Lalbazar: জেলবন্দি ‘শিকারি’ অপহরণ করে বেড়াচ্ছে মুম্বইয়ে, চোখ কপালে লালবাজারের কর্তাদের
Lalbazar: জেল থেকে ফেরার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। কলকাতা থেকে পালিয়ে অপহরণে অভিযুক্ত গা ঢাকা দিল মুম্বইতে। মুম্বই পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে তাজ্জব কলকাতা পুলিশ। প্রশ্নের মুখে কারা দফতরের ভূমিকা।
কলকাতা: লালবাজারের গোয়েন্দারা জানেন অপরাধী যাবজ্জীবন সাজা খাটছে জেলবন্দি হয়ে। কিন্তু সেই অপরাধী যে ইতিমধ্যে ভিনরাজ্যে গিয়ে অপহরণ করেছে সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি লালবাজারের কর্তারা। মুম্বই পুলিশের কাছ থেকে সেই অপরাধের কথা শুনে তাজ্জব গোয়েন্দারা। প্রশ্নের মুখে কারা দফতর থেকে শুরু করে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা। গাফিলতি কার? উঠছে সেই প্রশ্নও। এদিকে একের পর এক অপরাধ করেও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে মারাত্মক সেই অপরাধী।
আসল ঘটনার সূত্রপাত?
২০১২ সালের এপ্রিল মাসে উত্তর কলকাতার দুর্গা চরণ মিত্র স্ট্রিটের একটি বাড়ির তালা বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হয় এক তরুণীর দেহ। বড়তলা থানা প্রাথমিক তদন্ত করলেও, পরবর্তীতে তদন্তভার নেয় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখা। তদন্তে জানা যায়, গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই তরুণীকে। ওই তরুণী পেশায় যৌন কর্মী। তদন্তে এক ব্যক্তির নাম উঠে আসে। জানা যায় সেই ওই তরুণীকে সোনাগাছিতে এনেছিল। ওই তরুণীর ঘরে শেষবার ওই ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল বলেও জানতে পারেন গোয়েন্দারা। কিছুদিন পরে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের জলে পাকড়াও হয় তরুণী খুনে অভিযুক্ত বিপুল শিকারি ওরফে মাস্টার।
তদন্তে উঠে আসে মাস্টারের একের পর এক কীর্তি। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অল্প বয়সী তরুণী নাবালিকাকে বিভিন্নভাবে ভুলিয়ে এনে বিক্রি করত এই মাস্টার। মমতা নামের তরুণীকে একই ভাবে যৌন পল্লীতে বিক্রি করে দিয়েছিল। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা মাস্টারের জামিনের তীব্র বিরোধিতা করে দ্রুত তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যান। ২০১৬ সালে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা হয় মাস্টারের।
এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে উপস্থিত হন মুম্বই পুলিসের আধিকারিকরা। তারা বিপুল শিকারি নামে এক অপরাধীর খোঁজ পেতে কলকাতা পুলিশের সাহায্য চান। খুনের মামলায় তদন্তকারী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেন। সেই আধিকারিক মুম্বই পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারেন, জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ মুম্বইয়ের ওয়াডালা থানা এলাকায় এক ১২ বছরের শিশুকন্যার অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে মূল অভিযুক্ত হিসেবে সেই বিপুল শিকারির নাম উঠে এসেছে যার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল কলকাতার খুনের ঘটনায়।
মুম্বই পুলিশের তথ্যেই চোখ কপালে ওঠে কলকাতা পুলিশের
তদন্তে দেখা যায় কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া বিপুলের ছবির সঙ্গে মিলে যায় মুম্বই পুলিশের দেওয়া অভিযুক্ত বিপুলের ছবি। তাহলে জেলবন্দী বিপুল মুম্বাই পৌঁছল কী করে? কারা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাজ্জব হয়ে যায় কলকাতা পুলিশ। করোনার সময় বিভিন্ন সংশোধনাগার থেকে সাজা প্রাপ্ত আসামিদের প্যারোলে ছাড়া হয়েছিল কিছুদিনের জন্য। সেই সময় বিপুল ছিল বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি। প্যারোলে ছাড়া পেয়েই ফের ফেরার হয়ে যায় বিপুল।
নির্দিষ্ট সময়ে আসামি নিয়মমাফিক আত্মসমর্পণ করে জেলে ফিরে না আসায়, কল্যাণীতে বিপুলের বাড়িতে খোঁজ নিতে যায় কারা দফতরের কর্মীরা। তখনই জানা যায় বিপুল গা ঢাকা দিয়েছে। কল্যাণী থানায় একটা অভিযোগ দায়ের করে করা দফতর। সূত্রের খবর, অভিযোগ করে দায় সারলেও কলকাতা পুলিশকে তারা জানায়নি যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি পালিয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে কল্যাণী থানার পক্ষ থেকেও কোনও বার্তা আসেনি কলকাতা পুলিশের কাছে।
আক্ষেপ কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার
সূত্রের খবর, মুম্বই পুলিশ কল্যাণীতে বিপুলের বাড়িতে যায়। সেখানে বিপুলের মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে ওই অপহরণের ঘটনার পর সে মাকে ফোন করেছিল জম্মু থেকে। সেখানেও ফাঁদ পাতে মুম্বই পুলিশ। কিন্তু বিপুল ওরফে মাস্টার ধরা পড়েনি। পুলিশের সন্দেহ, ছাড়া পাওয়ার পর আরও অপরাধ করেছে এই কুখ্যাত অপরাধী। মুম্বইয়ের ঘটনাতেও ওই শিশুকন্যাকে হয় কোনও যৌনপল্লীতে বেচে দিয়েছে নয়তো খুন করে ফেলেছে বলে অনুমান পুলিশের। সেখান থেকেই কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার আক্ষেপ, কারা দফতর থেকে শুরু করে রাজ্য পুলিসের এই গাফিলতি না থাকলে, সময় মতো তাঁরা কলকাতা পুলিশকে জানালে এরকম ঠান্ডা মাথার খুনি জেলের বাইরে ঘুরে বেড়াতে পারত না।