জবাবে অসঙ্গতি? ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিষেককে ফের ডাকল ইডি

গত সোমবারই অভিষেক হাজিরা দেন দিল্লিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দফতরে। সে দিন টানা ৯ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে।

জবাবে অসঙ্গতি? ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিষেককে ফের ডাকল ইডি
সোমবার ইডি দফতরে অভিষেক (ছবি- এএনআই)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 08, 2021 | 12:06 PM

কলকাতা: দু’দিন আগেই দিল্লিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অফিসে হাজিরা দিয়েছিলেন সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রশ্ন করতেই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। টানা ৯ ঘণ্টা পর ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে অভিষেক বলেছিলেন রাজনৈতিক পথে লড়তে না পেরেই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এই ধরনের কাজ করছে গেরুয়া শিবির। এবার সেই জিজ্ঞাসাবাদের ৪৮ ঘণ্টা না পেরতেই ফের তলব করা হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আজই তাঁকে ইডির তরফে নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, কয়লা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রশ্নের সদুত্তর পাননি তদন্তকারী আধিকারিকেরা। ৯ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে কয়লা-কাণ্ড নিয়ে তাঁকে একগুচ্ছ প্রশ্ন করা হয়। সেই প্রশ্নের তালিকায় কয়লা-কাণ্ডে অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র থেকে অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে থাকা অ্যাকাউন্ট, কিছুই বাদ দেওয়া হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের আগে অভিষেক জানিয়েছিলেন তিনি তিনি তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। আর জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি দাবি করেছিলেন, সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সূত্রের খবর, অভিষেকের জবাবে সন্তুষ্ট নয় ইডি। তাই ফের তলব করে প্রশ্ন করতে চান আধিকারিকেরা। তৃণমূল সাংসদের অনেক জবাবেই অসঙ্গতি ছিল বলে দাবি ইডি-র।

অভিষেক-রুজিরাকে তলব:

শুধু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নয় তাঁর স্ত্রী রুজিরাকেও তলব করা হয়েছিল। গত  ১ সেপ্টেম্বর অভিষেক-পত্নী রুজিরা নারুলাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে হাজিরা দেননি রুজিরা। কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন রুজিরা। কিন্তু অভিষেক দিল্লি যান।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে কয়লা-কাণ্ডে খোদ অভিষেকের বাসভবনে গিয়ে তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন সিবিআই-এর গোয়েন্দারা। জিজ্ঞাসাবাদ করার আগের মুহূর্তে তাঁর অভিষেক-জায়ার সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছে গিয়েছিলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নারদকাণ্ডে তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারির পর আবার নিজাম প্যালেসে তিনি ধরনা দেন বলেও অভিযোগ। ফলে উভয় ক্ষেত্রেই সিবিআই মনে করছে, প্রভাবশালী হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী নিজের প্রভাব খাটাচ্ছেন। ঠিক এই কারণেই অভিষেক ও তাঁর স্ত্রী-কে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

কী প্রশ্ন করা হয়েছিল অভিষেককে?

গত সোমবার দিল্লিতে জামনগরে ইডি অফিসে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল ১১ টায় অফিসে প্রবেশ করেন তিনি। রাত ৮ টা নাগাদ বেরোন সেখান থেকে। প্রশ্ন তালিকায় ছিল একাধিক বিষয়।

১. বিনয় মিশ্র: বিনয় মিশ্রের সঙ্গে অভিষেকের ঘনিষ্ঠতার কথা জানা যায়। আর কয়লা কেলেঙ্কারির অন্যতম অভিযুক্ত সেই বিনয় মিশ্র এখনও পলাতক। ইডি সূত্রে খবর, সোমবার অভিষেককে সরাসরি প্রশ্ন করা হয় বিনয় মিশ্র এখন কোথায়? বিনয় মিশ্রের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক কী ছিল অভিষেকের? বিনয় মিশ্র শর্ত সাপেক্ষে ভারতে ফিরে আসতে চান কি না সেই প্রশ্নও করা হয় অভিষেককে।

২. বিদেশি অ্যাকাউন্ট: বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়। থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানতে চান আধিকারিকরা। বাঁকুড়া থানার আইসি অশোক মিশ্র সম্পর্কিত প্রশ্ন করা হয়। এ ছাড়া অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্যালিকা মানেকা গম্ভীরের অ্যাকাউন্ট এবং থাইল্যান্ডের লন্ডন (বার্কলেজ ব্যাংক) অ্যাকাউন্ট সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। অনুপ মাঝি ওরফে লালার হিসেব রক্ষক নীরজ সি- এর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নথি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে বলেও ইডি সূত্রে খবর। দেশে এবং বিদেশে বিদ্যমান অভিষেকের সম্পত্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি।

৩. লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস: ইডির প্রশ্নে উঠে এসেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর নাম। এই সংস্থার কিছু আয় ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়েছে ইডি। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস গ্রুপের মালিক  হলেন অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লতা বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা এবং মা। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে যে ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে’ স্থানীয় দুর্বৃত্তদের (মস্তান) কাছ থেকে নিরাপত্তার টাকা আসার হিসেবে এসেছে। সেই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় অভিষেকের কাছে। আরও পড়ুন: ফের পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তলব করল সিবিআই