পুলিশের বিরুদ্ধে এবার আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন এসএসকে শিক্ষক নেতা মইদুল ইসলাম
SSK Teacher Moidul Islam: মইদুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, "আপনি পুলিশ আমি মাস্টারমশাই। কেন মাঝ রাতে আমাকে নিয়ে যাবেন?"
কলকাতা: পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলে এবার হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হচ্ছেন শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলাম (Moidul Islam)। কোনওরকম ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাঁকে কেন মধ্যরাতে গ্রেফতার করতে এসেছিল পুলিশ, সে প্রশ্নও তোলা হয়েছে।
এদিকে, মইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এটেম টু মার্ডারের কেস দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ৩০৬,৩০৭ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। শিক্ষক আন্দলনের নেতা মহিদুল ইসলামকে গ্রেফতারি নিয়ে চরম নাটকীয়তা হয় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। ঘণ্টা ২ ধরে চলে টানাপোড়েন। বৃহস্পতিবার রাত ১১ টা নাগাদ নিউটাউন নর্থ থানা ও বেলেঘাটা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করতে যায়। সেসময় বেলেঘাটা ৫১/বি/ এইচ চাউল পট্টি এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে ছিলেন মইদুল। ওটি মইদুল ইসলামের শ্বশুড়বাড়ি ।
মহিদুলকে রাতে ঘরে থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে একাধিকবার অনুরোধ করেন পুলিশ আধিকারিকেরা । সেই সময় মহিদুল জানান, তিনি কোনওভাবেই রাতে থানায় যাবেন না। সকালে তিনি পুলিশের সাথে যেতে রাজি। এই নিয়ে চলে কথা কাটাকাটি।
মইদুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, “আপনি পুলিশ আমি মাস্টারমশাই। কেন মাঝ রাতে আমাকে নিয়ে যাবেন?” তখন কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে বিশেষ কিছু অভিযোগ রয়েছে। তাই আপনাকে থানায় যেতে হবে। আপনি প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করছেন।” প্রায় দু ঘণ্টা ধরে চলে কথা কাটাকাটি।
প্রায় রাত ১ টা পর্যন্ত চলে এই টানা পড়েন। এর পর পুলিশ আধিকারিকরা চলে যান। এই বিষয় মহিদুল ইসলাম জানান, পুলিশ তাঁকে কোনওরকম আইনি নোটিশ দেখাতে পারেনি। তাই তিনি এখন যাবেন না । পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, তাও নিশ্চিত করে তাঁকে জানানো হচ্ছে না । পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন মহিদুল ইসলাম ।
তিনি অভিযোগ করেন, শিক্ষক আন্দলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাঁর বাড়িতে পুলিশের এই অভিযান। পুলিশ সূত্রে খবর, বিকাশ ভবনের সামনে শিক্ষক আন্দলনের ঘটনায় শিক্ষিকাদের বিষ খাওয়ার ঘটনায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। রাত ভোর পুলিশি পাহারা চলে মইদুল এর শ্বশুরবাড়ির সামনে ।
ঘটনার প্রতিবাদে মইদুল সামাজিক মাধ্যমে বলেন, “চোয়াল শক্ত করে লড়ে যাচ্ছি৷ আমরা শিক্ষক কোনো অন্যায় করিনি৷ রাত ১১ টা থেকে ২০০ র বেশি পুলিশ আমার বেলেঘাটার শ্বশুরবাড়ি ঘিরে রেখেছে৷ ২ ঘন্টা ধরে পুলিশ আর আপনাদের ভাই র লড়াই চলছে৷ প্রশাসন শিক্ষক আন্দোলনকে ভয় পাচ্ছে৷ বদলী করে ও প্রশাসন ভয় পাচ্ছে ৷ দাবি আদায়ের কাছাকাছি আমরা৷ আপনারা নিজের মতো করে সোস্যাল মিডিয়াতে প্রতিবাদ করবেন৷আমাকে গ্রেপ্তার করলে যতটা সম্ভব কোর্টের সামনে জমায়েত করবেন৷ সেদিন তীব্র আন্দোলন যেন সবর্ত্র হয়৷ এ লড়াই আমরা জিতব৷ ”
অন্যায়ভাবে বদলির প্রতিবাদে বিকাশ ভবনের সামনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এসএসকে এবং এমএসকে শিক্ষিকারা। বদলির অস্বচ্ছতার দাবি তুলে রাস্তায় নামে শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ। বিকাশ ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তারা। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চায় বলে অভিযোগ। তবে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বাধা দিতেই শুরু হয় ঝামেলা। এরই মধ্যে পাঁচজন একটি শিশি বের করে মুখে কিছু একটা ঢেলে দেন। এরপরই তাঁদের মুখ থেকে গ্যাঁজলা বের হতে দেখা যায়। দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। উল্টোদিকে, এই ঘটনায় শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় জোড়া মামলা রুজু করল উত্তর বিধান থানার পুলিশ। বুধবারই আরজিকর হাসপাতালে অসুস্থ শিক্ষিকাদের সঙ্গে দেখা করতে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এসএসকে শিক্ষিকাদের এই আন্দোলনের রেশ পৌঁছেছে জাতীয় স্তরে।
সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করা, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ,আত্মহত্যার চেষ্টা ,সরকারি কর্মচারীকে আঘাত করা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে উত্তর বিধান নগর থানায়। শিক্ষিকাদের আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগেই তাঁকে গ্রেফতার করতে এসেছিল বলে সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: কীভাবে কুকুরের বেল্ট দিয়ে স্ত্রীকে খুন করেন বিপ্লব? ঘটনার পুনর্নিমাণে ধৃতের ফ্ল্যাটেই গোয়েন্দারা
আরও পড়ুন: তৃণমূলের সালিশি সভায় বিজেপি কর্মীকে জমি লিখে দেওয়ার নিদান, না মানায় ভয়ঙ্কর ‘খেসারত’!