Prasanna Roy: পার্থ ঘনিষ্ঠ প্রসন্নর চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ
Prasanna Roy: নিউটাউনের এই হোটেলের ৫ তলায় খোঁজ প্রসন্ন রায়ের আরও একটি সংস্থার। পন্টিয়াক মার্চেন্ট'স প্রাইভেট লিমিটেড নামে সেই সংস্থার নামেই চলত একাধিক ব্যবসা।
কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা। সবের গন্তব্য হয় জমি, না হয় ফ্ল্যাট, মাছের ভেরি বা বিলাসবহুল বাগানবাড়ি। প্রসন্নর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার উত্স কী? জানতে তৎপর তদন্তকারীরা। পার্থ ঘনিষ্ঠ প্রসন্নকে চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর আবার হাজিরা দেওয়ার কথা। কথায় বলে, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা নাকি মোটেই কাজের কথা নয়। কিন্তু পার্থ ঘনিষ্ঠ প্রসন্নর কথা শুনলে এই প্রবাদের কোনও সারবত্তাই মেলে না!
২৬ অগস্ট নিউটাউন থেকে সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হন প্রসন্ন কুমার রায়। প্রথম জীবনের রং মিস্ত্রি প্রসন্নর সম্পত্তির বহর দেখে চক্ষু চড়কগাছ গোয়েন্দাদের। ভূরিভূরি টাকা, জমি, ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে বিলাসবহুল রিসর্ট, মাছের ভেরি। কী নেই প্রসন্নর সম্পত্তির তালিকায়!
নারকেলডাঙায় টালির চালের বাড়ি। নিম্নবিত্ত পরিবার। প্রথম জীবনে রং মিস্ত্রির কাজ করতেন প্রসন্ন। পরে পার্থ-যোগে ভাগ্য খোলে প্রসন্নর। গত ৭-৮ বছরে কার্যত কুবের হয়ে উঠেছেন প্রসন্ন রায়। দেশে-বিদেশে ছড়ানো কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।
রাজারহাটের ধারসায় অন্তত ১০ কাঠার জমির ওপর পেল্লায় বাগানবাড়ি। সূত্রের খবর, প্রসন্নর স্ত্রী সোনি রায়ের নামে এই বাড়ির মালিকানা। চকপাঁচুরিয়াায় আড়াই একর জমির মালিকানাও প্রসন্নর। ২০১৩ থেকে ২০১৮-র মধ্যে মোট ১৩৮টি জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি। পাঁচ বছরে ১ হাজার ৩৪ কাঠা জমিতে ২০০ কোটির বিনিয়োগ। ২০১৭ সালে জমি কেনায় সেঞ্চুরিই করে ফেলেন প্রসন্ন! রাজস্ব বিভাগে প্রসন্নর নামে নথিভুক্ত হওয়া ১০৯টি ডিডের মধ্যে ১০৩টি শুধু জমিরই ডিড!
সাপুরজিতে পার্থ-ঘনিষ্ঠ প্রসন্নর নামে আড়াই বিঘা জমিরও সন্ধান মিলেছে। প্রথমে জলা জমি কেনা হলেও পরে মাটি ফেলে তা বুজিয়ে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়। এই আড়াই বিঘা জমির দাম কোটি টাকার কম তো নয়ই।
নিউটাউনের রবিরশ্মিতে প্রসন্ন রায়ের দুটি ভিলার হদিশ। সূত্রের খবর, প্রতি ভিলার মূল্য কোটি টাকা। গত ৫ বছর ধরে নাকি দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে রয়েছেন প্রসন্ন ।
নিউটাউনের এই হোটেলের ৫ তলায় খোঁজ প্রসন্ন রায়ের আরও একটি সংস্থার। পন্টিয়াক মার্চেন্ট’স প্রাইভেট লিমিটেড নামে সেই সংস্থার নামেই চলত একাধিক ব্যবসা।
হাওড়ার শ্যামপুরের গাদিয়াড়ায় শালি জমিতে ১০ বিঘার ওপর তৈরি রিসর্টও নাকি বকলমে প্রসন্ন রায়ের। চাকরি বিক্রির টাকা থেকেই গড়ে উঠেছে কয়েক কোটি টাকার এই রিসর্ট। অভিযোগ বিরোধীদের।
৩০ বিঘে জমির ওপর তৈরি বাগনানের টাইলস কোম্পানি। ২০১৫ সালে ১২ কোটি টাকা দিয়ে কারখানাটি নাকি কেনেন প্রসন্ন।
উত্তরবঙ্গেও ২টি চা বাগান ও একটি রিসর্টের মালিকানা এসএসসি দুর্নীতির এই মিডলম্যানের নামে। স্থানীয়দের দাবি, আলিপুরদুয়ারের চিলাপাতার এই বিলাসবহুল রিসর্টে কোনদিনই যেতেন না প্রসন্ন। সিবিআই স্ক্যানারে আলিপুরদুয়ারের এই রিসর্টও।
দিঘা, পুরি, সুন্দরবনেও হোটেল প্রসন্নর। স্পষ্ট প্রসন্নর ফেসবুক পোস্ট থেকেই। হোটেল মিলি নামে নিউ দিঘার হোটেলটি তদন্তকারীদের রেডারে। সূত্রের খবর, দুবাইতেও বিপুল প্রতিপত্তি প্রসন্নর। হোটেল সহ একাধিক ব্যবসার খোঁজ মিলেছে পার্থ ঘনিষ্ঠের। দুবাই, ইজরায়েল সহ একাধিক দেশ কার্যত ঘরবাড়ি ছিল প্রসন্নর।
একজন সাধারণ মিস্ত্রি থেকে নিজের চেষ্টায় কেউ বড় ব্যবসায়ী হতেই পারেন। তবে সেক্ষেত্রে প্রতিপত্তির দৌড় কি এতদূর? দুর্নীতির কত টাকা ক্যাশবাক্সে পড়লে এই সাম্রাজ্য বানানো সম্ভব? উত্তর জানতে মুখিয়ে তদন্তকারীরা। ২৬ অগাস্ট গ্রেফতারের পর ২৭ অগাস্ট প্রসন্নকে ২দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। ২৯ অগাস্ট ফের ৭ দিনের হেফাজতের নির্দেশ। আজও কি আদালতে হেফাজতের আবেদন করবেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা? নজর বাংলার।