Subrata Mukherjee: তৃণমূলের টিকিটে জিতেও বাম-কংগ্রেসের অপেক্ষায় ছিলেন সুব্রত
Subrata Mukherjee on Left and Congress MLA: "আমার বলতে আপত্তি নেই, সেই ধরনের বিধানসভা আর নেই। মানে, শেখা দরকার বলে লোকে মনে করে... না শেখা কে অন্যায় বলে মনে করে। এই ধরনের বিধানসভা নেই আর।''
কলকাতা: দীপাবলির রাতে নিভল জীবন প্রদীপ। না ফেরার দেশে চলে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে ক্যাবিনেট মন্ত্রী হওয়া এবং পরিষদীয় রাজনীতিতে অর্ধ সেঞ্চুরি পার করা অবিসংবাদী নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। একুশের ভোটে জয়ের পর প্রথমবার বিধানসভায় ঢুকে তাঁর ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। তাঁর বিরোধী আসনে ‘চেনা মুখ’ কংগ্রেস ও বামেদের কোনও মুখ নেই যে এবার। টিভি নাইনের ‘কথাবার্তা’ অনুষ্ঠানে সে কথা জানাতে কুণ্ঠাবোধ করেননি সুব্রতবাবু। বলেছিলেন, সেই পুরনো বিধানসভার জন্য অপেক্ষা করবেন…
পরিষদীয় রাজনীতিতে পঞ্চাশ বছর পূরণের পর টিভি নাইন বাংলায় কথাবার্তা অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সেই সাক্ষাৎকারে সুব্রতবাবু জানিয়েছিলেন একুশের ভোটের পর প্রথম বিধানসভায় যাওয়ার অনুভূতির কথা। তাঁর কথায়, “বিধানসভার অধ্যক্ষ মনে করিয়ে দিয়েছিলেন আমার এই পঞ্চাশ বছরের কথা। তখন ভেবেছিলাম, একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। তার পর নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে পড়ি।”
তবে বিধানসভায় কংগ্রেস ও সিপিএমের কোনও প্রতিনিধি না থাকাও ‘মিস’ করছিলেন তিনি। সে কথা জানাতেও দ্বিধা করেননি সুব্রতবাবু। তাঁর কথায়, “এবার দুটো ট্র্যাডিশনাল পার্টি বিধানসভায় আসেনি। যার ফলে আমার চেনা মুখ এবং অ্যাসেম্বলি-তে চেনা মানুষদের এত অভাববোধ করছি যে আমাকে একটু অপেক্ষা করতেই হবে।”
তিনি যোগ করেছিলেন, “অনেকে যাঁরা আমাদের সঙ্গে পার্টি করতেন না, রাজনৈতিক বিদগ্ধ বলতে যা বোঝায়, তেমন অনেক মানুষ সিপিএম আর কংগ্রেসে অনেক ছিলেন।” পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে মন্ত্রী হওয়া সুব্রতবাবুর কথায়, “যখন দ্বিতীয়বার অ্যাসেম্বলিতে আসি, মন্ত্রী হই, তখ ন ১৩ টা ডিপার্টমেন্টের স্টেট মিনিস্টার ছিলাম। আমাকে সিদ্ধার্থবাবু (সিদ্ধার্থ শংকর রায়) শেখাবার জন্য আমাকে পুলিশ বাজেট দিতেন, যাতে আমি শিখতে পারি। তখন এও বুঝেছিলাম বিরোধী দলেও কত যোগ্য লোক থাকেন, কত কিছু শেখা যায়।”
কেমন ছিল সেই শেখা? সুব্রতবাবু স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়লেন। সুবোধ ব্যানার্জি বলে এসইউসিআই-এ একজন মানুষ ছিলেন। আমাকে নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছিলেন উনি। আমি কিছুতেই বাগে আনতে পারছি না। তখন উনি নিজেই আমাকে একটা বই দিলেন। পাতাটা দেখিয়ে বললেন, এটাই পড়ে দাও। দেখবে সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।” এমনই ছিল তাঁর শেখার পাঠ। ‘কথাবার্তা’ অনুষ্ঠানে একাধিকবার তাই বাম ও কংগ্রেসের তরফে এবার কোনও প্রতিনিধি বিধানসভায় না থাকার অভাববোধের কথা জানাচ্ছিলেন সুব্রতবাবু।
“আমার বলতে আপত্তি নেই, সেই ধরনের বিধানসভা আর নেই। মানে, শেখা দরকার বলে লোকে মনে করে… না শেখা কে অন্যায় বলে মনে করে। এই ধরনের বিধানসভা নেই আর। ফলে আমাকে অপেক্ষা করতে হবে, আমার হারিয়ে যাওয়া বিধানসভাটা আর ফেরে কিনা…।” তিনি ফের তোলেন বাম ও কংগ্রেস প্রসঙ্গ। তাঁর সংযুক্তি, “বিধানসভায় বাম ও কংগ্রেস না থাকাটা আসলে বিধানসভার কালচারটাকে টিকিয়ে রাখার পক্ষে কষ্টের হয়ে যাবে।” বলেন, “আমারও ভাবতে খারাপ লাগে, ভাবলে কষ্ট হয়। বিধানসভায় এখন অনেকে এমন জামাকাপড় পরে আসেন, যেগুলো বিধানসভায় পরে আসা যায় না।” বিদায় নিলেন ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত একমাত্র বিধানসভার প্রতিনিধি সুব্রত বন্দ্যোপাধ্য়ায়।