Judge Anirban Das: সঞ্জয়কে না দিলেও সল্টলেকের আনসারকে ফাঁসির সাজা দেন বিচারক অনির্বাণ, কোন যুক্তিতে?
৯ বছর আগের একটি মামলা। তখন বিচারক অনির্বাণ দাস কর্মরত ছিলেন বারাসতে। মাদক কারবার সংক্রান্ত মামলায় এক আসামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত আসামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন? সে সময়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ কী ছিল?
কলকাতা: আরজি কর মামলায় দোষী সঞ্জয় রায়, তার সাজা নিয়ে এখন গোটা বাংলার নজর কেড়ে নিয়েছে। তার পাশাপাশি যাঁর ওপর সবচেয়ে বেশি চর্চার আলোকে এসেছেন তিনি শিয়ালদহ জেলা দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। গোটা বাংলা, দেশ-বিশ্ব যখন সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার, তখন তিনি সে স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের কঠোরতম পর্যবেক্ষণে অনড় ছিলেন। এই ঘটনার ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়। তাঁর কলমের খোঁচায় সঞ্জয়ের ফাঁসি হয়নি, তিনি আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর হাতে ফাঁসির সাজা পেয়েছিল এক আসামী। তার বর্তমান কী অবস্থা?
৯ বছর আগের একটি মামলা। তখন বিচারক অনির্বাণ দাস কর্মরত ছিলেন বারাসতে। মাদক কারবার সংক্রান্ত মামলায় এক আসামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত আসামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন? সে সময়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ কী ছিল?
সূত্রের খবর, ২০০২ সালে ৩ অক্টোবর মাদক চক্রের পাণ্ডা আনসারকে গ্রেফতার করে এনসিবি (নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর) আধিকারিকদের হাতে। সল্টলেকের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় তার একটা গাড়ি ও নগদ ১৬ হাজার টাকা। সেদিন সল্টলেকের বাড়ি থেকে একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়েছিল। সে সময়েই হাতেনাতে ধরা পড়ে সে। ধৃতকে জেরা করে গ্রেফতার করা হয় এই চক্রের আরও এক পাণ্ডাকে। সে সময়ে সল্টলেকে মাদক উদ্ধারে তল্লাশি অভিযানে নামেন আধিকারিকরা। দুটি জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয় ৫৩ কেজি ৫০০ গ্রাম হেরোইন।
এরপর মামলা ওঠে বারাসত আদালতে। বিচারক অনির্বাণ দাস তখন এনডিপিএস (যেখানে মাদক সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়) আদালতে কর্মরত। তাঁরই এজলাসে মামলাটি ওঠে। গোটা শুনানি প্রক্রিয়ায় সওয়াল জবাব শোনার পর আনসারকে দোষী সাব্যস্ত করেন তিনি। তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন।
সেই মামলার ক্ষেত্রে বিচারক অনির্বাণ দাসের বিশেষ পর্যবেক্ষণ ছিল। তিনি আদালতের রায়ের কপিতে লিখেছিলেন, “খুনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, দোষী যে সে কোনও এক ব্যক্তির জীবন কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু এখানে বিপুল পরিমাণ হেরোইন বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যা বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই নেশা বহু পরিবারের সদস্যদের ধ্বংস করেছে। এই ধরনের দোষীরা সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। এ ধরনের দোষীরা জাতির শত্রু।”
বিচারক আদালতের রায়ে লেখেন, “আনসার এর আগেও মাদক মামলায় দু’বার দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। কিন্তু তারপরও নিজেকে শোধরায়নি। সে ওই পেশাতেই থেকে গিয়েছে। সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার হারিয়েছে।” বিচারক অনির্বাণ দাস তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও উচ্চ আদালতে আনসারের ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়।
কিন্তু আরজি করের মতো নৃশংস, বিভৎস, নক্কারজনক ঘটনা কেন বিচারকের পর্যবেক্ষণে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়? ভারতীয় দণ্ডবিধিতে বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড অর্থাৎ ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের সাজা রয়েছে। আদতে রায়দানের দিন সঞ্জয়ের আইনজীবী সেঁজুতি সরকার জোর সওয়াল করেছিলেন, ‘আদালতে বোঝাতে হবে এই ঘটনার বিরলের মধ্য়ে বিরলতম নয়?’ তিনি সওয়াল করেছিলেন, ‘কেন এই ‘রিফর্ম’ করা সম্ভব নয়, সেটা আদালতকে বোঝাতে হবে।’ সঞ্জয়ের আইনজীবী ফাঁসি আটকাতে সেই যুক্তিই খাড়া করেছিলেন। তাতে মান্যতা দিয়েছিলেন বিচারক।