Subrata Mukherjee: ‘কলকাতার মেয়র হওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল…’, রেষারেষিতে রাখঢাক ছিল না, স্মৃতি-সফর শোভনদেবের

Sovandeb Chattopadhyay: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আচমকাই সুব্রতবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এসএসকেএম সূত্রে খবর, স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন মন্ত্রী। কিছুদিন আগেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট বসানো হয়েছিল

Subrata Mukherjee: 'কলকাতার মেয়র হওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল...', রেষারেষিতে রাখঢাক ছিল না, স্মৃতি-সফর শোভনদেবের
চলে গেলেন ৫০ বছরের 'বন্ধু', নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 05, 2021 | 12:34 PM

কলকাতা: বঙ্গ রাজনীতির ময়দানে তাঁরা সতীর্থ ও সমসাময়িক। একসঙ্গে সংগঠন করেছেন। রেষারেষি ছিল। ভাবও। সত্তরের দশকের ‘দামাল’ ছেলে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে কেবল শূন্যতাই অনুভব করছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বন্ধুর প্রয়াণ ও স্মৃতির ভিড় এখন প্রবীণ নেতার চোখে।  টুইট করে জানিয়েছেন শোকবার্তা। স্পষ্টই বলেছেন, “আমাদের ঝগড়া হত, আবার ভাব হত”।

শুক্রবার সকালে টুইট করে খড়দহের তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব লেখেন, “জানিনা এই দুঃখ কোথায় রাখব! কত কত স্মৃতির ভিড়! দলের একমাত্র বন্ধু যে আমায় ‘তুই’ বলে সম্বোধন করত। ভাল থাকিস বন্ধু। শান্তিতে থাকিস।” পরে শোভনদেব বলেন, “সুব্রত আমার চেয়ে বয়সে ২ বছরের ছোট ছিল। আমার স্ত্রী সুপ্রিয়ার তরফেই ওর সঙ্গে আমার পরিচয়। আমাদের রেষারেষিও ছিল। ভাবও। জমিয়ে রাখতে পারত।”

স্মৃ্তিচরণ করতে করতে শোভনদেব বলেন, ” সুব্রত অদ্ভূত মানুষ ছিল। আমি আর ও দুজনেই দীর্ঘ অনেকবছর আইএনটিইউসির নেতা ছিলাম। শ্রমিক নেতা হওয়ার জন্য বালিগঞ্জে ওর সঙ্গে  থেকে থেকে প্রচুর বস্তিতে গিয় কাজ করতাম। ও যখন বালিগঞ্জে জিতল তারপর মন্ত্রী হল, তখনও ভাল বন্ধু। পরে যখন কলকাতার মেয়র হওয়ার কথা হল, তখন ঝামেলা হয়েছিল। কলকাতার মেয়র হওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। যদিও সেসব আমি আর মনে রাখিনি।” সেই রেষারেষি নাকি ওখানেই থামেনি। ৫০ বছরের বন্ধুত্বে বহুবার এই রেষারেষি হয়েছে।

সেই প্রসঙ্গেই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, “একবার আমি সারাভারতে পৌরকর্মচারীদের সেক্রেটারি হই। সুব্রত জানত। জানার পরেই ও দিল্লি গিয়ে আমার নামটা কাটিয়ে দিয়ে আসে। তারপর একবার আইএনটিইউসির কমিটির থেকে আমার নামও কাটিয়ে দিয়েছিল। এদিকে আমি তখন ওরই কথায় রেজোলিউশন লিখছি। এরকম ৫০ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের। রেষারেষি, ভাব-ভালবাসা সব নিয়ে…”

শুক্রবার, নিজ বন্ধুর ‘মরদেহ’ দেখতে পারেননি শোভনদেব। শেষ দেখায় এসে রীতিমতো শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন তিনি। চলে গেলেন এতবছরের বন্ধু। কার সঙ্গে গল্প করবেন এরপর? কেই বা মজা করে আড্ডা জমাবেন? আচমকা পুরী যাওয়ার পরিকল্পনা করবেনই বা কে? প্রিয়রঞ্জনের ‘ভাবশিষ্য’-দের আর কি আড্ডা হবে? সে আড্ডা এখন না হওয়ার পারে, চোখে জল প্রবীণ নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আচমকাই সুব্রতবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এসএসকেএম সূত্রে খবর, স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন মন্ত্রী। কিছুদিন আগেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট বসানো হয়েছিল। কার্ডিওলজি বিভাগে আইসিইইতে ভর্তি তিনি। সেখানেই স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে সুব্রত মুখোপাধ্যায় আক্রান্ত হন। সেই স্টেন্টের জায়গায় রক্ত জমা বেঁধে যায়। ফলে সেই স্টেন্ট বের করে নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই। এরপরই দ্রুত বিশেষজ্ঞদের ডেকে পাঠানো হয়। তাঁরা সবরকম চেষ্টা করছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার। অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাপোর্টে তাঁকে রাখার চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

৭৫ বছর বয়সী মন্ত্রী সম্প্রতি শ্বাসের কষ্ট নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর উচ্চ রক্তচাপ ছিল। ডায়াবেটিসের পাশাপাশি সিওপিডির সমস্যা ছিল তাঁর। ১ নভেম্বর দু’টি স্টেন্ট বসানো হয়েছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শরীরে। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছিলেন মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সকালেই তাঁকে কার্ডিও ওয়ার্ড থেকে উডবার্নে নিয়ে যাওয়া হয়। আচমকাই সন্ধ্যায় ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অবশেষে রাত  ৯টা বেজে ২২ মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর।

আরও পড়ুন: Subrata Mukherjee: ‘গুরু’ প্রিয়র হাত থেকে নিয়েছিলেন ধুতি ও পাঞ্জাবী, জীবনভর ‘সু’-ব্রতই পালন শিষ্যের