Kolkata Municipal Corporation: জট পাকানো তারেই লুকিয়ে জতুগৃহ! সব জেনেও কেন অবহেলা পুরনিগমের?

Electricity wiring in Slum areas: কলকাতার উত্তর এবং দক্ষিণ মিলিয়ে মোট বস্তি রয়েছে ৩০৮৯ টি। যার মধ্যে উত্তর কলকাতায় রয়েছে ১৪১৯ টি এবং দক্ষিণ কলকাতায় রয়েছে ১৬৭০ টি। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শহরের বস্তিগুলির প্রায় ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের তারগুলির বিপজ্জনক অবস্থা হয়ে রয়েছে।

Kolkata Municipal Corporation: জট পাকানো তারেই লুকিয়ে জতুগৃহ! সব জেনেও কেন অবহেলা পুরনিগমের?
কলকাতার বস্তি এলাকার ইলেকট্রিক তারগুলির বেহাল দশা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 23, 2022 | 11:01 PM

সা য় ন্ত ভ ট্টা চা র্য

বস্তি উন্নয়ন। কলকাতা পুরনিগমের যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় এসেছে বস্তি উন্নয়ন এর বিষয়টি সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। তবে ক্ষমতাসীন প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলই নিজ নিজ ইশতেহারে যা দাবি করত, বাস্তবে তার ফারাক থাকত অনেকটাই। তা কলকাতা পুলিশের হিসেব থেকেই স্পষ্ট। কলকাতা পুলিশের তথ্য বলছে, শহরের বুকে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, তার বেশিরভাগ বস্তিতে বিদ্যুতের তারের বিপজ্জনক অবস্থার জন্যই। পুলিশের এই তথ্য যে কোনওভাবেই ত্রুটিপূর্ণ নয়, তা মেনে নিয়েছেন কলকাতা পুরনিগমের বস্তি বিভাগের আধিকারিকরাই। কলকাতার উত্তর এবং দক্ষিণ মিলিয়ে মোট বস্তি রয়েছে ৩০৮৯ টি। যার মধ্যে উত্তর কলকাতায় রয়েছে ১৪১৯ টি এবং দক্ষিণ কলকাতায় রয়েছে ১৬৭০ টি। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শহরের বস্তিগুলির প্রায় ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের তারগুলির বিপজ্জনক অবস্থা হয়ে রয়েছে। আর সেই বিপদকে মাথায় নিয়েই বসবাস করতে হয় বস্তির বাসিন্দাদের।

যদিও এর জন্য শুধু প্রশাসনের কর্তাদেরকে দোষী করলে চলবে না। বস্তির বাসিন্দারাও এ ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অভিযুক্ত। হুকিং-এর মাধ্যমে বিদ্যুতের চুরি করতে নিতে গিয়ে গোটা বস্তির বাসিন্দাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন সেখানকারই একাংশ। সম্প্রতি কলকাতা পুরনিগমের মাসিক অধিবেশন এবং পুরনিগমেক বাজেট, দুই জায়গাতেই বস্তির বিদ্যুতের এই ভয়াবহতা এবং অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে অব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। এরপরই কলকাতা পুরনিগমের বস্তি বিভাগের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সিইএসসি, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা পুরনিগমের সবক’টি বস্তির বিদ্যুতের তারগুলির কী অবস্থা হয়েছে ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কি রয়েছে, সবকিছু নিয়ে সমীক্ষা করবেন। এই সমীক্ষার রিপোর্ট থেকে প্রয়োজনীয় ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Slum areas of Kolkata

কলকাতার অনেক বস্তি এলাকাতেই বিদ্যুতের তারগুলি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে

শহরের বেশ কিছু বস্তি এলাকায় ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইনের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু কলকাতার সব বস্তিগুলিতে একই রকম ভাবে ভূগর্ভস্থ তার নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা কলকাতা পুরনিগমের ভাঁড়ারে নেই। কলকাতায় এখন ১৪-১৫ টি মডেল প্রস্তুতি রয়েছে। যে জায়গাগুলিতে বিদ্যুতের তারগুলির জটলা কাটিয়ে লোহার কাঠামোর মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়েছে। অগ্নিকাণ্ড যাতে না হয়, তার জন্যই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। কিন্তু এদিন কলকাতার বেশ কয়েকটি বস্তিতে গিয়ে দেখা যায় সেই লোহার কাঠামো থেকেও বিদ্যুতের তার ঝুলে পড়েছে। চারপাশে জটলা তৈরি হয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন বস্তিতে ঘুরে এই ছবিই উঠে এল।

বিরোধীরা অবশ্য প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, কলকাতায় বস্তিগুলিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নতুন নয়। তাহলে পর্যাপ্ত সমীক্ষা করে কেন বিদ্যুতের তারগুলি নিয়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া গেল না এতদিনেও? ২০১০ সাল থেকে কলকাতা পুরনিগমে ক্ষমতাসীন রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বারবার করে নিজেদের ইশতেহারে ক্ষমতাসীন এই দল বস্তির পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর কথা বললেও বাস্তবের সঙ্গে তাল মিল পাওয়া যাচ্ছে না কেন? গত কয়েক মাসে যে ক’টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে বেশিরভাগই বস্তি এলাকায়। তাহলে কেন এতদিনেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া গেল না?

শহরে বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দারা বলছেন, মডেল বস্তি তৈরি হলেও বিদ্যুতের তার পরিবহনের ক্ষেত্রে যে পরীক্ষাটা প্রয়োজন ছিল তা কিন্তু গড়ে ওঠেনি। যে কারণে বারবার করে শর্ট সার্কিটের জেরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যদিও কলকাতা পুরনিগমের বস্তি বিভাগের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার বলেন, “এটা ঠিক কলকাতার বেশিরভাগ বস্তির বিদ্যুতের তার পরিবহনের মাধ্যম একদমই ভাল নেই। যে কারণে বারবার করে শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শহরের সব বস্তির বিদ্যুৎ পরিবহনের মাধ্যমগুলি এবং সেগুলির হাল কীরকম রয়েছে তা নিয়ে সমীক্ষা করব। সেই সমীক্ষার পর সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের হাতে তুলে দেব। অর্থ সংকটের জন্য কিছু কিছু জায়গায় কাজ থমকে রয়েছে। কলকাতা পুরনিগম আগামী অর্থবর্ষে এই ধরনের সংকটগুলো কাটিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহনের মাধ্যমগুলিকে যথোপযুক্ত করে দেবে।”

যদিও ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বস্তিগুলির যে হাল হয়ে রয়েছে, সেগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন করতে বেশি জোর দেওয়া হবে নাকি বিদ্যুৎ পরিবহনের মাধ্যমগুলিতে আরও সুসংগঠিত করতে গুরুত্ব দেওয়া হবে? আগামী অর্থবর্ষে বস্তি উন্নয়নে কলকাতা পুরনিগমের বাজেটে ১৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বস্তি বিভাগ সূত্রে খবর, বস্তির মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিকাশি এবং শৌচাগার তৈরি করতেই অর্ধেক টাকা খরচ হয়ে যায়। সেখানে বিদ্যুতের তার পরিবহনের পরিকাঠামো উন্নত করতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা পাওয়া যায় না। স্বাভাবিকভাবে একটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, শুধু সমীক্ষার মধ্যেই গোটা বিষয়টি থমকে যাবে না তো?

আরও পড়ুন : Water Supply in Kolkata : সাপ্লাই বন্ধ! শনিবার জলের ভোগান্তি হতে পারে কলকাতায়