‘শরীরে কিসের রক্ত বইছে? রামের দেশে থেকে রামনাম সহ্য করতে পারছেন না’, মুখ্যমন্ত্রীকে ‘অশ্লীল ভাষায়’ বিঁধলেন দিলীপ

বললেন, "শরীরে কীসের রক্ত বইছে? রামের দেশে থেকে রাম নাম সহ্য করতে পারছেন না!" এরপরই অশ্লীল একটি শব্দ প্রয়োগ করেন তিনি।

'শরীরে কিসের রক্ত বইছে? রামের দেশে থেকে রামনাম সহ্য করতে পারছেন না', মুখ্যমন্ত্রীকে 'অশ্লীল ভাষায়' বিঁধলেন দিলীপ
ডায়মন্ডপার্কের সভামঞ্চে দিলীপ ঘোষ
Follow Us:
| Updated on: Dec 04, 2020 | 2:12 PM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ে না। যখনই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবহ গরম করতে বক্তৃতা রাখতে শুরু করেন তিনি, তৈরি হয় নতুন করে বিতর্ক, তাঁর কথার প্রতি ভাজেই থাকে ‘পাঞ্চলাইন’। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে এর আগেও অনেক কথাই বলেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধতে যে শব্দ ব্যবহার করলেন, তাতে ছাড়াল সমস্ত শালীনতার সীমা। অন্তত তেমনই অভিমত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

শুক্রবার সকালে ডায়মন্ডপার্কে সকাল সাতটায় সভায় ছিল দিলীপ ঘোষের। গাড়ি থেকে নেমে বেশ কিছুটা হেঁটেই সভায় যোগ দেন তিনি। তাঁর পিছনে থাকা কয়েকশো শ্রমিক তখন ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিচ্ছেন। শুরু থেকেই দিলীপ ঘোষের মেজাজ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছিল, যে তিনি কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালের হাওয়া গরম করতে বদ্ধপরিকর।

মঞ্চে উঠেই দিলীপ শুরু করলেন তৃণমূল কর্মী কথা, রাজ্য সরকারের সমালোচনা। কথা শুরুর দু’তিন মিনিট পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধতে শুরু করলেন স্বভঙ্গিতেই। বললেন, “শরীরে কীসের রক্ত বইছে? রামের দেশে থেকে রাম নাম সহ্য করতে পারছেন না!” এরপরই অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করেন তিনি। তারপর বলেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না।” ঘটনাচক্রে সেইসময় তাঁর হাতের মাইক্রোফোনটি বন্ধ হয়ে যায়।

দিলীপ ঘোষ বলেন, “ভয়ে মাইকটাই বন্ধ হয়ে গেল…” সভায় থাকা অনান্য নেতা কর্মীরা তখন হেসে ওঠেন। কথার রেশ টেনেই দিলীপ বলতে থাকেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না, সময় শেষ হয়ে এসেছে। যত বাড়াবাড়ি কম করবেন, মারটা তত কম খাবেন। যত বাড়াবাড়ি বেশি করবেন, তত রেট বাড়বে, ইন্টারেস্ট বাড়বে। আজ যদি আমরা মারতে শুরু করি, পুলিসও থাকবে না, পাবলিকও থাকবে না। চৌরাস্তায় দাঁড় করিয়ে মারব। ” দিলীপবাবু যখন গরম গরম ভাষণ দিচ্ছেন, তখন সভাস্থলে উঠছে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি, হাততালির বন্যা বইছে।

দিলীপের সুর তখন আরও চড়ছে। বলতে থাকেন, “দিলীপ ঘোষ বলে গেল, এখানে এসে পিটব।” স্থানীয় কাউন্সিলরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “খুব গায়ে তেল হয়েছে। জামা কাপড় খুলে মারব। বাবাও বাঁচাতে পারবে না।”

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের রেওয়াজ যে শুরু হয়েছে, সে প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “ওদের এখন সবচেয়ে বড় টেনশন মন্ত্রী পালিয়ে যাচ্ছেন। এমএলএ, এমপি পালিয়ে যাচ্ছেন। আরে অর্ধেক কাউন্সিলর তো লাইন দিয়ে রয়েছেন আমার পিছনে, খালি ঝাণ্ডাটা কবে দেব বলে!” ফের মঞ্চে তখন হাততালি। আবারও মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর খোঁচা, “দিদির বাড়িতে তো খুব গুপ্ত মিটিং চলছে, দিদিমণি সবার পিছনে পুলিস লাগিয়েছেন। কোন নেতা কোথায় যাচ্ছেন তা জানতে।”

আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আসছেন আচার্য নরেন্দ্র মোদী, থাকছে একগুচ্ছ কর্মসূচি

একুশের নির্বাচনের যত সময় এগিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে বঙ্গ রাজনীতি। বিজেপি মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছে, টিকি বাঁধা দিল্লিতেই। তবে বঙ্গ নেতৃত্বের বড় মুখ দিলীপ ঘোষ এর আগেও কথা বলতে গিয়ে শালীনতার সীমা ছাড়িয়েছেন, তাঁকে ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে দলের অন্দরেও। অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে বিজেপিকে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের এক্ষেত্রে প্রশ্ন, একজন বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতৃত্ব কীভাবে তাঁরই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের উদ্দেশে এহেন ‘শব্দ’ প্রয়োগ প্রকাশ্য সভায় করতে পারেন? এতে তাঁরই দলের নিচুস্তরে কর্মী কিংবা রাজ্যবাসীর কাছে কী বার্তা পৌঁছয়? রাজনৈতিক আক্রমণের ক্ষেত্রে কি অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয়? আদৌ কি তাতে রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ থাকে?