Maoist Leader: জলঙ্গির চর দখল করে কৃষক আন্দোলনে ছিল বড় ভূমিকা, প্রয়াত মাওবাদী নেতা চণ্ডী সরকার
Maoist Leader: নদিয়া-মুর্শিদাবাদ সীমানা অঞ্চলে জলঙ্গির চর দখল করে কৃষক আন্দোলনে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। আন্দোলনে রীতিমতো নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় তাঁকে।
কলকাতা: চলে গেলেন বাংলার মাওবাদী আন্দোলনের (Maoist Movement) অন্যতম সংগঠক চণ্ডী সরকার। দীর্ঘদিন থেকেই ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত রোগে। অবশেষে এদিন কৃষ্ণনগরে (Krishnanagar) নিজের বাড়িতে ৭৬ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। যুবা বয়স থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছেড়েছিলেন সরকারি চাকরি। যোগ দিয়েছেন মাও আন্দোলনে। CPI মাওবাদী রাজ্য কমিটির সদস্যও ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত জেলবন্দি ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে বেকসুর খালাস পেয়ে যান তিনি। নদিয়া-মুর্শিদাবাদ সীমানা অঞ্চলে জলঙ্গীর চর দখল করে কৃষক আন্দোলনে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। আন্দোলনে রীতিমতো নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় তাঁকে।
চণ্ডী সরকারের হাত ধরেই মাওবাদীদের ক্ষমতা অনেকটাই বড়ে গিয়েছিল ওই এলাকায়। ওই এলাকাকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীতে মাওবাদী সংগঠনের ভাগীরথী তিস্তা আঞ্চলিক কমিটি তৈরি হয়। এখনও ওই এলাকায় মাওবাদী সংগঠন বিভিন্ন ফ্রন্টাল সংগঠনের আড়ালে সক্রিয় রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। এই মুহূর্তে মাওবাদী সংগঠনের এই রাজ্যে মূল মাথা কিশোর ওরফে সব্যসাচী গোস্বামী ওই এলাকা কেন্দ্র করে অতি সম্প্রতি সংগঠন বিস্তার করছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। গত এক মাসে মাওবাদী সন্দেহে ওই এলাকা থেকে প্রায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ছোট থেকেই খেলাধূলোয় বেশ নামডাক করেছিলেন চণ্ডী সরকার। তাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট নদিয়া জেলার চাপড়া থানার মহারাজপুর গ্রামের এক জমিদার পরিবারে। পিতৃদত্ত নাম ছিল অশোক সরকার। ছোট থেকেই কৃষ্ণনগরে মামাবাড়িতে মানুষ। ছোট থেকেই হকির প্রতি ছিল বিশেষ ঝোক। হকি খেলার সুবাদে রেলে চাকরি পান। ষাটের দশকের উত্তাল খাদ্য আন্দোলনের সময় থেকেই সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে তিনিও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে নকশালবাড়ি কৃষক আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় সিপিআই (এমএল)-এ যোগ দেন। প্রথম কিছুদিন চাকরির সঙ্গে সঙ্গে পার্টির কুরিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করলেও কিছুদিনের মধ্যেই ছেড়ে দেন চাকরি। সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে পার্টিতে আত্মনিয়োগ করেন। সেইসময় কৃষ্ণনগর শহর ছিল কার্যত নকশাল বিপ্লবীদের মুক্তাঞ্চল।
চণ্ডী সরকার সিপিআইএমএল (পার্টি ইউনিটি)-এ যোগ দিয়ে নতুন করে গণআন্দোলনের গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করেছিলেন। কৃষক সংগ্রাম সমিতি গড়ে তুলে নদিয়া মুর্শিদাবাদের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষকদের এক জায়গায় আনেন। তাঁর নেতৃত্ব ও পরিকল্পনায় জলঙ্গি নদীর দুপারের অসংখ্য গ্রামে খাস জমি দখল, চরের জমি দখল,মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নদিয়া জেলার চাপড়া,শান্তিপুর, কোতোয়ালি,ভীমপুর, নাকাশিপারা,তেহট্ট, করিমপুর এবং মুর্শিদাবাদ জেলার নওদা,রেজিনগর, ডোমকল থানা এলাকায় ব্যাপক মাওবাদী সংগঠন বিস্তার লাভ করে। স্থানীয় কলিঙ্গ নদীতে মৎসজীবীদের নিয়েও আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তিনি। এমনকী ২০১২ সালে জেল মুক্তির পরেও ওই এলাকায় বিভিন্ন কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন চণ্ডী।