স্বজনরা ফিরিয়ে নেবেন! মৃত্যু পথযাত্রী বন্দিদের নিয়ে চিন্তায় জেল কর্তারা

কিন্তু দীর্ঘদিন লৌহকপাটে দিন গুজরান করা ব্যক্তিকে আবার 'আপনজন' বলে পরিজনেরা কি ঠাঁই দেবেন, আদালতের নির্দেশ পালনে তা ভাবাচ্ছে কারা কর্তা-আধিকারিকদের।

স্বজনরা ফিরিয়ে নেবেন! মৃত্যু পথযাত্রী বন্দিদের নিয়ে চিন্তায় জেল কর্তারা
ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার হয় সাবিল আহমেদ
Follow Us:
| Updated on: Jan 11, 2021 | 11:17 PM

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: আদালতের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন লৌহকপাটে দিন গুজরান করা ব্যক্তিকে আবার ‘আপনজন’ বলে পরিজনেরা কি ঠাঁই দেবেন, আদালতের নির্দেশ পালনে তা ভাবাচ্ছে কারা কর্তা-আধিকারিকদের।

চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, অসুস্থতায় জীবন আয়ু ক্রমেই ক্ষয়িষ্ণু হয়ে আসছে কিছু বন্দির। এমন ‘টার্মিনালি ইল’ বা মুমূর্ষু বন্দি অর্থাৎ জীবন সায়াহ্ন থাকা ব্যক্তিরা যেন তাঁদের প্রাণ বায়ু বেরোনোর সমযে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কাটাতে পারে, তার বন্দোবস্ত করতে হবে। কয়েকদিন আগে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বন্দিদের নিয়ে একটি মামলায় তেমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ।

হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকরী করা নিয়ে সোমবার দুপুরে আলিপুর মহিলা, বর্ধমান, দমদম, প্রেসিডেন্সি, বহরমপুর-সহ কয়েকটি সংশোধনাগারের সুপারদের নিয়ে বৈঠক হয় কারা দফতরে। ছিলেন এডিজি (কারা) পীযূষ পাণ্ডে। সূত্রের দাবি, সেখানে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ মানতে গিয়ে কোথাও কোনও সমস্যা হলে সেই স্তরে (আদালত, পুলিস, বন্দির পরিবার) কথা বলে সমাধান করতে হবে। কোথাও যেন কোনও ভুলচুক না হয়, তা-ও দেখতে বলা হয়েছে সুপারদের।

কিন্তু আদালতের নির্দেশের মান্যতায় প্রধান অন্তরায় হতে পারে, পরিজনদের ব্যবহার। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে জেলে থাকায় মরণাপন্ন বন্দি-রোগীদের সঙ্গে নাড়ির টান প্রায় ছিঁড়ে যায়। এমনকি, সামান্য খোঁজটুকুও রাখেন না অনেক বন্দির পরিজন। সেই পরিস্থিতিতে মুত্যুর দোরগোড়ায় থাকা বন্দিকে অনেক পরিজন ফেরত নিতে চাইবেন না, তেমনই মত বিভিন্ন কারা কর্মী-আধিকারিক-কর্তাদের।

আরও পড়ুন: কয়লা খনিতে বিশেষজ্ঞ দল পাঠাতে কোল ইন্ডিয়াকে চিঠি দিল সিবিআই

তাঁদের বক্তব্য, “যে বন্দিদের কথা বলা হচ্ছে, তাঁদের অনেকের চলাফেরার শক্তি নেই। বাড়িতে নিয়ে গেলে নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে পরিজনকে, সেইসব আশঙ্কা থেকে অনেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে চান না বন্দিকে।” সেই কথার সূত্র ধরে আরেক আধিকারিকের বক্তব্য, “বাড়ি নিয়ে গেলে চিকিৎসার খরচ বহন করতে হবে, তাই অনেকে ভাবেন জেলের মধ্যেই থেকে যান বন্দি পরিজন। তাতে অন্তত চিকিৎসার দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে হবে না। এটাই বাস্তব সমস্যা।” তবে সেসব ভাবনা সঙ্গী থাকলেও আদালতের নির্দেশ পালনে কোনও গাফিলতি হবে না, তা অবশ্য স্পষ্ট করছেন বিভিন্ন কারা কর্তা-আধিকারিকরা।

‘টার্মিনাল ইল’ বন্দি কারা তা হবেন, তা নিয়ে অবশ্য খাতায় কলমে কোনও স‌ংজ্ঞা নেই। এক্ষেত্রে জেল চিকিৎসক যাঁকে এই তালিকাভুক্ত করেন, তিনিই ‘টার্মিনাল ইল’-এর তকমা পান। আর বর্তমানে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলে ৩০ জন এই ধরনের বন্দি রয়েছে, যাঁদের আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আরও পড়ুন: ‘ওরকম মন্ত্রিত্ব হাওয়াই চটির মত ফেলে আসতে পারি’, ‘কানন’ কাঁটায় বিদ্ধ মমতা