করোনাকালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হওয়াটাই কি ওদের অপরাধ? মাত্রা ছাড়া বিদ্রূপে পড়ুয়াদের মনোবল ভাঙছে না তো!

করোনা পরিস্থিতিতে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়নি। ১০০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছে, ৯০ শতাংশ প্রথম বিভাগেই পাশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু ব্যাপক ট্রোল

করোনাকালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হওয়াটাই কি ওদের অপরাধ? মাত্রা ছাড়া বিদ্রূপে পড়ুয়াদের মনোবল ভাঙছে না তো!
অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 22, 2021 | 12:28 PM

কলকাতা: ‘আমাদের সময় সব কিছুই ভাল ছিল’, এমন কথা বোধ হয় প্রত্যেক প্রজন্মই শুনে আসছে বড়দের কাছ থেকে। তবে মাধ্যমিকের ফলাফল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ধরনের চর্চা শুরু হয়েছে, তাতে হয় কোথাও সীমারেখাপার করে যাচ্ছে। এমনকি রাজনৈতিক নেতা, যাদের ফলোয়ারের সংখ্যা বেশি, তাঁদের ওয়ালেও ঘোরাফেরা কর‍ছে এই ধরনের ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট। এ ভাবে কোথাও ছাত্রছাত্রীদের ছোট করা হচ্ছে না তো? পরিবর্তিত পরিস্থিতির পরীক্ষা নিয়ে এই ধরনের তামাশা কেন?

করোনা পরিস্থিতিতে এ বার হয়নি মাধ্যমিক পরীক্ষা। এক বিশেষ নিয়মে নম্বর দিয়ে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীই এ বার পাশ নম্বর পেয়েছেন, অর্থাৎ পাশের হার ১০০ শতাংশ। পরীক্ষায় ৭৯ জন প্রথম হয়েছেন। আর সেই ফল প্রকাশের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েচে ট্রোল। সাধারণ মানুষ তো বটেই, রাজনীতির নেতাদের পোস্টেও এই ফলাফল নিয়ে আলগোছে ঠাট্টার ইঙ্গিত। সেই তালিকায় রয়েছেন বামফ্রন্টের যুব নেতা শতরূপ ঘোষ। চোখা ভাষণে শাসককে বিঁধতে চোস্ত তিনি। তাঁর ফেসবুকেও ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট। শতরূপ অবশ্য এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তরুণ নেতার এই মন্তব্য নিয়ে যখন শোরগোল, দলের প্রবীণ নেতা সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘ঠিক বিদ্রূপ নয়, কিছু বাস্তব তুলে ধরা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনটা করার দরকার নেই। ছাত্রছাত্রীদের কী দোষ? এ বছরের পাশ করা পড়ুয়াদের ভিন্ন চোখে দেখা হবে কেন?’

যে প্রজন্ম এই আক্রমণের শিকার, তারা নেটদুনিয়ার উপর খুবই নির্ভরশীল। সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনা বা সমালোচনা তাদের ওপর অসম্ভব প্রভাব ফেলে। নেটমাধ্যমে সমালোচনার জেরে আত্মহত্যার ঘটনাও বিরল নয়। আর এ ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের কি দোষ? ওদের অপরাধ, ওরা করোনাকালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। ওদের অপরাধ, দীর্ঘ অপেক্ষা, টালবাহানা পেরিয়ে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ওদের অপরাধ, ফলাফলে ১০০ শতাংশ পাশ করেছে কিংবা ৯০ শতাংশ পেয়েছে ফার্স্ট ডিভিশন। তার কোনোটার জন্যই দায়ী নয় পড়ুয়ারা।

করোনার দাপটে প্রায় দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল স্কুল। বহু দিনের আলোচনা-বিতর্ক পেরিয়ে সরকারই সিদ্ধান্ত নেয়, পুরনো পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে ফলাফল। সেই মতোই গত মঙ্গলবার ফল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিনা পরীক্ষায় ভাল রেজাল্টের পুরস্কার চায়নি অনেক পড়ুয়াই। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে তাদের। এই অযাচিত সাফল্যে কতটা উপকার হবে ওদের, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাই ট্রোলের প্রতিবাদও করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ারই একাংশ।

প্রথম বিভাগেও প্রতিবারই পাশ করে অন্তত ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষা হলে ভাল ছাত্রছাত্রীরা এ বছরও তেমনটাই ফল করতে পারত, বরং স্কুলের পরীক্ষার তুলনায় অন্তত ১৫-২০ শতাংশ নম্বরও বাড়ত যাদের। সকলকে গড়ে ভাল নম্বর দেওয়ায় তাদের উল্টে ক্ষতিই তো হল। এক পড়ুয়ার কথায়,’আমাদের কী দোষ? গোটা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি চলছে। এতে আমাদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। নম্বরগুলো খুব একটা ফেলনা নয়। নবম শ্রেনিতে তো সবাইকে পড়তে হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই তো নম্বর দেওয়া হয়েছে।’

তবে সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে সে সব পড়ুয়ার গায়ে সেঁটে গিয়েছে করোনাকালের পরীক্ষার্থীর তকমা। বিনা পরীক্ষায় এই ফলাফল কী ভাবে দেখবে আগামী জীবন? অজানা তা-ও। তার ওপরে উপহাসের নিষ্ঠুরতার বোঝা। প্রশ্ন একটাই, বড়দের কাছে এমন রুচিবোধই কি প্রাপ্য ছিল ছোটদের? আরও পড়ুন: আজ উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ, রেজাল্ট দেখা যাবে এই ওয়েবসাইটগুলিতে…