Primary Recruitment Case: ব্ল্যাক বোর্ডের প্রয়োজনই পড়েনি ইন্টারভিউতে! কোন পথে ৩৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের?

Primary Recruitment Case: মামলা হওয়ার প্রায় ৮ মাস পরই এই নজিরবিহীন নির্দেশ। কী এমন অভিযোগ পেয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?

Primary Recruitment Case: ব্ল্যাক বোর্ডের প্রয়োজনই পড়েনি ইন্টারভিউতে! কোন পথে ৩৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের?
হাইকোর্টে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 13, 2023 | 1:14 AM

কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আগেও চাকরি গিয়েছে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার। তবে একসঙ্গে ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল, কার্যত নজিরবিহীন ঘটনা। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক দুর্নীতির নিদর্শন সামনে এসেছে আগে। ওএমআর শিটে প্রাপ্ত নম্বর বেমালুম বদলে গিয়েছে মেধাতালিকায়। শূন্য পাওয়া চাকরি প্রার্থীও কোনও এক যাদুবলে পেয়েছেন নিয়োগপত্র। কিন্তু এই ৩৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগে কী এমন ঘটেছিল? ২০১৬ সালের পর থেকে প্রায় ৬ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু মামলা হল ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে। প্রায় ৮ মাস পরই এই নজিরবিহীন নির্দেশ। কী এমন অভিযোগ পেয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?

মামলার শুরু থেকে শেষ- একনজরে

  1. ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষা নিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। ১ লক্ষ ২৫ হাজার প্রার্থী পাশ করেন। এরপর হয় ইন্টারভিউ। ২০১৬ সালে সেই টেট অনুযায়ী নিয়োগ সম্পন্ন হয়। ইন্টারভিউতে পাশ করার পর ৪২ হাজার ৫০০ জনের নিয়োগ হয়।
  2. ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মামলা করেন আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। অভিযোগ ছিল, ওই নিয়োগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট না নিয়েই নিয়োগ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।
  3. নিয়ম অনুযায়ী, অ্যাপ্টিটিউট টেস্টের জন্য ৫ নম্বর ও ইন্টারভিউয়ের জন্য ৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। ওই প্রথম ৫ নম্বর নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের সময় অনেকেই জানান কোনও অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট হয়নি। তাহলে কীভাবে হল নম্বরের হিসেব?
  4. বলে রাখা ভাল, শিক্ষক হিসেবে চাকরি প্রার্থী শিশুদের আদৌ পড়াতে পারবেন কি না, সেই পরীক্ষার নামই অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট। সাধারণত ব্ল্যাক বোর্ডে পড়িয়ে দেখাতে হয় চাকরি প্রার্থীদের।
  5. জানুয়ারি ২০২৩- প্রিয়াঙ্কা নস্কর সহ কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীকে কাঠগড়ায় তুলে সাক্ষ্যগ্রহণ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, বেশির ভাগ জেলায় অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়াই হয়নি। ব্ল্যাক বোর্ড তো দূরের কথা, অনেক জায়গায় শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজনও নাকি পড়েনি! বারান্দাতেও ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ সামনে আসেন।
  6. অভিযোগ শুনে নড়েচড়ে বসেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট না নেওয়া হয়ে থাকলে, সেই বিভাগের নম্বর প্রদান কী ভাবে করা হল? জানতে তৎপর হয় আদালত।
  7. ফেব্রুয়ারি ২০২৩- চাকরি প্রার্থী তো হল, এবার পালা শিক্ষকদের। বিচারপতি নির্দেশ দিলেন, সেই সব শিক্ষকদের হাজির করতে হবে আদালতে, যাঁরা ওই সময় ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন।
  8. যাতায়াতের খরচও করতে হয়নি ওই শিক্ষকদের। সে ব্যবস্থাও করা হয়েছিল আদালতের নির্দেশে। প্রথম পর্যায়েই, হুগলি, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ ইন্টারভিউ নেওয়া শিক্ষকদের তলব করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নির্দেশ ছিল, যাতায়াতের খরচ দেবে পর্ষদ। কাছের জেলা হলে ৫০০ টাকা আর দূরের জেলা হলে ২০০০ টাকা।
  9. বিচারপতির নির্দেশ মতো হাজিরও হয়েছিলেন শিক্ষকেরা। হাইকোর্টের সার্ধশতবার্ষিকী ভবনের ৯ তলায় রুদ্ধদ্বার কক্ষে একে একে তাঁদের ডাকেন বিচারপতি।
  10. ‘‘আপনাদের কোনও ভয় নেই। যা সত্যি তা আমায় জানাবেন। বিচারকক্ষের বাইরে এ নিয়ে কোনও কথা বলবেন না।’’ এই ভাষায় অভয় দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আর সেখানেই অনেক শিক্ষক স্বীকার করে নেন, কোনও অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি। কেউ কেউ নাকি জানতেনই না, কীভাবে নেওয়া হয় সেই পরীক্ষা।
  11. বিচারপতি উল্লেখ করেছিলেন, কোথাও কোথাও দেড় থেকে ২ মিনিটের মধ্যেই পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ নেওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল।
  12. এপ্রিল ২০২৩- এই মামলায় স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে মানিক ভট্টাচার্যের নাম, যিনি নিয়োগের সময় পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। এপ্রিল মাসে এই মামলায় তাই তলব করা হয়েছিল জেলবন্দি মানিককে। একবেলার মধ্যেই হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জেল থেকে আদালত কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। তবে তিনি তেমন কোনও সদুত্তর দেননি।
  13. উত্তর আসুক না আসুক, এটুকু স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, বেনিয়ম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এমন অভিযোগও ছিল যে, অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট দেওয়া চাকরি প্রার্থী জায়গা পাননি তালিকায়, অথচ চাকরি পেয়েছেন অ্যাপ্টিটিউড টেস্টে শূন্য পাওয়া প্রার্থী।
  14. সেই মামলাতেই শুক্রবার (১২ মে) ৩৬ হাজার প্রার্থীর চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। যাঁরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তাঁদের চাকরি বহাল থাকছে। এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে মামলাকারী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি।