KMC tab controversy: ট্যাব কেনা হচ্ছে, অথচ ১০ হাজার টাকা সাম্মানিক জুটছে না কাউন্সিলরদের, বিতর্ক চরমে

KMC tab controversy: সম্প্রতি মেয়র পারিষদদের ট্যাব দেওয়ার জন্য টাকা বরাদ্দ করেছে পুরনিগম। আর পুরনিগমের আর্থিক পরিস্থিতি সামনে রেখেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

KMC tab controversy: ট্যাব কেনা হচ্ছে, অথচ ১০ হাজার টাকা সাম্মানিক জুটছে না কাউন্সিলরদের, বিতর্ক চরমে
ট্যাব কেনা হচ্ছে মেয়র পারিষদদের জন্য
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 02, 2022 | 4:31 PM

কলকাতা : অর্থনৈতিক দৈন্যদশা চলছে কলকাতা পুরনিগমে। পুর কোষাগার অনেক দিন ধরেই অর্থ সঙ্কটে ভুগছে। পরিস্থিতি ক্রমশ গুরুতর হচ্ছে বলেই লালবাড়ি অন্দরের খবর। এই অবস্থায় কলকাতা পুরনিগমের সব মেয়র পারিষদকে ট্যাব কিনে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়েই মাথাচাড়া দিয়েছে নতুন বিতর্ক। সূত্রের খবর, কলকাতা পুরনিগমের কাউন্সিলরদের যে মাসিক সাম্মানিক পাওয়ার কথা, তা গত তিন মাসের মধ্যে মাত্র এক মাস তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর কাউন্সিলররা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেন। এরপর থেকে গত তিন মাসের মধ্যে মাত্র একবারই সাম্মানিক পেয়েছেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে অর্থ সঙ্কট কলকাতা পুরনিগমকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে, সেখানে কেন এই ট্যাব কেনার সিদ্ধান্ত? সরাসরি মুখ না খুললেও বিরোধীদের পাশাপাশি, শাসক দলের কাউন্সিলররাও এই সিদ্ধান্তে যথেষ্ট অখুশি।

আটকে বেতন, জুটছে না সাম্মানিক

কলকাতা পুরসভার ১০০ দিনের কর্মী থেকে চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মী বা জঞ্জাল সাফাই কর্মী, অনেকেরই বেতন আটকে রয়েছে। সেখানে কেন এমন একটি দামি জিনিস কেনার প্রয়োজন পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কলকাতা পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, কাউন্সিলররা সাম্মানিক পান ১০ হাজার টাকা। মেয়র, ডেপুটি মেয়র এবং মেয়র পরিষদ সদস্যরা সাম্মানিক পান ১০ হাজার ৭০০ টাকা। এ ছাড়াও কাউন্সিলররা গাড়ি এবং টেলিফোনের বিল পেয়ে থাকেন। শোনা যাচ্ছে, অর্থসঙ্কটের জেরে সেই টাকাও বন্ধ হতে বসেছে।

তবে, অনেক কাউন্সিলর সেই সাম্মানিক নিতে চান না। কিন্তু যে যে কাউন্সিলরের কাছে এই সামান্য সাম্মানিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে, তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা না আসায় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ তাঁরা। পুরসভার কর্তারা অবশ্য যুক্তি দিচ্ছে, কাউন্সিলররা ঠিক মতো কাগজপত্র জমা না করায় তাঁদের সাম্মানিকের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করা যাচ্ছে না। যদিও এই যুক্তি মানতে চাননি বিরোধীদলের কাউন্সিলাররা। তাঁদের কথায়, টাকা চেয়ে বারবার তাগাদা দিলেও কোনও টাকা অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে না। এ ছাড়া ১০০ দিনের কর্মী, চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা টাকা না পাওয়ায় পরিষেবার ওপরও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

কোন খাতে কত খরচ?

পুরনিগমের তথ্য বলছে, বর্তমানে কলকাতা পুরনিগমে স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মীদের বেতন এবং পেনশন দিতে প্রয়োজন হয় মাসিক ১৩৩ কোটি টাকা। ১৮ হাজার স্থায়ী কর্মীর জন্য ৭৮ কোটি টাকা, ২৬ হাজার অস্থায়ী কর্মীর জন্য ১৫ কোটি টাকা এবং ৩৫ হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য ৪০ কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। স্থায়ী কর্মীদের বেতনের ১৫ শতাংশ কলকাতা পুরনিগম এবং ৮৫ শতাংশ রাজ্য সরকারকে বহন করতে হয়। অস্থায়ী কর্মীদের বেতনের পুরো টাকাই কলকাতা পুরনিগমকে বহন করতে হয়। অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের ৬০ শতাংশ কলকাতা পুরনিগম বহন করে।

গাড়ি, হলিডে অ্যালাউন্সে মাসে বিপুল ব্যয়

পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে কলকাতা পুরনিগমের অধীনে নিজস্ব এবং ঠিকাদারদের থেকে নেওয়া মিলিয়ে যে সব গাড়ি চলে, সেগুলিতে তেলবাবদ ব্যয়, চালকের বেতন সহ সংশ্লিষ্ট খাতে মাসিক সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এই ব্যয় গত তিন চার বছরে অত্যাধিক বেড়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। অতীতে সার্কুলার জারি করে, এই গাড়ি ব্যবহারে কড়াকড়ি করেছিল পুরসভা। সেই অনুযায়ী, পুর আধিকারিকরা গাড়ি চাপার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সতর্ক হয়েছিলেন। কিন্তু তারপর অবস্থা আবার তথৈবচ হয়ে যায়।

এ দিকে, আভ্যন্তরীন উৎসগুলি থেকে রাজস্ব আদায় যেমন কমেছে, তেমনই বেড়েছে অপ্রয়োজনীয় খরচ। পুর রাজস্ব সবথেকে বেশি অপব্যয় হচ্ছে ওভারটাইম এবং গাড়ি ব্যবহারে রাশ না টানার জন্য। গত কয়েক বছরে হলিডে অ্যালাউন্স বা ওভারটাইম, টিফিনভাতাসহ একাধিক ভাতা অত্যাধিক হারে বেড়ে গিয়েছে। বর্তমানে ওভারটাইম বাবদ মাসে দেড় থেকে দুই কোটি অর্থাৎ বার্ষিক ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়।

কী বলছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম?

ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, পুরনিগমের বেতন সময় মতো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কেউ বলতে পারবে না যে আমরা বেতন দিচ্ছি না। আধিকারিকদের কাছে টেবিল টপ কম্পিউটার আছে। ট্যাবলেট লাগছে না কারও। মেয়র পরিষদরা রাস্তায় যেতে যেতে অনেক কাজ করেন, তাই তাঁদের একটা ট্যাব লাগছে।’ সাম্মানিক নিয়ে অসন্তোষের কথা শুনে ফিরহাদ বলেন, ‘এরকম কোনও খবর আমার কাছে নেই। প্রতি মাসে যেমন এক তারিখে বেতন দেওয়া হয়, তেমনই হচ্ছে।’

আরও পড়ুন : Mithun Chakraborty : ‘জাত গোখরো নন, আপনি জলঢোঁড়া সাপ’, মিঠুনকে কেন এমন বললেন কুণাল?