মহাপঞ্চমীর এক সকালে বলেছিলেন ‘তৃণমূল ছাড়ছি’! আজ বাদলবেলায় তৃণমূল ভবনে সেই মুকুল রায়
Mukul Roy: কোনও এক আশ্বিনের শারদপ্রাতে দল বদলের যে ছবি বাংলা দেখেছিল, তারই অদ্ভূত সমাপতনের দেখা মিলল জ্যেষ্ঠের বাদলবেলায়।
কলকাতা: ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। মহাপঞ্চমীর সকাল। সাংবাদিক বৈঠক ডাকলেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা-রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায় (Mukul Roy)। দেবীর বোধনের আগেই দিলেন ‘বিসর্জন’ বার্তা। বললেন, “দলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছেড়ে দিচ্ছি।” ব্যস! এটুকু বলেই সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেন তৃণমূলের সঙ্গে।
তখনও তৃণমূলের অন্দরে প্রশান্ত কিশোর (পিকে)-এর তেমন নামযশ হয়নি। রাজনীতির রণকৌশল নির্ধারণ কাকে বলে অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়েছিলেন মুকুল রায়। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাণক্য ছিলেন তিনি। ‘মমতাদি’র ছায়াসঙ্গী। মুকুল কোনওদিন সামনের সারির যোদ্ধা নন। তাঁর ভূমিকা অনেকটা মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের মত। অর্জুন লড়বেন, আর তিনি পথ দেখাবেন। মুকুল সেই সারথী, যাঁর দেখানো পথে এগিয়ে যেতে পারেন সেনানায়ক।
কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে সেই সম্পর্কের রসায়নে চিড় ধরা শুরু হয় ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি। সারদাকাণ্ডে সেদিন মুকুল রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। যা নিয়ে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়া শুরু হয় মুকুলের। এমনকী শোনা যায়, হাজতবাস এড়াতে মুকুল নাকি বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করছিলেন তলে তলে। এরপর ধীরে ধীরে ঘাসফুল থেকে মুকুল খসার আবহ তৈরি হতে শুরু করে। রাজ্যের দেওয়া জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা ছাড়েন মুকুল রায়। তৃণমূলের সমস্ত সাংগঠনিক পদ হারানো শুরু হয় তাঁর। পরিবহণ, পর্যটন ও সংস্কৃতির স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয় তাঁকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসাবেও তাঁর নাম প্রত্যাহার করে নেয় তৃণমূল। একাধিক স্থায়ী কমিটি, ভিন রাজ্যের দায়িত্ব থেকেও মমতা সরিয়ে দেন তৃণমূলের এক সময়ের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’কে।
After Durga Puja I will resign from the party & post of MP: Mukul Roy, TMC pic.twitter.com/VFpxthrR0x
— ANI (@ANI) September 25, 2017
এরপর ২০১৭ সালে সারদার সঙ্গে মুকুলের জন্য জোড়া ফলা হয়ে ওঠে নারদকাণ্ড। নারদ স্টিং অপারেশন ঘিরে হইচই পড়ে রাজ্যজুড়ে। তদন্তকারীরা মুকুলকে ডেকে পাঠালে সে সময় তিনি দাবি করেন, “আমি একমাত্র যাকে টাকা নিতে দেখা যায়নি।” মুকুলের এই মন্তব্য সেদিন বুঝিয়ে দিয়েছিল নারদকাণ্ডে তাঁর বাকি সতীর্থদের থেকে তিনি আলাদা। একইসঙ্গে বুঝিয়েছিলেন, এবার অন্য গাছে মুকুল ধরার সময় এগিয়ে আসছে। ২০১৭ সালের জুন মাসে সিবিআই নারদকাণ্ডের তদন্ত শুরু করে। সে বছরের সেপ্টেম্বরে তৃণমূল ছাড়েন। ওই বছরই ৩ নভেম্বর ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন মুকুল রায়।
আরও পড়ুন: মুকুল-সব্যসাচী জল্পনার মধ্যেই আরও জোরাল রাজীবের তৃণমূল যোগের সম্ভাবনা, ফিরতে পারেন আগামী সপ্তাহেই
২০২১ সালের ১১ জুন। আবারও তৃণমূল ভবনে মুকুল রায়। কোনও এক আশ্বিনের শারদপ্রাতে দল বদলের যে ছবি বাংলা দেখেছিল, তারই অদ্ভূত সমাপতনের দেখা মিলল জ্যেষ্ঠের বাদলবেলায়। শুধু রাজ্য নয়, এ ছবি দিল্লিতে বসেও দেখছেন অনেকেই।