BJP on Bagtui Case: আইনশৃঙ্খলার হাতিয়ারে শান বিজেপির, আনিস-কান্ডে পারেনি, বগটুইয়ে মাটি কামড়ে সুকান্ত-শুভেন্দুরা
BJP: দিল্লি থেকে পাঁচ সদস্যর কমিটি করে দিয়েছে। নেতারা আদালতে, বিধানসভায় বেশ সোচ্চার। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বগটুইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির।
কলকাতা: বিকল্প শক্তি হিসাবে উঠে আসতে গেলে গণ আন্দোলনে ঝাঁপানোটা ভীষণভাবে দরকার। না হলে রাজ্যের একক বিরোধী শক্তি হয়েও খুব একটা হালে পানি পাওয়া যায় না। বিশেষ করে বাংলার রাজনীতিতে (Bengal Politics) ময়দানে নেমে না লড়লে, অস্তিত্ব টেকানো খুবই চ্যালেঞ্জিং। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, সম্প্রতি হাওড়ার ছাত্রনেতা আনিস খানের (Anis Khan Death) মৃত্যুতে যেভাবে বামেরা পথে নেমে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছে, বিজেপি (BJP) সেখানে অনেকটাই ম্লান। বিরোধী হয়েও তাদের কন্ঠের ঝাঁঝ পাওয়া যায়নি। টুকটাক সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা। এর বাইরে বিশেষ কোনও ভূমিকা ছিল না দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারদের। তবে বীরভূমের বগটুইয়ের ঘটনায় কিন্তু বেশ ‘লড়াকু’ পদ্মশিবির। দিল্লি থেকে পাঁচ সদস্যর কমিটি করে দিয়েছে। নেতারা আদালতে, বিধানসভায় বেশ সোচ্চার। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বগটুইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির। এই ইস্যুতে বেশ কৌশলী তারা।
প্রথমে খানিকটা হোঁচট খেতে হয়েছিল বিজেপিকে। বুধবার রামপুরহাটের বগটুইয়ে যাওয়ার পথে বর্ধমানের শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা-কর্মীদের ল্যাংচা খাওয়ার ঘটনা ঘিরে তৃণমূল এক হাত নেয়। সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। মুহূর্তে তা ভাইরাল হয়ে যায়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “ল্যাংচা খেয়ে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে ওরা বীরভূমে গিয়েছে।”
এই ল্যাংচা-পর্ব যে বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। না হলে শুভেন্দু অধিকারী কিংবা সুকান্ত মজুমদারদের কি বলতে হয়, অত দূরের পথে খিদে-তৃষ্ণা পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়! বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য ছিল, “এতদূর থেকে যাচ্ছে মানুষ। এতগুলো মানুষ যাচ্ছে, তারা খাওয়াদাওয়া করবে না?” যদিও বিকেলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভার্চুয়াল বক্তব্যের পর সে অস্বস্তি পুরোটাই কেটে যায়। বুধবার শহিদ দিবসের ভাষণে বগটুইয়ের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চাপ বাড়ান রাজ্যের উপর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য ছিল, “এই জঘন্য অপরাধ যারা করেছে, তাদের মদতদাতাদের পশ্চিমবঙ্গবাসী যেন ক্ষমা না করেন।”
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ফের অক্সিজেন জোগায় গেরুয়া শিবিরে। বুধবারই শুভেন্দু অধিকারী তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শুভেন্দু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ফিনাইল, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে নিজের মুখ পরিষ্কার করুন। সাত দিনে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।” রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, বগটুই ‘গণহত্যা’কে রাজ্যের বাকি খুনের ঘটনার সঙ্গেই জুড়ে দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা। সে কারণেই আটজন নয়, এক সপ্তাহে ২৬ জনের খুনের প্রসঙ্গ তুলছেন শুভেন্দু অধিকারী এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তোপ দেগেছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উত্তরপ্রদেশে দাপটের সঙ্গে জিতে ফিরেছে বিজেপি। বিজেপির হিসাব, সে রাজ্যে মুসলিম মহিলাদের ভোট পেয়েছে তারা। বিজেপির দাবি, উত্তর প্রদেশে নারীদের নিরাপত্তায় কোনও আপোস করেনি দল। গুণ্ডাদমনে নিরপেক্ষতা দেখিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ। আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে সংখ্যালঘু ভোটও পেয়েছে বিজেপি। বঙ্গ বিজেপিও সেই কৌশলেই ভরসা রাখছে। আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নকে হাতিয়ার করেই তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ধস নামানো যে সম্ভব, বিশ্বাস করছে তারা। তাই ল্যাংচা অস্বস্তি কাটিয়ে পাল্টা তোরণ বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। বগটুই যাওয়ার পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া তোরণ নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে বলতে শোনা গিয়েছে, “এই পরিস্থিতিতেও উনি নিজেকে বাংলার গর্ব প্রমাণ করতে ব্যস্ত।”
রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, ইতিমধ্যেই রামপুরহাটের প্রান্তিক গ্রাম বগটুই বঙ্গ রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বাম-কংগ্রেস-বিজেপি সকলেরই নজর এ গ্রামে। সকলেই নিজেদের মতো করে হাতিয়ার করছে এই গ্রামকে। বিশেষ করে বিরোধী রাজনীতির রাশ হাতছাড়া করতে চায় না গেরুয়া পার্টি। তাই দিল্লি থেকে প্রতিনিধিরা ছুটে আসছেন। রাজ্য বিধানসভায় পোড়া লাশের ছবি দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারীরা।
আরও পড়ুন: Anarul Arrested on Bagtui Massacre: কে আনারুল হোসেন? কেন তড়িঘড়ি গ্রেফতার করালেন মমতা?