Kolkata Water Problem: ভূগর্ভস্থ জলকে অতলে পাঠিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে বহুতল, দক্ষিণ কলকাতার আকাশে সিঁদুরে মেঘ

Kolkata Water Problem: গত দেড় থেকে দু'বছরের মধ্যে দক্ষিণ শহরতলির বেশ কয়েকটি এলাকায় বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেগুলি দিয়ে বর্তমানে যেখানে পাইপলাইন রয়েছে, সেখানকার জল সরবরাহ বাড়িয়েছে। চাপও বেড়েছে কিছুটা।

Kolkata Water Problem: ভূগর্ভস্থ জলকে অতলে পাঠিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে বহুতল, দক্ষিণ কলকাতার আকাশে সিঁদুরে মেঘ
দক্ষিণ কলকাতা প্রবল জলকষ্ট
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 07, 2023 | 4:48 PM

কলকাতা: বাকি এখনও ৫০ শতাংশ কাজ। এবার গরমেও দক্ষিণ শহরতলির বহু এলাকার বাসিন্দা পুরনিগমের জল থেকে বঞ্চিত। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে অপসারিত করে ফিরহাদ হাকিমকে যখন প্রথমবারের জন্য মেয়রের পদে বসালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন তিনি বলেছিলেন, “বেহালা, টালিগঞ্জ এবং যাদবপুর এলাকায় জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি করতে পারেননি শোভন। ফিরহাদ যেন এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিটি এলাকার কোণে কোণে জল পৌঁছে দেয়।” তারপর বেশ কয়েক বছর কেটে গিয়েছে। কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, জল সরবরাহের নেটওয়ার্কহীন এলাকাগুলোর জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল পুরনিগমের জল সরবরাহ বিভাগের তরফে, দেখা গেল তার মাত্র ৫০ শতাংশ এলাকাতে পাইপ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ এলাকায় এখনও কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করার সময় যে রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল জল সরবরাহ বিভাগের তরফে, তাতেই মূলত এই বিষয়টি উল্লেখ রাখা হয়েছিল। খোদ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজেও স্বীকার করেছেন, জল সরবরাহের জন্য ৫০ শতাংশ এলাকায় এখনও পাইপলাইন বসানো বাকি রয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ চলতি অর্থবর্ষেও দক্ষিণ শহরতলির বেশ কিছু এলাকা জল সরবরাহহীন অবস্থাতেই রয়ে যাচ্ছে।

গত দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে দক্ষিণ শহরতলির বেশ কয়েকটি এলাকায় বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেগুলি দিয়ে বর্তমানে যেখানে পাইপলাইন রয়েছে, সেখানকার জল সরবরাহ বাড়িয়েছে। চাপও বেড়েছে কিছুটা। কিন্তু নেটওয়ার্ক এখনও বেশ কিছু এলাকায় তৈরি করে উঠতে পারেনি কলকাতা পুরনিগমের জল সরবরাহ বিভাগ। কলকাতা পুরনিগমের জল সরবরাহ বিভাগের তরফে যে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে, তাতে চাপ বেড়েছে জলের স্তর নিয়ে। কারণ দক্ষিণ শহরতলির ‘ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস’ থেকে যাদবপুর বা পাটুলির একাধিক অংশ, মুকুন্দপুর, নিউ গড়িয়া থেকে পঞ্চসায়র, টালিগঞ্জ থেকে হরিদেবপুর, বেহালা থেকে জোকা, একের পর এক এলাকায় আবাসন তৈরি হয়েই চলেছে।

কলকাতা পুরসভার তরফে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, যেইসব এলাকায় জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি, সেখানকার ভূগর্ভস্থ জলের অবস্থা দেখেই আবাসন তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে ভিন্ন রূপ। বেআইনি বাড়ি তো অবশ্যই, যেগুলি আইন মোতাবেক নকশা অনুযায়ী আবাসন তৈরি হচ্ছে, সেখানকার জল সরবরাহের ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক উন্নতি না থাকায় গভীর নলকূপ ব্যবহার করে সেখানে জলের সংস্থান করা হচ্ছে। আর তাতেই বাড়ছে বিপদ।

জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকরা এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাইছেন না। আবাসনগুলিতে বাসিন্দাদের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যে কারণে জল অপচয় এবং ব্যবহারের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, আবাসনগুলিতে জলের ‘ফোর্স’ অনেকটাই কম। দুর্ভোগে সেই আবাসনগুলির বাসিন্দারাই।

মাসখানেক আগে একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে কলকাতা পুরনিগমের অধীনস্থ এলাকায় জলের স্তর প্রতিবছর এক ফুট নীচে নেমে আসছে। ১৯৮৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের তথ্যের উপর ভিত্তি করে হুগলি নদীর পূর্ব এবং পশ্চিম তীরে অবস্থিত শহরগুলিকে ঘিরেই সমীক্ষা থেকে উঠে আসে রিপোর্ট। স্প্রিংগার নেচারর্স জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল আর্থ সায়েন্স -এ প্রকাশিত এই সমীক্ষা প্রকাশ করেছে যে, কলকাতায় ভূগর্ভস্থ জলের স্তর অনেকটাই নেমেছে। যার তিন-চতুর্থাংশই নোনা জলে পরিণত হয়েছে।

সমীক্ষা অনুসারে আরও জানা গিয়েছে যে, দক্ষিণ কলকাতার পার্কস্ট্রিট অঞ্চলে প্রতি বছর জলস্তর কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে ০.৩৩ মিটার অর্থাৎ প্রায় ১ ফুট। এটা যদি কলকাতার মূল এলাকা হয়, তাহলে দক্ষিণ শহরতলির আবাসন সমৃদ্ধ অথচ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক নেই, এই এলাকার জলস্তর নেমে যাওয়ার প্রবণতা রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ২.৫০ মিটার। যা নিয়েই রীতিমতো আশঙ্কা জল সংক্রান্ত বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।

রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, গত আড়াই দশকে ভূগর্ভস্থ জলের অতিরিক্ত অপচয়ের ফলে কলকাতায় জলের খাদ ২৬৬ বর্গ কিমি অবধি প্রকট হয়েছে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির আনন্দ-হতাশার মধ্যেই রয়ে গিয়েছে গোটা দক্ষিণ শহরতলির পরিস্থিতি। গত পাঁচ বছরে বেহালা, টালিগঞ্জ, যাদবপুর, বাঁশদ্রোণী, গড়িয়ার মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতে জলের সংযোগ পৌঁছেছে। কিন্তু ব্রাত্য রয়ে গিয়েছে আরও বেশ কিছু এলাকা। আবার কিছু কিছু এলাকায় পাইপলাইন বসলেও জলের চাপ রয়েছে বেশ কম। কলকাতার ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতীয় পরিবেশ আদালত সম্প্রতি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছিল।

১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগর পার্ক, দীনেশ নগর, শীতলাপার্ক এলাকার বেশ কিছু অংশে জলের পাইপলাইন পৌঁছনো রীতিমতো দিনের স্বপ্নের মতো। ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রহ্মপুর মোড়, রামকৃষ্ণপল্লির সিংহভাগ এলাকা এবং রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় প্রায় সিংহভাগই টিউবওয়েলের ভরসায় চলে। আবার ১২৩, ১২৪, ৯৮, ৯৯ ৯৬, ১২৭, ১২৮, ১২৯ এর মত দক্ষিণ শহরতলির বেহালা, যাদবপুর, টালিগঞ্জ এলাকায় কলকাতা পুরনিগমের জল প্রকল্পের জল ঠিকমতো না পৌঁছানোয় সেখানকার বাসিন্দাদের নির্ভর করতে হয় ভূগর্ভস্থ নলকূপের উপরে।

মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “শুধু রিজার্ভার করলে হবে না। গড়িয়াতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি হবে। খিদিরপুর থেকে জলের লাইন যাবে। সোনারপুর এবং ওই এলাকায় ওই প্ল্যান্ট থেকে জল যাবে। গার্ডেনরিচ থেকে কিছু মিষ্টি পানীয় জল এবং বাকিটা আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে জল তোলা হচ্ছে। পুরোটাই আগে টিউবয়েলের জল ব্যবহার করতেন বাসিন্দারা, এখন ঘরে ঘরে জলের ট্যাপ বসেছে। আগামী দিনে মিষ্টি জল পৌঁছে যাবে।”