‘SSKM-র গাফিলতির জন্যই কোলের মেয়েটাকে হারাতে হল’, বুক ফাটা কান্না নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন অনুশ্রীর মা-বাবা
SSKM: শীর্ষ আদালতের নির্দেশে সারা দেশে ১২টি উৎকর্ষ কেন্দ্রের (center of excellence) মাধ্যমে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য মাথাপিছু ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। পূর্ব ভারতে বিরল রোগের চিকিৎসার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান এসএসকেএম।

কলকাতা: সময়ে ওষুধ না পেয়ে মৃত্যু বিরল রোগে আক্রান্ত তিন বছরের শিশুকন্যার। আট মাস অপেক্ষার পরও মেলেনি মহার্ঘ ওষুধ। অভিযোগ, তারই জেরে গত ৩০ মার্চ মৃত্যু হয় গাউচার ডিজিজে আক্রান্ত ব্যারাকপুরের বাসিন্দা অনুশ্রী ধরের (৩)। তিন বছরের শিশুকন্যার মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে রাজ্যে বিরল রোগ নীতি প্রণয়ন।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশে সারা দেশে ১২টি উৎকর্ষ কেন্দ্রের (center of excellence) মাধ্যমে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য মাথাপিছু ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। পূর্ব ভারতে বিরল রোগের চিকিৎসার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান এসএসকেএম। গত বছর সেপ্টেম্বরে এসএসকেএমের মেডিক্যাল বোর্ডের দ্বারস্থ হন অনুশ্রীর বাবা বিপ্লব ধর, মা শিখা রাণি ধর। পরিবারের সদস্যরাই জানাচ্ছেন, গত ৩ মার্চ থেকে ন’দিন এসএসকেএমের অ্যানেক্স পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল অনুশ্রী।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, চিকিৎসার জন্য এনজাইম রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি না দিয়েই অনুশ্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, ওষুধ এলে ফোন করে জানানো হবে। সেই ফোন আসার আগেই মেয়েকে হারালেন বাবা-মা। শোকের ছায়া গোটা পরিবারে। অনুশ্রীর মা-বাবা স্পষ্টতই আগুল তুলছেন এসএসকেএমের দিকেই। সাফ বলছেন, ‘এসএসকেএমের গাফিলতির জন্যই মেয়েকে হারাতে হল’। এখানেই শেষ নয়, আক্ষেপের সঙ্গেই সন্তানহারা দম্পতি বলছেন, ‘চিকিৎসার খরচ সাধ্যের বাইরে হওয়ায় এসএসকেএমের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমরা। আট মাস অপেক্ষা করেও ওষুধ পেল না মেয়ে। সময়ে ওষুধ পেলে মেয়ে আজ আমার কোলে থাকত।’
গোটা ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথাও বলছেন অনুশ্রীর মা-বাবা। একই অবস্থা যেন আর কারও না হয়। ওষুধের অভাবে আর কারও বাবা-মায়ের কোল যেন খালি না হয়। মৃত মেয়ের ছবি কোলে নিয়ে বুকফাটা আর্তিও করছেন অনুশ্রীর মা মা শিখা রানি ধর। শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন অনুশ্রীর বাবা বিপ্লব ধর।
অনুশ্রীদের বাঁচাতে বিরল রোগ নীতি প্রণয়নে আন্তরিক হওয়ার আর্জি করছেন চিকিৎসকরাও। মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র বলছেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। সার্বিকভাবে মানুষকে যদি মানুষ হিসাবে না দেখে ভোটার হিসাবে দেখি তাহলেই এই বিপত্তিটা হবে। মানুষ্যত্বের দিক থেকে দেখুন, এটাই সরকারের কাছে মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের আবেদন।” বিরল রোগ নীতি প্রণয়নের কো-অর্ডিনেটর দীপাঞ্জনা দত্ত বলছেন, “গাউচার ডিজিজ একটা জিনগত সমস্যা। ওষুধ পেলে বাচ্চারা বেঁচে যায়। অনুশ্রীর জন্যও আমরা ওষুধের অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ওষুধ না পেয়ে ও চলে গেল।” ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদ্ম শিবিরের চিকিৎসক নেতা শারদ্বত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, “এই রাজ্য সরকার তো কাজকর্ম প্রায় ভুলেই গিয়েছে। ভাত ঘুমেই ব্যস্ত। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরল রোগের জন্য ফান্ড রেডি। রাজ্য সরকারের চিঠি চালাচালি করতেই গিয়েই প্রাণটা চলে গেল বাচ্চাটার।”





