Sabyasachi Dutta: ‘হজম’ হল না লুচি-আলুরদম ডিপ্লোমেসি! যে খেলেন আর যিনি খাওয়ালেন, ফের তৃণমূলে
Sabyasachi Dutta in TMC: ফের একুশের দেবীপক্ষ। বিজেপির সঙ্গে দু বছরের সম্পর্ক মিটিয়ে দিয়ে পুরনো দলেই ফিরলেন সব্যসাচী। কিন্তু কেমন ছিল সেই লুচি আলুর দম পর্ব?
কলকাতা: দুর্গাপুজো, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। তার সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে একটি পদ- লুচি আলুর দম। ২০১৯ সালের দেবীপক্ষে তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক তথা বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্ত যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। তাঁর বাড়িতে গিয়ে লুচি আলুর দম খেয়েছিলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। আপাত নিরীহ মুখোরচক সেই পদ নিয়েই তখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। এমনকি মুকুল রায়কে লুচি আলুর দম খাইয়ে শো-কজ পর্যন্ত খেতে হয়েছিল সব্যসাচীকে।
ফের একুশের দেবীপক্ষ। বিজেপির সঙ্গে দু বছরের সম্পর্ক মিটিয়ে দিয়ে পুরনো দলেই ফিরলেন সব্যসাচী। কিন্তু কেমন ছিল সেই লুচি আলুর দম পর্ব?
এক রাতে সব্যসাচীর সল্টলেকের বাড়িতে গিয়েছিলেন বিজেপির মুকুল রায়। কৌতূহলী সাংবাদিকদের বেরিয়ে বলেছিলেন, ‘‘সব্যসাচীর সঙ্গে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক। লুচি-আলুরদম খেয়ে গেলাম। খিদে পেলে মাঝেমাঝেই আসি। ওর স্ত্রী খুব ভাল রান্না করে।’’ সেদিন কী নিয়ে আলোচনা হয়েছিল তা নিয়ে মুকুলের জবাব ছিল, ‘‘ক্রিকেট থেকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ— আলোচনা তো কত কিছু নিয়েই হতে পারে!’’
আর সব্যসাচী? বসেন “মুকুল রায় বলেন লুচি আলুর দম খেতে চেয়েছিলেন। রান্না করতে এবং খেতে যতটুকু সময় লেগেছে সেই সময়টুকুই উনি বাড়িতে ছিলেন। টিভিতে আমরা খেলাও দেখছিলাম খানিক্ষণ।”
যদিও মুকুল-সব্যসাচীর আলাপচারিতা নিয়ে ভোটের মুখে বেজায় চটেছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সব্যসাচীর বিরুদ্ধে দল শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনতে পারে বলেও জল্পনা ছড়ায় বঙ্গ রাজনীতিতে। তড়িঘড়ি রবিবার বিধাননগর পুরনিগমের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর ফিরহাদ হাকিম ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বাধীন সেই বৈঠকে সব্যসাচী স্বীকার করেন, “ভুল হয়ে গিয়েছে।”
সব্যসাচী জানান, “সেদিন রাতে আমি বাড়ি ফিরছিলাম। একটা নম্বর থেকে ফোন আসে। হ্যালো বলতেই অপর দিক থেকে বলা হয়, দাদা বলছি। আমি বললাম হ্যাঁ, বলুন। তখন বললেন, আমি মুকুলদা বলছি। বললাম, বলো। বললেন, অনেকদিন তোদের সঙ্গে দেখা হয় না। সল্টলেকের দিকে এসেছি। আমি তোর বাড়িতে আসছি। বাড়িতে কেউ আসতে চাইছেন, তাঁকে কি না বলব? বললাম এসো। বাড়িতে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয়। উনি বললেন, লুচি-আলুর দম খাবেন। লুচি-আলুর দম তো কারও বাড়িতে তৈরি থাকে না। বানাতে সময় লাগে। যতটা সময় লেগেছিল, সেসময় কথা হয়েছে। তখন খেলা চলছিল। সেই নিয়ে কথা হয়েছে। রাজনীতি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। তারপর উনি লুচি-আলুর দম খেয়ে চলে যান।”
সব্যসাচী সেদিন আরও বলেছিলেন, “আমি জানতাম না উনি (মুকুল রায়) সংবাদমাধ্যমকে ডেকেছেন। এও জানতাম না যে আমার বাড়ির সামনে সংবাদিকরা অপেক্ষা করে ছিলেন। উনি একটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছিলেন।” যদিও ‘তৃণমূলে ছিলাম, আছি, থাকব’ বলা নেতা লুচি-আলুর দম পর্বের অব্যবহিত পরে মুকুলের হাত ধরেই চলে গিয়েছিলেন বিজেপিতে।
কাট-টু ৭ অক্টোবর। মহালয়ার পরের দিন তৃণমূলে যোগ দিয়ে সব্যসাচী বললেন, ‘দলের সঙ্গে মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, যা থেকে আবেগতাড়িত হয়ে অন্য দলে গিয়েছিলাম। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের আবার আমাকে দলে গ্রহণ করলেন। বাকিরাও সবাই স্বাগত জানালেন। দল যেভাবে বলবে সেভাবেই আগামী দিনে কাজ করব।’
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলে বিজেপিতে ভাল ছিলেন না সব্যসাচী। ভোটের টিকিট পেয়েছিলেন বটে, তবু দলের অন্দরে তেমন গুরুত্ব ছিল না। আর একুশের ভোটে হারের পর তো নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। শেষবার তাঁকে মুরলি ধর লেনের রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে দেখা গিয়েছিল গত রবিবার। ভবানীপুর উপনির্বাচনে সেদিন রেকর্ড ভোটে জিতেছেন মমতা। তবে এ নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি তিনি। একসময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঝালমুড়ি খাওয়া বাবুল সুপ্রিয় এখন তৃণমূলে। আর মুকুল রায়কে লুচি আলুর দম খাওয়ানোর পর বিজেপিতে যাওয়া সব্যসাচী ফিরলেন পুরনো দলে। যদিও আগে থেকেই ‘দাদা’ মুকুল রায় চলে এসেছেন ঘাসফুলে।
আরও পড়ুন: Coal Shortage: কয়লা সঙ্কটে অন্ধকারে ডুবে না তো পুজোর কলকাতা? কী জানালেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী