতনি ড. তিস্তা বসু জানিয়ে্ছেন, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে জ্যোৎস্না দেবীর অটোপ্সি হয়েছে। তিনি আরও জানান, ‘গণদর্পণ’ নামে এক সংস্থায় বছর দশেক আগেই দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন তাঁর ঠাকুমা। তাঁর সেই ইচ্ছে মেনেই দেহ গবেষণার কাজে লাগানো হচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নিয়ে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই জ্যোৎস্না দেবী ও ড. চক্রবর্তীর মৃতদেহের প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সি করা হয়েছে। ব্রজবাবুরও অটোপসি হয়েছিল ওই হাসপাতালেই।
আরও পড়ুন: সুস্থ বুদ্ধবাবু, তবে শরীরে করোনার প্রভাব বুঝতে হাসপাতালে ভর্তি করে পরীক্ষার প্রয়োজন, বলছেন চিকিৎসকরা
জানা গিয়েছে ১৯২৭ সালে অবিভক্ত বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্ম জ্যোৎস্না দেবীর। প্রথম জীবনে অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। তাই ব্রিটিশ টেলিকমে অপারেটরের চাকরি নেন। সেখান থেকেই ক্রমশ ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের নেত্রী হয়ে ওঠেন জ্যোৎস্না দেবী। ১৯৪৬-এর ‘অল ইন্ডিয়া পোস্ট অ্যান্ড টেলিকম স্ট্রাইক’-এও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তাই জ্যোৎস্না দেবীর জীবন মোটেই সাধারণ ছিল না। তাঁর আর এক নাতনি রঞ্জিনী বসু টু্ইটারে জ্যোৎস্না দেবীকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে জানিয়েছেন, বরাবরই তাঁরা তাঁদের ঠাকুমাকে ‘সুপার ওম্যান’ হিসেবে দেখে এসেছেন। মৃত্যুকালেও সে কথাই প্রমাণ করে দিয়ে গেলেন তিনি।