বিস্ফোরক সেই ফুটেজ প্রকাশ হওয়া থেকে সোমবার সকালের নাটকীয় গ্রেফতারি, একনজরে নারদ মামলার ইতিবৃত্ত

নারদ মামলায় নতুন করে তৎপর হয়েছে সিবিআই। ২০১৬-র সেই মামলা পাঁচ বছর পেরিয়ে কোথায় অবস্থান করছে?

বিস্ফোরক সেই ফুটেজ প্রকাশ হওয়া থেকে সোমবার সকালের নাটকীয় গ্রেফতারি, একনজরে নারদ মামলার ইতিবৃত্ত
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: May 17, 2021 | 4:29 PM

গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রকশ্যে এসেছিল নারদের স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো। রাজ্যের একগুচ্ছ প্রভাবশালী নেতা-নেত্রীদের টাকা নিতে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক মহল।  যদিও ভোটে তার তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। ১৬-তেও মসনদে আসে তৃণমূল। গত পাঁচ বছরে রাজনীতির জল গড়িয়েছে অনেক দূর। দল বদল করেছেন সেই ফুটেজে থাকা দুই নেতা। বিরোধীরা সরাসরি তোপ দেগেছেন খোদ মমতার বিরুদ্ধেও। অভিযুক্তদের বারবার তলব করা হলেও একের বেশি গ্রেফতারি হয়নি এই মামলায়। আর সোমবার সকালে সেই মামলাতেই পরপর চারজনকে নাটকীয়ভাবে গ্রেফতার করা হল।

কোথায় শুরু নারদ কাণ্ডের? কী কী হল এই পাঁচ বছরে?

২০১৪

এক বন্ধুকে নিয়ে স্টিং অপারেশন চালান ম্যাথু স্যামুয়েল। ভুয়ো নামে আধার কার্ড তৈরি করে কলকাতায় এসে সেই অপারেশন চালান। তাঁর মূল টার্গেট ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হেভিওয়েটরা।

২০১৬

বছর দুয়েক বাদে ১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে সেই ফুটেজ প্রকাশ্যে আনেন ম্যাথু। ৫২ মিনিটের ভিডিয়োতে দেখা যায়, প্রথম সারির নেতা-মন্ত্রীরা নির্দ্বিধায় নিচ্ছেন ঘুষের টাকা। ভিডিয়োর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তৃণমূল।

কাদের দেখা গিয়েছিল?

মুকুল রায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুলতান আহমেদ, সৌগত রায়, শুভেন্দু অধিকারী, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, ইকবাল আহমেদ, ফিরহাদ হাকিম, পুলিশ আধিকারিক এমএইচ আহমেদ মির্জা, অপরূপা পোদ্দার।

মার্চ, ২০১৬: নারদ-কাণ্ডে একযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা দাবি করেন রাজ্যের বিরোধী দলগুলি। নারদ-কাণ্ডে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। লোকসভায় বিরোধীদের প্রবল চাপে নারদ ইস্যু এথিক্স কমিটির কাছে পাঠান স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।

এপ্রিল, ২০১৬: চাপের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হয় তৃণমূল, নারদ কাণ্ডে দলীয় তদন্ত ঘোষণা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নেতাদের ক্লিনচিটও দিয়ে দেন মমতা।

নারদ কাণ্ডে তৃণমূলের পাঁচ সাংসদকে নোটিস ধরায় লোকসভার এথিক্স কমিটি। স্টিং অপারেশনে তাঁদের টাকা নেওয়ার ভিডিয়ো সম্পর্কে সাংসদদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। ফুটেজ নিজেদের হেফাজতে নিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।

জুলাই, ২০১৬: ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরু করে পুলিশ। লালবাজারে আইপিএস অফিসার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জাকে দফায় দফায় তলব করে কথা বলেন কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী দল।

২০১৭:

মার্চ,২০১৭: নারদ স্টিং অপারেশন মামলায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে প্রাথমিক তদন্তের ভার দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । মামলায় যাঁরা জড়িত রয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিআইকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশও দেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের আর্জি খারিজ হয়ে যায়। সিবিআই তদন্তের নির্দেশই বহাল থাকে। অন্য দিকে প্রাণের ভয় রয়েছে বলে সিবিআইকে চিঠি দেন ম্যাথু।

এপ্রিল, ২০১৭: নারদ কাণ্ডে ১৩ জন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে কলকাতার নিজাম প্যালেসে তাদের দুর্নীতি দমন শাখায় এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করা হয়।

জুন-জুলাই, ২০১৭: সিবিআই ও ইডি দফতরে একে একে ডেকে পাঠানো হয় ইকবাল আহমেদ, এসএমএইচ মির্জা, সৌগত রায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, টাইগার মির্জাদের তলব করে সিবিআই। শোভন চট্টোপাধ্যায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জেরা করা হয়।

২০১৮:

নারদ কাণ্ডের তদন্তে ক্যালিফোর্নিয়া দেয় সিবিআই গোয়েন্দাদের একটি দল। তিনটি আইফোনের সাহায্যে। সে কথা জেরায় জানায় সিবিআই। ‘ভিডিও ডিকোডিং প্রসেসর’ নামক চিপ পেত সংস্থার দ্বারস্থ হয় সিবিআই।

২০১৯

ফের মুকুল রায়কে জেরা করে সিবিআই। ফের ডাক পড়ে শোভন, অপরূপা, এসএমএইচ মির্জার। সেপ্টেম্বরে নারদ-কাণ্ডে প্রথম গ্রেফতার করা হয় আইপিএস এসএমএইচ মির্জাকে।

২০২১:

জানুয়ারিতে একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে চেয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে চিঠি দেয় সিবিআই৷

৯ মে: চার হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার অনুমোদন দেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

১৭ মে: রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে যান সিবিআই আধিকারিকরা৷ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। খবর পেয়েই নিজাম প্যালেসে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।