Sadhan Pandey: মার্জিনে স্ত্রীর কাছে হারলেও মানিকতলা আজও সাধনের, ফিরে দেখা প্রয়াত নেতার পথ-চলা
Sadhan Pandey: ২০১১ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে অবলুপ্তি হয় বড়তলা কেন্দ্রের। আর এই বড়তলা আসন অবলুপ্তির জেরেই মানিকতলায় সাধনের রাজনৈতিক পথ চলা শুরু। যা অটুট ছিল তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত। ২০১১ সালের পর ২০১৬ এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও মানিকতলায় জয়ী হন তিনি।
কলকাতা: ২০১১ সাল। রাজ্যে পালাবদলের হাওয়া বইছে। কিন্তু, তিনি প্রার্থী হবেন কোথায়? ১৯৮৭ সাল থেকে যে আসনের বিধায়ক তিনি, সেই আসনের অবলুপ্তি ঘটেছে। তাহলে কোথায় দাঁড় করানো যায় তাঁকে? তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে পাঠালেন মানিকতলায়। যে আসন তখন সিপিএমের দখলে। তার আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রে বিধায়ক ছিলেন পরেশ পাল। ২০১১ সালে তাঁকে বেলেঘাটায় দাঁড় করালেন মমতা। আর মমতার বিশ্বাসের পাত্র সাধন পাণ্ডে ২০১১ সালে প্রথমবার মানিকতলায় দাঁড়িয়েই ফোটালেন ঘাসফুল। সেই শুরু। তারপর সময়ের সঙ্গে মানিকতলার সঙ্গে সমার্থক হয়ে উঠল তাঁর নাম। সাধনের ছেড়ে যাওয়া আসনে আজ জয়ী হয়েছেন তাঁর স্ত্রী সুপ্তি পাণ্ডে। জয়ের এই দিনে সাধনের কথাই উঠে আসছে তৃণমূল নেতাদের কথায়। ফিরে দেখা যাক সাধনের রাজনৈতিক জীবনের পথ চলা।
সাধন পাণ্ডের জন্ম ১৯৫০ সালের ১৩ নভেম্বর। কলকাতার ছেলে সাধন প্রথমে কংগ্রেস করতেন। কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের বিধায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালের প্রথমবার কলকাতার বড়তলা আসন থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালেও কংগ্রেসের টিকিটে বড়তলা আসনে জেতেন।
কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে সাধন তৃণমূলে আসেননি। ১৯৯৮ সালে লোকসভা নির্বাচনে কলকাতা উত্তর-পূর্ব আসনে কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হন। কিন্তু, জিততে পারেননি। তারপরই কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। ১৯৯৯ সালে তৃণমূলে যোগ দেন সাধন। ২০০১ এবং ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে বড়তলা থেকে প্রার্থী হন। দু’বারই জয়ী হন তিনি।
কিন্তু, ২০১১ সালেই দেখা দেয় বিপত্তি। আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে অবলুপ্তি হয় বড়তলা কেন্দ্রের। আর এই বড়তলা অবলুপ্তির জেরেই মানিকতলায় সাধনের রাজনৈতিক পথ চলা শুরু। যা অটুট ছিল তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত। ২০১১ সালের পর ২০১৬ এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও মানিকতলায় জয়ী হন তিনি।
২০১১ সাল থেকে দশ বছর রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের দায়িত্ব সামলেছেন সাধন পাণ্ডে। অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের সময়ও একবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। ২০২১ সালের জুলাইয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ফুসফুসে সংক্রমণের জেরে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এরপর চিকিৎসার জন্য তাঁকে মুম্বইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলে তাঁর। সেখানেই ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন সাধন পাণ্ডে। বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের পাশাপাশি রাজ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী ছিলেন সাধন। ২০২১ সালের অগস্টে তাঁর দফতরের দায়িত্ব অন্যের হাতে তুলে দেন মমতা। তবে সাধনকে তিনি দফতরহীন মন্ত্রী রেখে দিয়েছিলেন।
সাধনের মৃত্যুর প্রায় ২ বছরের বেশি সময় পর উপনির্বাচন হল মানিকতলায়। একুশের নির্বাচনে মানিকতলায় বিজেপির প্রার্থী কল্যাণ চৌবের ভোট গণনা নিয়ে হাইকোর্টে মামলার জেরে আটকে ছিল উপনির্বাচন। কল্যাণ ইলেকশন পিটিশন প্রত্যাহার করার পর উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়। আর উপনির্বাচনে জিতলেন সাধনের স্ত্রী সুপ্তি পাণ্ডে।
ফল ঘোষণার পর রাজনৈতিক মহলে আরও একটি চর্চা শুরু হয়েছে। সাধনের চেয়ে তাঁর স্ত্রীর বেশি ব্যবধানে জয় নিয়ে। মানিকতলা বিধানসভায় উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সুপ্তি পাণ্ডে EVM-এ পেয়েছেন ৮২ হাজার ৮৬১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির কল্যাণ চৌবে EVM-এ পেয়েছেন ২০ হাজার ৭৪৫ ভোট। এর পাশাপাশি ব্যালট বাক্সের ভোট যোগ করে ৬২ হাজার ৩১২ ভোটে জিতেছেন সুপ্তি পাণ্ডে। সেখানে একুশের নির্বাচনে সাধন পেয়েছিলেন ৬৭ হাজার ৫৭৭ ভোট। কল্যাণ পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ৩৩৯ ভোট। ২০ হাজার ২৩৮ ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূলের সাধন।
স্বামীর থেকেও বেশি ব্যবধানে জিতলেন সুপ্তি। খালি চোখে এটাই ভোটের ছবি। কিন্তু, রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, মানিকতলা যেন আজও সাধনের। স্ত্রীর কাছে ‘পরাজিত’ হয়েও তাই তিনিই জিতলেন।