মাত্র ১০০ কোটি টাকা আদায় হওয়ায় বাড়ছে ‘ওয়েভার স্কিমের’ সময়সীমা

আগামিকাল, ৩১ ডিসেম্বর ওয়েভার স্কিমে আবেদনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। অথচ, এখনও পর্যন্ত জমা পড়েছে মাত্র ১০০ কোটি টাকা! স্বাভাবিকভাবেই বিপুল বকেয়ার এই সামান্য আদায়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পুর প্রশাসনের কর্তাদের মাথায়।

মাত্র ১০০ কোটি টাকা আদায় হওয়ায় বাড়ছে 'ওয়েভার স্কিমের' সময়সীমা
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Dec 30, 2020 | 11:50 PM

সায়ন্ত ভট্টাচার্য: বিপুল বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ে ‘ওয়েভার স্কিম’ (Waiver Scheme) চালু করেছিল কলকাতা পুরসভা (KMC)। লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল, অন্তত ৭৫০ কোটি টাকা। আগামিকাল, ৩১ ডিসেম্বর ওয়েভার স্কিমে আবেদনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। অথচ, এখনও পর্যন্ত জমা পড়েছে মাত্র ১০০ কোটি টাকা! স্বাভাবিকভাবেই বিপুল বকেয়ার এই সামান্য আদায়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পুর প্রশাসনের কর্তাদের মাথায়। ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ কলকাতা পুরসভার অর্থভাণ্ডারে এই সামান্য টাকা আদায়ের জেরে কোনও কাজই করা সম্ভবপর হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা। এই অবস্থায় ওয়েভার স্কিমে আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় রাজস্ব বিভাগের কর্তারা আলোচনায় বসে প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। তবে তা কতদিনের জন্য বৃদ্ধি করা হবে, তা কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছে বলেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তারা জানিয়েছেন। রাজস্ব কর বিভাগের এক কর্তা বলেন, বকেয়া সম্পত্তি কর আদায়ের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি না করা হলে বকেয়া করের ৫০ শতাংশও আদায় করা সম্ভবপর হবে না। মেয়র থাকাকালীন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় যে যে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন, সেগুলির পুনরাবৃত্তি করলেই কর বকেয়া রাখা সম্পত্তির মালিকরা ছুটে আসবেন বলে দাবি ওই কর্তার।

শহরে ১৬টি বরোতে কতগুলি বাড়ি বেআইনি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, কতগুলি সঠিক সম্পত্তি কর দেয়, এই ধরনের নানা তথ্য ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করেছে রাজস্ব বিভাগ। পুরসভার নিজস্ব তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে শহরে প্রায় সাত লক্ষ করদাতা রয়েছেন। কিন্তু সংযুক্ত এলাকা এবং বন্দর এলাকার একাধিক বাড়ি বা জমির কর মূল্যায়নই আজ পর্যন্ত হয়নি। এমনকী অনেক বাড়ি বা বহুতলের মিউটেশন বা অ্যাসেসমেন্ট না হওয়া সত্ত্বেও দিনের পর দিন সেখানে বাসিন্দারা বসবাস করছেন। এমন অনেক বহুতল বা বাড়ি রয়েছে, যার একটি অংশ বাণিজ্যিক কাজে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, অথবা ব্যবহার করা হচ্ছে পুরসভাকে অন্ধকারে রেখেই। নিজস্ব পরিকাঠামোর অভাবে সেই সম্পত্তিগুলির কর নির্ধারণও করতে পারেনি পুর প্রশাসন।

কর মূল্যায়ন বিভাগের এক শীর্ষকর্তার কথায়, এমনিতেই বকেয়া কর আদায়ে নানা সরলীকরণ করেও তেমনভাবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেননি শীর্ষকর্তারা। সরলীকরণে আখেরে পুর প্রশাসনের ক্ষতিই হয়েছে। পুরসভার এক শীর্ষ আমলার কথায়, দিনের পর দিন অনেক নাগরিকই কর জমা না দিয়ে আটকে রাখে। মামলার জটিলতায় সেগুলি আদায় করাও যায় না। তা আদায়ের জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা আজও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। সে কারণেই বকেয়া সম্পত্তি করে সুদ ও জরিমানা ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুর কর্তাদের কথায়, গত ১ অক্টোবর থেকে চালু হওয়া ওয়েভার স্কিমের মাধ্যমে আশা করা হয়েছিল, করদাতারা আগের তুলনায় অনেক বেশি সাড়া দেবেন। সে কারণেই সুদ এবং জরিমানায় ১০০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। গতবারগুলির তুলনায় অনেক বেশি নমনীয় হয়েছিলেন পুরসভার প্রশাসক। কিন্তু সেখানেও পুরকর্তাদের ভাবনাচিন্তায় ধাক্কা খেয়েছে। কারণ আবেদনকারীর সংখ্যা মাত্র ১ লক্ষ।

আরও পড়ুন: একুশের আগেই আড়ে বহরে বাড়ছে এবিভিপি, রাজ্যে সদস্য সংখ্যা বেড়ে এক লক্ষ!

পুর তথ্য বলছে, বাকি যে পরিমাণ আবেদন পত্র জমা পড়ে রয়েছে, তাতে টেনেটুনে ৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত আদায়ের পরিমাণ ছুঁতে পারে বলে দাবি রাজস্ব বিভাগের কর্তাদের। গতবার এই ওয়েভার স্কিমের মাধ্যমে ৩৮০ কোটি টাকা পুর ভাণ্ডারে এসেছিল। তবে তৎকালীন সময়ে বাণিজ্যিক করদাতার সংখ্যাই বেশি ছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে ৭৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল। সুদ ও জরিমানাও ছিল সম্পূর্ণ মকুব। পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বললেন, ওয়েভার স্কিম সম্পর্কে প্রচার মানুষের মধ্যে আরও বেশি করে নিয়ে যেতে হবে। যারা অনাগ্রহী, তাঁদেরকেও আগ্রহী করে তুলতে হবে। নইলে লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ পূরণ হওয়া সম্ভবপর নয়।

আরও পড়ুন: সৌমেন্দুর অপসারণে ‘অভিমানী’ দিব্যেন্দু, আর যাবেন না পুরসভার দফতরে