RG Kar: ‘জাস্ট বাঁচার চেষ্টা করছি তখন… পরিস্থিতি দেখে অন্ধকার ঘরে লুকিয়ে পড়ি’
RG Kar: "আমার সহকর্মী লিমা তখন দোতলায় ওটির পাশে একটি ঘরে লুকিয়ে ছিল। ও আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে। আমার সঙ্গে দেখা হয় এক মহিলা চিকিৎসকের। তাঁর সঙ্গে আবার ওপরে উঠি। ট্রমা সেন্টারের সামনে তখন আবার ভিড় জমেছে।"
রিমি রায়, কলকাতা: ঠিক রাত সাড়ে ১২টা, আমি তখন আরজি করে পৌঁছই। শহর জুড়ে তখন তিলোত্তমার জন্য তখন প্রতিবাদে নেমেছে মহিলা থেকে পুরুষ। আরজি কর হাসপাতালে ঢুকে যাদের দেখলাম, তারা কেউ আন্দোলনকারী বলে মনে হল না। দেখলাম বিশাল মব। তারা ইমার্জেন্সি ভাঙচুর করছে। ছবি তোলার জন্য এগোতেই আমাদের দিকে সেই দুষ্কৃতীরা এগিয়ে আসে। প্রথমে ক্যামেরা ভাঙে। আমরা বলি, দাদা, আমরা ক্যামেরা বন্ধ করে দিচ্ছি। প্লিজ ভাঙবেন না। আমরা চলে যাচ্ছি। ওরা বলে, ‘আপনারা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যান।’
বেরিয়ে ট্রমা কেয়ারের সামনে যাই। সেখানে দেখি পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। সেখান থেকে ১০ পা এগোলেই ইমার্জেন্সি, যেখানে ভাঙচুর চলছে। কিন্তু একজনও পুলিশকর্মী সেদিকে যাননি, আমার অন্তত চোখে পড়েনি। পুলিশ যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে আমরা ২-৩ মিনিট দাঁড়াই। হঠাৎ দুষ্কৃতীরা ওইদিকে চলে আসে। আমরা তখন যে যেদিকে পারি, দৌড়তে শুরু করি। ক্যামেরা পার্সন অন্যদিকে চলে যায়। কোনও সহকর্মীকেও দেখতে পাইনি। আমরা জাস্ট বাঁচার চেষ্টা করছি তখন।
উঠে একেবারে সাততলায় চলে যাই। তখন কর্মীরা আমাদের বলেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে লুকিয়ে যান। আমাদের তো ছেড়ে দিন হাসপাতালের স্টাফ, যাঁরা সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, তাঁদের কোনও নিরাপত্তা দেয়নি পুলিশ। বরং পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে হয়েছে।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর আমার সঙ্গে আমার সহকর্মী অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হয়। আমরা তখন সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করি। বাইরের পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করি। বাইরে তখন ইট বৃষ্টি শুরু হচ্ছে। কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে। কিছুটা নেমে আবার আমরা হাসপাতালের ভিতরে চলে যাই।
আমার সহকর্মী লিমা তখন দোতলায় ওটির পাশে একটি ঘরে লুকিয়ে ছিল। ও আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে। আমার সঙ্গে দেখা হয় এক মহিলা চিকিৎসকের। তাঁর সঙ্গে আবার ওপরে উঠি। ট্রমা সেন্টারের সামনে তখন আবার ভিড় জমেছে। হাসপাতালের আরও তিনজন কর্মীর সঙ্গে আমি আর লিমা একটা ঘরে লুকিয়ে পড়ি। সেখানে বলে মোবাইলে ভিডিয়ো রেকর্ড করি। বাইরে তখন তুলকালাম চলছে। আওয়াজ পাচ্ছিলাম। কর্মীরা তখন আমাদের বারবার বলছে, আপনারা বেরবেন না।
যখন মনে হল, পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে, তখন আস্তে আস্তে নীচে নামি। সহকর্মীরা তখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রায় ২ ঘণ্টা এভাবে আরজি করে ভিতরে থাকার পর রাত আড়াইটায় বেরতে পারি আমরা।