ভর্তি অনিশ্চিত, উচ্চশিক্ষাও! মাধ্যমিকের ফলেই ‘কাঁটা’ বলছে শিক্ষকমহল

Madhyamik 2021: মঙ্গলবার সকাল ৯টায় মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা হয়। এ বছর মাধ্যমিকে পাশের হার ১০০ শতাংশ। আর এতেই রীতিমতো চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবক-পড়ুয়ারা থেকে শিক্ষকরা।

ভর্তি অনিশ্চিত, উচ্চশিক্ষাও! মাধ্যমিকের ফলেই 'কাঁটা' বলছে শিক্ষকমহল
প্রতীকী চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 20, 2021 | 9:24 PM

কলকাতা: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাতিল হয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় মাধ্যমিকের (Madhyamik) ফল ঘোষণা হয়। সকাল ১০ টা থেকেই  মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ওয়েবসাইটে নিজেদের ফলাফল জানতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানিয়েছিলেন পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়।

করোনার জন্য পরীক্ষা হয়নি। বদল হয়েছিল মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও। এ বছর মাধ্যমিকে পাশের হার ১০০ শতাংশ। আর এতেই রীতিমতো চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবক-পড়ুয়ারা থেকে শিক্ষকরা। কারণ, মাধ্যমিক পরীক্ষায় (Madhyamik) সকলে পাশ করায়  একদিকে যেমন উচ্চশিক্ষার পথে একটি বড় বিপর্যয় আসতে পারে তেমনিই এত ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত্‍ অনির্দিষ্ট। ভাল ফল সকলেই করেছে। আপাতদৃষ্টিতে, সুসংবাদ বলে মনে হলেও তা আদৌ কি সুসংবাদ? প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট মহল।

করোনাকালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবে কি না তা নিয়ে গভীর সংশয়ে ছিল রাজ্য সরকার। গত ৭জুন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত পঁয়ত্রিশ হাজার মেইলের (Email) উপর নির্ভর করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন। পরীক্ষা না হওয়ায়, নবম শ্রেণির পরীক্ষার গড় ও দশম শ্রেণিতে স্কুলের ইন্টারনাল ফর্মেটিভ ইভ্যালুয়েশনের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই মাধ্য়মিকের মার্কশিট তৈরি হয়েছে। তাই মেধাতালিকাও নেই। সব মিলিয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্য়া সাড়ে ১২ লক্ষ। তার মধ্যে ৯ লক্ষ ৯৬ হাজার নিয়মিত পরীক্ষার্থী। বিপুল সংখ্যক এই ছাত্রছাত্রীরা যে উত্তীর্ণ হবেন তা তো স্পষ্টই। কিন্তু এর পর?

পরিসংখ্য়ান বলছে, রাজ্যে মাধ্য়মিক স্কুলের সংখ্য়া সাড়ে ১০ হাজার। মাদ্রাসা মিলিয়ে সেই সংখ্যাটা প্রায় ১২ হাজার। উচ্চ মাধ্য়মিক স্কুলের সংখ্যা সেখানে ৭ হাজার। এরমধ্যে প্রত্য়েক স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে খাতায় কলমে অন্তত ভর্তি হতে ২৭৫ টি আসন রয়েছে। অর্থাত্‍, হিসেব করলে প্রায় সাড়ে ৩লক্ষ পড়ুয়া বাদ থাকবেন ভর্তি তালিকা থেকে। কারণ, স্থান সঙ্কুলান! দ্বিতীয়ত, সব স্কুলেই কি ভর্তির পরিকাঠামো এত গঠনশীল যে চাইলেই পড়ুয়ারা নিজেদের পছন্দমতো বিষয় নিয়ে একাদশে  ভর্তি হতে পারবেন ? সেক্ষেত্রে পড়াশোনার মান কী হবে?

শিক্ষকমহলের একাংশের প্রশ্ন এত সংখ্যক ছেলেমেয়েকে ভর্তি করানো হবে কোন উপায়ে? যাঁরা বাদ যাবেন তাঁরা কারা? সমাজে তথাকথিত পিছিয়ে পড়া বা লড়াই করে উঠে আসা পড়ুয়ারা নন তো? পরিস্থিতি যেরকম জটিল হচ্ছে তাতে কী বলছেন পড়ুয়ারা? যাদবপুর বিদ্যাপীঠের এক পড়ুয়ার কথায়, “সায়েন্স নিয়ে পড়তে চাই। কিন্তু চান্স কি পাব? ভাল রেজাল্ট করেও তো লাভ হবে না।” যোধপুর পার্ক গার্লস হাই স্কুলের এক ছাত্রী বলেছেন, “ভর্তি নিয়ে চিন্তায় আছি। পছন্দমতো বিষয় হয়ত পেলাম না। তাছাড়া পরে কি আর এই পরীক্ষার দাম পাব?” অভিভাবকদের অনেকেই বলছেন, “পরীক্ষা হল না, কিন্তু পাশ করে গেল! প্রস্তুতির এই খামতি কি পূরণযোগ্য?” অনেকের দাবি রীতিমতো অমীমংসিত এই মূল্যায়ন।

শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন, “এই পরীক্ষার মূল্যায়ন হাস্যকর। প্রথমত, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হবেন এই পড়ুয়ারা। কারণ, তাঁরা পরীক্ষা না দিয়েই পাশ করে গেলেন। জয়ের আনন্দ উপভোগ করতে পারলেন না। দ্বিতীয়ত, রাজ্যের কি সেই পরিকাঠামো রয়েছে যে এত সংখ্যক ছেলেমেয়ে ভর্তি হতে পারবেন তাও নিজেদের পছন্দমতো বিষয় নিয়ে? উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই মূল্যায়ন তো গ্রাহ্যই হবে না। তাহলে এত নম্বর পেয়ে লাভ কী!”

উল্লেখ্য়, গত বছর লকডাউনের আগেই শেষ হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষা। গত বছর ১০,০৩,৬৬৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণের সংখ্যা ছিল ৮,৪৩,৩০। অর্থাত্‍, পাশের হার ছিল ৮৬.৩৪ শতাংশ। ২০১৯-এর মাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৮৬.০৭ শতাংশ। অর্থাত্‍ ২০২০ থেকে ২০২১-এর মধ্যে পাশের হার একধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে ১৪ শতাংশ। গতবছর ১০ লক্ষ ৩ হাজার ৬৬৬ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের পাসের হার ছিল ৮৯.৮৭ শতাংশ। মেয়েদের পাসের হার ছিল ৮৩.৪৮ শতাংশ। সেখানে এই বছর পাশ উত্তীর্ণ হয়েছেন সকলেই। ফলে, ভর্তি সংক্রান্ত জটিলতা থাকছেই। বাড়ছে উচ্চশিক্ষার সঙ্কটও। আরও পড়ুন: সকালে মাধ্যমিকের রেজাল্ট শুনেই কাউকে ফোন করেছিল রেশমা, দুপুরে ঘর থেকে উদ্ধার দেহ!