Mamata-Abhishek: কোনও সমান্তরাল শক্তি নয়, অভিষেকের পদ ‘অবলুপ্তি’ করে দলে শেষ কথা মমতাই
Mamata Banerjee: সব পদের আপাতত অবলুপ্তি ঘটানোর ফলে অভিষেক এখন আর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক থাকছেন না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সীদের মতো তিনিও জাতীয় কর্মসমিতির বাকিদের মতোই একজন।
কলকাতা : তৃণমূলের নতুন জাতীয় কর্মসমিতি (TMC Working Committee) গঠন হয়েছে। তালিকায় রয়েছেন ২০ জন। সবথেকে নজরকাড়া বিষয়টি হল চেয়ারপার্সন ছাড়া বাকি কোনও পদ আপাতত থাকছে না। চেয়ার পার্সন মমতাই (Mamata Banerjee) পরবর্তী সময়ে পদাধিকারীর তালিকা স্থির করবেন। অর্থাৎ, শনিবারের কালীঘাটের বৈঠকের পর আরও কোনঠাসা হয়ে গেলেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সূত্রের খবর, আজকের বৈঠকে আগাগোড়া ম্রিয়মাণ ছিলেন অভিষেক। কার্যত চুপচাপই ছিলেন তিনি। প্রায় শব্দ করেননি বলেই চলে। তবে গতকাল থেকে দফায় বৈঠক হয়েছে মমতা ও অভিষেকের। সূত্রের খবর অভিষেককে আজকের বৈঠকে মমতা বলেছেন,”যারা সোশ্যাল মিডিয়া করছে, তাদের বল এ সব কম করে দলের কাজে মন দিতে, দলের সংগঠনের কাজ করতে।” অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, সব পদের আপাতত অবলুপ্তি ঘটানোর ফলে অভিষেক এখন আর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক থাকছেন না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সীদের মতো তিনিও জাতীয় কর্মসমিতির বাকিদের মতোই একজন।
কিন্তু কোন কোন জায়গায় বিতর্ক? সাধারণভাবে, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। বিশেষ করে তৃণমূল যখন জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের শক্তি বাড়াতে চাইছে, সেদিক থেকে এই পদটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাও কেন আপাতত পদটির অবলুপ্তি করতে হল মমতাকে?
কোন কোন জায়গায় বিতর্ক?
মমতার ভাবনার সঙ্গে সংঘাত
সমস্যার শুরু হয় গত মাসেই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, সেই পরিস্থিতিতে (কোভিডের বাড়বাড়ন্ত) যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি দুই মাস বন্ধ রাখতে হবে। সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবার মডেল রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল ঠিকই। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচি যার মধ্যে নির্বাচন প্রসঙ্গের দিকেও প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল, তা পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলে দলের ভাবনার বিপরীতেই হেঁটেছিলেন অভিষেক। তারপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা এবং সেই সঙ্গে কল্যাণকে দলেরই একাংশের কড়া আক্রমণ। সেই সময় মমতা চুপ ছিলেন। আর তৃণমূল সুপ্রিমো চুপ থাকার অর্থ – হয় সম্মতি, বা বিরক্তি। শনিবারের বৈঠকের পর যা দেখা যাচ্ছে, তাতে অতীতের এই ঘটনাগুলিতে মমতার সম্মতি ছিল না বলেই মনে হচ্ছে।
আইপ্যাক ঘিরে অসন্তোষ
অভিষেক ও প্রশান্ত কিশোরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা এর আগেও একাধিকবার ভেসে উঠেছে রাজনীতির অলিন্দে। এমনটাও শোনা যায়, আইপ্যাককে তৃণমূলের দায়িত্বে নিয়ে এসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তৃণমূল সূত্রের খবর, আইপ্যাকের কথা মতোই তৃণমূলের বিস্তারের নীলনকশা তৈরি করছিলেন অভিষেক। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে শক্তি বিস্তারের কৌশল কী হওয়া উচিত – তা ঠিক করে দিচ্ছিল আইপ্যাকই। এখন এমনটাও শোনা যাচ্ছে যে মমতা নাকি চেয়েছিলেন উত্তর প্রদেশের মাটিতে পা রাখতে। কিন্তু গোয়া, ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যগুলিতে যাওয়ার কথা বলেছিল আইপ্যাকই। তার মধ্যে ত্রিপুরা ইতিমধ্যেই ব্যর্থ হয়েছে। গোয়ার নির্বাচনের ফল আসা অবশ্য বাকি রয়েছে। তবে জাতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতা বিস্তারের ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছামতো এগোতে পারছিলেন না মমতা।
পুরভোট ঘিরে সমস্যা আরও জটিল
তারপর চলতি পুরভোটের প্রার্থী তালিকা তৈরি করাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের সঙ্গে আইপ্যাকের সংঘাতের ছবি আরও বেআব্রু হয়। দুটি পৃথক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ায় জেলায় জেলায় চরম বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। দলের তরফে ফিরহাদ হাকিমকে বলতে শোনা যায়, যাঁরা ডিজিটাল প্লাটফর্মের কাজ করে তাঁরাই এই কাজ করেছে। সরাসরি কিছু না বললেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই মত, ফিরহাদের নিশানায় ছিল আইপ্যাক। আবার অনেকে এও মনে করছিলেন, দুই প্রার্থী তালিকার মধ্যে প্রথমটি ছিল অভিষেকের পছন্দের প্রার্থীদের তালিকা। সব মিলিয়ে দলের মধ্যে এক চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল।
কর্মসমিতিতে আরও কোনঠাসা অভিষেক?
সমান্তরাল ক্ষমতা তৈরি হচ্ছিল তৃণমূলের অন্দরে
শনিবার কালীঘাটের বৈঠকে চেয়ার পার্সন ছা়ড়া সব শীর্ষ পদ আপাতত বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্তের আগে পর্যন্ত দলের অন্দরে এক সমান্তরাল ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই বিষয়টি আরও বেশি করে উঠে এসেছিল বিগত বিধানসভা নির্বাচনের সময়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, তৃণমূল যে বিপুল ক্ষমতায় তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসে, তাতে পিকের একটি ম্যাজিক কাজ করেছিল। আর এ ক্ষেত্রে তার কৃতিত্ব অনেকটাই যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে।
তালিকা থেকে বাদ অভিষেক ঘনিষ্ঠরা
মমতার ভাবনার সঙ্গে একটি সংঘাতের জায়গা তৈরি হচ্ছিল বিগত বেশ কিছুদিন ধরে। যেমন এক ব্যক্তি, এক পদ নীতি। সেই নীতির সমর্থন করতে দেখা গিয়েছিল বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়কে। এবার শনিবারের কর্মসমিতির তালিকা থেকে বাদ পড়েছে সৌগতর নাম। একইসঙ্গে বাদ পড়েছে ডেরেক ও’ব্রায়ানের নামও। অভিষেকের সঙ্গে তাঁরও বেশ সুসম্পর্ক রয়েছে। এর পাশাপাশি গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো এবং সুস্মিতা দেবের মতো নেতারা, যাঁদের অভিষেক দলে নিয়ে এসেছিলেন, তাঁরাও বাদ পড়েছেন জাতীয় কর্মসমিতি থেকে।
মমতার ভরসা পুরানো সঙ্গীদের উপরেও
উল্টোদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরানো দিনের সঙ্গী যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরই মূলত জায়গা করে দেওয়া হয়েছে এইবারের তালিকায়। সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে যাঁরা যাঁরা তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন সকলেই তৃণমূলের অনেকটাই পুরানো সৈনিক। এর পাশাপাশি বাংলার বাইরের কোনও নেতাকেও রাখা হয়নি কর্মসমিতিতে। অর্থাৎ, একেবারে মমতার ঘনিষ্ঠ বৃত্তের যাঁরা, যাঁদের উপর মমতা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারেন, দলের কর্মসমিতিতে তাঁদেরও জায়গা দেওয়া হয়েছে।
দলের রাশ মমতার হাতেই
শনিবারের বৈঠক থেকে ঠারেঠোরে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাশ থাকবে তাঁর হাতেই। তৃণমূল সূত্রের খবর, যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র পদাধিকারী, তাই এবার থেকে বহিরাগত কোনও সংস্থা দলের সঙ্গে যুক্ত হলে, তার চুক্তি করা বা যাচাই করা যাবতীয় সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নেবেন। আজ এই বৈঠকে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বহিরাগত কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে আর কারও ওপর কোনও দায়িত্ব দেবেন না। অর্থাৎ এ ব্যাপারেও তিনি নিজের ভাইপোকে একপ্রকার বার্তা দিয়ে রাখলেন আইপ্যাক চুক্তির ইস্যুতে। একইসঙ্গে এটাও বুঝিয়ে দিলেন, দলের অন্দরে ‘লার্জার দ্যান লাইভ’ ইমেজ যদি কারও হাতে থাকে, তবে তা একমাত্র মমতাই।
কালীঘাটের বৈঠক থেকে এটা স্পষ্ট যে অভিষেকের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ আর থাকছে না। এক্ষেত্রে আগামী দিনে এই পদ আবার ফিরিয়ে আনা হবে কিনা, বা অভিষেককে আগামী দিনে কী পদ দেওয়া হবে, সেই সব নিয়েই সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা।
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা