EXCLUSIVE: ‘নিহত ছাত্রের সঙ্গে ৩-৪ মিনিট কথা হয়েছিল’, বলছেন ভাইরাল চিঠির ‘রুদ্রদা’
JU: রুদ্র জানান, ৭ অগস্ট প্রথম ওই ছাত্র বিভাগে এসেছিল। সকাল সাড়ে ১১টা ১২টা নাগাদ তার সঙ্গে কথা হয় রুদ্রর। ৩-৪ মিনিটের কথা হয়। এরপর বুধবার রাতে প্রথম বর্ষের ছাত্রের উপর থেকে পড়ে যাওয়া অবধি আর কোনও কথাই হয়নি।
কলকাতা: যাদবপুরে ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে মোড় ঘোরানো তথ্য সামনে আসছে। রবিবারই নিহত ছাত্রের (যদিও এই চিঠি আসলে কার লেখা প্রশ্ন উঠছে) একটি চিঠি ভাইরাল হয়। ১০ অগস্ট ডিনকে চিঠিটি লেখা হয়েছে। অথচ ৯ অগস্ট রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বিএ প্রথম বর্ষের ওই ছাত্র হস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে যান। ভোরের দিকে মৃত্যু হয় তাঁর। ইতিমধ্যেই নিহতের বাবা দাবি করেছেন, এ চিঠি তাঁর ছেলের লেখা নয়। বরং ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছিলেন তিনি। চিঠিতে ‘রুদ্রদা’ নামে এক সিনিয়রের কথাও লেখা আছে। যিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ। জানা যাচ্ছে, এই ‘রুদ্রদা’র নাম রুদ্র চট্টোপাধ্যায়। যদিও রুদ্র চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই বলেছেন, “আমি হুমকি দেওয়ার কেউ না। আমি হস্টেলেই থাকি না, আমার বাড়ি ৫ কিলোমিটার দূরে।”
গত তারিখ ১০টা নাগাদ ডিনের কাছে ফোন করেন এক পড়ুয়া। সেই পড়ুয়া ডিনকে যা যা বলেছিলেন, তার সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছে ভাইরাল হওয়া চিঠির বিষয়। এখানেই প্রশ্ন, তাহলে কি ষড়যন্ত্র করেই নিহত ছাত্রের নামে এই চিঠি লিখল অভিযুক্তরা? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ডিনকে ফোন করেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক পড়ুয়া। যিনি ফোন করে নিজেকে রুদ্র নামে পরিচয় দেন। প্রশ্ন উঠছে, নাম জানিয়ে পরিকল্পনা করেই কি লেখা হল চিঠি? সত্যিই যদি তেমনটা হয় তাহলে তো প্রথমবর্ষের ছাত্রের নৃশংস পরিণতির পিছনে শুধু র্যাগিংতত্ত্ব আর থাকে না, যুক্ত হয় ষড়যন্ত্রও?
যদিও রুদ্র চট্টোপাধ্যায় নামে যে ছাত্রের সঙ্গে টিভি নাইন বাংলা কথা বলেছে, তিনি বলেন, “আমি ওকে ছাদ থেকে ফেলার হুমকি দেওয়ার কেউ নই। আমি মেন হস্টেলে থাকি না। আমি কোনও হস্টেলেই থাকি না। আমার বাড়ি ক্যাম্পাস থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। হস্টেল পাওয়ার কথাই নয় আমার। আর ক্যাম্পাসের ভিতরের হস্টেলে র্যাগিংয়ের প্রবণতা খুব একটা নেই, ক্যাম্পাস থেকে আধ মাইল দূরে যাদবপুর থানার পাশের হস্টেলে র্যাগিং কালচার দীর্ঘদিনের। ২০২০ সালে যখন ভর্তি হই তখনই শুনেছি। এরপর আমরা অনলাইন ব্যাচ ছিলাম। ২০২০-২১ সালে শুনিনি কিছু। ২০২২ সালে যখন আবার নতুন ব্য়াচ আসে একই কথা শুনেছি। ২০২৩ সালেও একই কথা শুনছি।”
রুদ্রের দাবি, তিনি হুমকি নয় সাবধান করেছিলেন নতুনদের। রুদ্রর কথায়, “কলকাতায় একজন নতুন ছেলে পড়তে এসেছে, বিভাগের সিনিয়র হিসাবে আমার কর্তব্য বর্তায় তাঁকে সাবধান করা। তাঁকে এইটুকুই বলেছিলাম, মেন হস্টেলে এরকম হয়, সাবধানে থাকবি। যাদের চিনিস সকলকে নিয়ে থাকবি।”
রুদ্র জানান, ৭ অগস্ট প্রথম ওই ছাত্র বিভাগে এসেছিল। সকাল সাড়ে ১১টা, ১২টা নাগাদ তাঁর সঙ্গে কথা হয় রুদ্রর। ৩-৪ মিনিট কথা হয়। এরপর বুধবার রাতে প্রথম বর্ষের ছাত্রের উপর থেকে পড়ে যাওয়া অবধি আর কোনও কথাই হয়নি। ৮ তারিখ বিভাগীয় ওরিয়েন্টেশন ছিল। রুদ্র জানান, সেদিন দেখা হয় ওই ছাত্রের সঙ্গে। তবে ব্যস্ততার কারণে কোনও কথা হয়নি। শুধু হাসি বিনিময় হয়েছিল। রুদ্র জানান, ভাইরাল চিঠি কার লেখা তা তদন্তকারীরাই বলতে পারবেন। ৯ তারিখ মৃতুর ঘটনা অথচ ১০ তারিখ চিঠি লেখা হল, এ নিয়ে প্রশ্ন রুদ্রর মনেও। বলেন, “এই ঘটনায় যারা দোষী, তারা শাস্তি পাক। যদি আমি দোষী হই তাহলে আমাকেও যেন সেই শাস্তি না এড়িয়ে যায়।” রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথাও বলছেন তিনি।
সৌরভ, মনোতোষ, দীপশেখর ধৃত তিনজনকেই চেনেন বলে জানান রুদ্র। বলেন, “যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের ক্যাম্পাসেই দেখেছি। সৌরভকে চিনতাম, আগে দাদা বলতাম, এখন দাদা বলতে লজ্জা করে। মনোতোষ, দীপশেখর আমার জুনিয়র, আমার ব্যর্থতা আমি তাদের র্যাগিং নিয়ে কোনও শিক্ষা দিতে পারিনি।” এই ঘটনা পুরোটাই পূর্বপরিকল্পিত বলছে জুটা।
জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “ডায়েরির পাতাটা দেখে আমি সত্যি অবাক হয়ে গেলাম। ৯ তারিখ রাতে একজন পড়ুয়া ডিন অব স্টুডেন্টসকে ফোন করে যে কথাগুলি বলেছিল, সেগুলিই প্রায় হুবহু এই ডায়েরির পাতায় উল্লেখ আছে। এটা কি একেবারে পুরোটাই পরিকল্পনা মাফিক, সে প্রশ্ন তো আসবেই। আমি ভাবছিলাম সেদিন সাড়ে ১২টার পর হস্টেলে জিবি হয়েছে। সেখানে কিছু ভার্সান দেওয়ার জন্য আলোচনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সেটা ১০ তারিখ হয়ে গিয়েছে। ডায়েরির পাতাতেও দেখলাম ১০ তারিখই লেখা। সবই কাকতালীয় কি না জানি না।”