Primary Literacy in West Bengal: সেরা হয়েও সন্দিহান! প্রাথমিক শিক্ষায় শীর্ষে থেকেও এখনও পিছিয়ে বাংলা
Kolkata: সমীক্ষা বলছে শুধু বঙ্গে নয়, করোনাকালে প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবার তাঁদের সন্তানকে অনলাইন শিক্ষার পরিকাঠামোয় আনতে সক্ষম হননি। ১৫ শতাংশের অধিক বাংলার। এই ১৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে দলিত আদিবাসী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা
কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষায় দেশের সেরা বাংলা। কেন্দ্রের প্রাথমিক শিক্ষা সূচকে (Index on Foundational Literacy and Numeracy) উঠে এসেছে এমনই তথ্য। শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী। টুইটে শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীদের অভিনন্দন মমতার। কিন্তু চিন্তা ধরাচ্ছে অন্যত্র। বুনিয়াদি শিক্ষায় শীর্ষে থেকেও একাধিক ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে বঙ্গ। যাতে শিক্ষা নিয়ে রয়েছে বেশ কিছু উদ্বেগও।
সদ্যই প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ থেকে প্রকাশিত ইন্সটিটিউট ফর কম্পিটিটিভনেসর (Institute for Competitiveness) ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বড় রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বঙ্গ। সবচেয়ে পিছিয়ে বিহার।
রাজ্যের এই সাফল্যে টুইট করে শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিবাদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে তিনি লিখেছেন, “বাংলার জন্য দারুণ খবর! আমাদের রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষায় বড় রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে। সকল শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা পর্ষদকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিন্দন জানাই।”
মূলত, আইএফসির প্রকাশিত সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজ্যের প্রাথমিক স্তরে ১০ বছরের কম বয়স্ক শিশুদের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে শিক্ষাগ্রহণের হারকেই সাক্ষরতার সূচক ধরে এই মান নির্ধারিত হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি বিভাগ ও উপবিভাগও রয়েছে। কিন্তু, শীর্ষ স্থান দখল করেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
তাহলে উদ্বেগ কোথায়?
আইএফসির (IFC) প্রাপ্ত সমীক্ষা আরও জানান দিচ্ছে, অনেক কিছুতে এগিয়ে থাকলেও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে বাংলা। প্রাথমিক স্তরে স্কুলছুটে বাংলা এখন অনেক রাজ্য থেকে পিছিয়ে। তামিলনাড়ু, সিকিম, পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, কেরালা, হরিয়ানা, গোয়া, দিল্লিতে ড্রপ আউট রেট অনেক কম। প্রাথমিক স্তরে বহু স্কুলেই পড়ুয়া অনুপাতে শিক্ষক নেই। কোথাও আবার পড়ুয়াদেরও আকাল রয়েছে। করোনাকালে এ যাবৎ স্কুলেরছুটের পরিমাণও বেড়েছে।
সমীক্ষা বলছে শুধু বঙ্গে নয়, করোনাকালে প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবার তাঁদের সন্তানকে অনলাইন শিক্ষার পরিকাঠামোয় আনতে সক্ষম হননি। ১৫ শতাংশের অধিক বাংলার। এই ১৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে দলিত আদিবাসী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা। এমনকী, হকের ‘মিড-ডে মিল’-ও জোটেনি পড়ুয়াদের। মোট ৮ শতাংশ পড়ুয়া গোটা দেশে তৈরি করা খাবার পেয়েছে। বেশিরভাগই পেয়েছে কাচামাল। বাংলায় মিড-ডে মিল-এও কারচুপির খতিয়ান উঠে এসেছিল।
লকডাউন পরবর্তী সময়ে বাচ্চাদের স্কুলমুখী করতেও সমস্যা দেখা গিয়েছে। অনেকেই আর স্কুলে ভর্তি হয়নি। হার কমেছে ভর্তির। স্কুলের পরিকাঠামোগত দিক থেকে প্রাথমিক স্তরে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অবনমনও হয়েছে। অনেক স্কুলেই কম্পিউটারের প্রাথমিক শিক্ষা নেই। কোথাও বা থাকলেও নামমাত্র। শুধু তাই নয়, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে পাঠ্যবই কিনে পড়ার ক্ষমতা রয়েছে আনুমানিক ২০ শতাংশের। সেদিক থেকে করোনাকালে আরও কমেছে পড়ার জিগিরও। তাই চিন্তা থাকছেই।
কালীদাসী মিত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় চৌধুরী বলেন, “বাচ্চা আমার স্কুলে কমেনি। তবে হ্যাঁ, পড়ার সুবিধা ওদের কমেছে। আমরা ক্লাস করাতে পারিনি। কারণ বাড়িতে অধিকাংশেরই ইন্টারেনট নেই। তাই মাসে একদিন করে অভিভাবকদের ডেকে এনে তাঁদের হাতেই প্রশ্ন পাঠিয়ে দেওয়া হত। বাচ্চাদের বই তো স্কুল থেকেই আমরা দিয়ে থাকি। সেইভাবেই কোনওরকমে পাশ করেছে ওঁরা। প্রাথমিক স্তরেই আসলে মূল পড়াশোনার ভিত্তি তৈরি হয়। সেটাই নষ্ট হলে মুশকিল তো বটেই।”
গড়ফা ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা মৌসুমী দেব বসুর কথায়, “আমাদের স্কুলে আগে কম্পিউটার ছিল না। বেশ কিছু বছর হল এসেছে। কিন্তু করোনায় তো সবই বন্ধ। বাচ্চাদের পড়ানোর উপায় নেই। প্রাথমিক স্তরে বাংলা শীর্ষে, এটা অত্যন্ত আনন্দের খবর, কিন্তু, করোনা পরবর্তী সময়ে ছোট ছেলেমেয়েদের বিশেষ করে যাদের পরিবার শ্রমজীবী, সেই সব বাচ্চাদের স্কুলে ধরে রাখাটা খুবই কঠিন। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।”
ঠিক কী ঘোষণা করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে? ইনডেক্স অন ফাউন্ডেশনাল লিটরেসি অ্যান্ড নিউমেরেসির সমীক্ষায় (Index on Foundational Literacy and Numeracy) দশ বছরের কম বয়স্ক শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় বড় রাজ্যগুলির তালিকায় শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ ও সবচেয়ে পিছনে রয়েছে বিহার। ছোট রাজ্যগুলির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কেরল ও সবচেয়ে পিছনে ঝাড়খণ্ড।
যে চারটি ভাগে ভাগ করে এই তথ্য ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে, বড় রাজ্য, ছোট রাজ্য, উত্তর-পূর্ব ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। কেরল, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে লাক্ষাদ্বীপ ও উত্তর-পূর্বের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে মিজ়োরাম। বড় রাজ্যগুলির তালিকায় শীর্ষস্থানে থাকা বঙ্গের প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫৮.৯৫এবং ছোট রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে থাকা কেরলের প্রাপ্ত পয়েন্ট ৬৭.৯৫।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে , এই সমীক্ষাটি মূলত সমস্ত রাজ্যগুলির ১০ বছরের কমবয়স্ক শিশুদের প্রাথমিক সাক্ষরতার হার নির্ধারণে পরিচালন, প্রতিষ্ঠান ও পরিস্থিতির মোকাবিলার উপর নজর দেওয়া হয়েছে।
এই ইনডেক্সটি ৪১ টি সূচক সমন্বিত পাঁচটি ভাগে বিভক্ত। সেই মূল পাঁচটি ভাগে রয়েছে, শিক্ষাগত কাঠামো, শিক্ষার অধিকার, সাধারণ স্বাস্থ্য, শেখার ফলাফল এবং পরিচালন। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি রাজ্যই জাতীয় গড়ের থেকে পিছিয়ে।
চেয়ারম্যান বিবেক দেবরয় বলেছেন, “শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, তা ক্রমেই ইতিবাচক বাহ্য়িকতার দিকে নিয়ে যায়, এবং শিক্ষার মান গঠনমূলক বছরগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও জানিয়েছেন, যে রাজ্যগুলি পিছিয়ে সেক্ষেত্রে কিছু প্রতিকার ভাবা বাঞ্ছনীয়।