ফিরহাদকে ‘পাকিস্তান’ খোঁচা, আগামিকাল অভিষেক-পিকের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন জিতেন্দ্র
আগামিকাল সন্ধে ৬টায় জিতেন্দ্র তিওয়ারি কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) দফতরে বৈঠকে যোগ দিতে আসছেন। সেখানে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরও (Prashant Kishor) উপস্থিত থাকবেন বলে জানা যাচ্ছে।
আসানসোল: নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, তৃণমূলের অন্তর্বর্তী কোন্দলও তত তীব্র আকার ধারণ করছে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে (Firhad Hakim) দেওয়া জিতেন্দ্র তিওয়ারির (Jitendra Tiwari) চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
জিতেন্দ্রর চিঠি প্রসঙ্গে ফিরহাদ হাকিম এদিন বলেন, ‘জিতেন্দ্র বিজেপির গ্যাস খেয়ে এই চিঠি দিয়েছেন।‘ পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর এমন কথার পরে তাঁর বিরুদ্ধে রীতিমতো তোপ দেগে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিজেপির সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। ওনার সঙ্গে করতে পারেন হয়তো। এটা আমার গোপন চিঠি। সেটা কী করে প্রকাশ্যে এল!’ তিনি আরও বলেন, ‘উনি কি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আলোচনা করে এসব কথা বলছেন। আমাকে মঙ্গলবার কলকাতায় ডাকা হয়েছে। আমি যাব ও যা বলার বলবো। তবে আমি চিঠি লিখে কোনও ভুল করিনি।‘ সূত্রের খবর, আগামিকাল সন্ধে ৬টায় জিতেন্দ্র তিওয়ারি কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) দফতরে বৈঠকে যোগ দিতে আসছেন। সেখানে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরও (Prashant Kishor) উপস্থিত থাকবেন বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে ফিরহাদ ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, জিতেন্দ্রর মুখে ‘পাকিস্তান’-এর কথাটা শুনে খারাপ লেগেছে তাঁর।
এদিন দিসেরগড়ে বৈদ্যুতিক চুল্লি উদ্বোধনের সময় জিতেন্দ্র বলেন, ‘কলকাতা এগিয়ে গেলে আমরা খুশি হই। আসানসোল এগিয়ে গেলে অনেকেই আছেন যাঁরা দুঃখ পান। তাঁরা দুঃখ পেলে ঘরে থাকুন। আসানসোল এগোলে আসানসোলের মানুষের ভাল হবে। আসানসোলের মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণের জন্য যদি চেয়ার ছাড়তে হয়, তাতেও রাজি আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কলকাতায় বসে কেউ যদি ভাবেন চেয়ার, গাড়ি, সিকিউরিটি দিয়েছি; কিন্তু তুমি আসানসোল নিয়ে কিছু বলতে পারবে না, কলকাতার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না, তাহলে আমি বলব এমন চেয়ার সিকিউরিটি গাড়ির দরকার নেই। এই শহর আমার প্রাণকেন্দ্র। এখানকার মাটি আমার নিজের মাটি। এখানকার মানুষ যা চাইবেন তাই করবো।’
তবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি এদিনও তাঁর আনুগত্য প্রকাশ পেয়েছে। জিতেন্দ্র বলেন, আমি কৃতজ্ঞ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি আসানসোলের উন্নয়নে বরাবর আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। এই শহর যাতে এগিয়ে যায়। আশা করি এই বৈদ্যুতিক চুল্লি তারই একটা অঙ্গ। এটা কলকাতার ঘরে বসে কেউ ভাবেননি, আমরাই ভেবেছিলাম যে এমন একটা চুল্লি এখানে প্রয়োজন।
সরাসরি তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু বললে আমি শুনবো। অন্য কারোর কথা আমি শুনতে রাজি নই। এখান থেকে প্রচুর টাকা রাজস্ব তুলে নিয়ে যাবে আর এখানে দেবে না? কথায় কথায় সবাইকেই উনি (ফিরহাদ) বিজেপি বানিয়ে দেন, এটা ঠিক নয়।
সোমবার সকালে রাজ্য রাজনীতি শোরগোল পড়ে যায় জিতেন্দ্র তিওয়ারির একটি বিস্ফোরক চিঠিতে। যেখানে আসানসোলের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের পাঠানো টাকা খরচ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। ফিরহাদকে লেখা চিঠিতে তাঁর বক্তব্য ছিল, “রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্রের টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।” পুরমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের ২০০০ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে আসানসোল। রাজনৈতিক কারণে পুরদফতর এই টাকা নিতে দেয়নি। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে টাকা নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে কেবল রাজনৈতিক কারণে।”
আরও পড়ুন: শুভেন্দুকে জেড ক্যাটাগরি নিরাপত্তা দিতে চাইছে কেন্দ্র: সূত্র
তিনি আরও অভিযোগ করেন, একই কারণেই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের টাকা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে আসানসোল। প্রাক্তন মেয়র তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়কের এই চিঠি সাম্প্রতিক বঙ্গ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করে। এহেন চিঠিতে তাঁকেও তৃণমূলের ‘বেসুরো’ নেতাদের তালিকায় ফেলতে শুরু করেন পর্যবেক্ষকেরা।
তবে ফিরহাদ হাকিম সাতবার ফোন করার পরও জিতেন্দ্র সাড়া না দেওয়ায় আসানসোলের প্রাক্তন মেয়রেরও ‘তাল কাটার’ আশঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। যদিও ফিরহাদের দাবি, জিতেন্দ্র তিওয়ারি চিঠিতে যা উল্লেখ করেছেন, তা অনেকটাই ভুল। তিনি বলেন, “জিতেন যে টাকার কথা বলছে সেগুলো ভুয়ো। স্মার্ট সিটিতে ১০০ কোটি টাকার ৫০ শতাংশ রাজ্য সরকার দেয়। সব সময় কেন্দ্রীয় সরকার পুরো টাকা দেয় না। স্মার্ট সিটি প্রকল্পতে আমরা উৎসাহ দেখাই না। কেন্দ্রীয় সরকার যদি ৫০০ কোটি দেয় তাহলে আমাদেরও ৫০০ কোটি করে দিতে হবে। আমাদের অত বাজেট থাকে না।” কটাক্ষের সুরে তিনি আরও বলেন, আসানসোলের উন্নয়নের জন্য ওঁকে অনেক টাকাই দেওয়া হয়েছে। সেসব তো চিঠি লেখেনি। ও নিশ্চয়ই গ্যাস খেয়ে লিখেছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগেই রাজ্যে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ! দিনভর বৈঠক চলল বিকাশ ভবনে