মার্চেই কলকাতা পুরসভায় ভোট চাইছে রাজ্য সরকার
কলকাতা পুরসভার ভোট কবে হবে? গত সপ্তাহেই রাজ্যের কাছে জবাব তলব করে এমনটা জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
কলকাতা: কলকাতা পুরসভার (KMC Polls) ভোট কবে হবে? গত সপ্তাহেই রাজ্যের কাছে জবাব তলব করে এমনটা জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। এদিন রাজ্যের পক্ষ থেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে (Election Commission) জানিয়ে দেওয়া হল, সরকার (West Bengal State Govt) চায় কলকাতা পুরভোট হোক। ভোটার তালিকা প্রকাশের পর দেড় মাস বাদে ভোট করা হোক, সেটাই চাইছে রাজ্য সরকার। মার্চ মাসে ভোট করার প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য সরকার। আগামিকাল, বুধবার সুপ্রিম কোর্টে এই হলফনামা জমা দেওয়া হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুরভোট প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এদিন জানিয়েছেন, ‘রাজ্য সরকার মার্চে ভোট চায়। সংবাদে দেখছি। দলগত ভাবে আমরা তৈরি। আমরা সারাবছর কাজ করি। আমরা প্রস্তুত।’ অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের চাপে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন করানোর কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, যদি প্রশাসক দিয়ে পুরসভা চালাতে হয়, তা হলে কোনও সরকারি আধিকারিককেই সেই পদে বসাতে হবে। না হলে নির্বাচন করাতে হবে। তার প্রেক্ষিতেই রাজ্য সরকার এখন এই কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে। বিজেপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদৌ নির্বাচন করাবেন কি না, তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। কারণ নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে আড়াআড়ি বিভাজন রয়েছে। তৃণমূলের অধিকাংশ কাউন্সিলর নির্বাচন চাইছেন না। নির্বাচন হলে তাঁরা ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন। তাই আবার বলছি, রাজ্য সরকার আদৌ নির্বাচনে যাবে কি না, সন্দেহ রয়েছে। যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন নির্বাচন করিয়ে পর পর দুটো ভরাডুবির মুখোমুখি দাঁড়াতে তৈরি থাকেন, তা হলে আমাদের কী অসুবিধা? আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।”
তবে পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘আমরা কোনও মাসের কথা বলেনি। ভোটার লিস্ট বের হলে নির্বাচন কমিশন যখন চাইবে তখন ভোট করে দেব। ভোটে কত সময় লাগা উচিত বলা মুশকিল। নির্বাচন কমিশন যখন বলবে তখন ভোট করব।’
অন্যদিকে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘বহু পুরসভা আছে প্রায় দু’বছর হয়ে গেল রাজ্য সরকার ভোট করেনি। কোভিড সংক্রমণ তখন ছিল না। রাজ্য সরকার দোলাচালে আছে, ভোট করতে ভয় পাচ্ছে, মানুষের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে। তাই পাঁচ বছর পর প্রশাসকের নাম করে দলের লোকজন দিয়ে পুরসভা পরিচালনা করছে। কেরালায় ভোট হয়েছে, রাজস্থানে ভোট হয়েছে, বিহারে ভোট হয়েছে, এখন আর না বলতে পারছে না। তবে কেন শুধুমাত্র কলকাতা পুরসভা? গোটা রাজ্যের সর্বোচ্চ নির্বাচন হতে হবে। কেন মার্চ মাস? অনেক আগে হবার কথা। পারলে একমাসের মধ্যে ভোট হওয়ার কথা। আমাদের মনে হয় সরকারের সেটাই বন্দোবস্ত করা উচিত। এখন সুপ্রিম কোর্টের চাপেই ওদের ভোট করতে হচ্ছে।’
সূত্রের খবর আগামী জানুয়ারি মাসের শেষভাগে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে। রাজ্য চায়, অতিমারি পরিস্থিতির কারণে, তালিকা তৈরির অন্তত ছয় সপ্তাহ পর ভোটাভুটি হোক। ততদিনে কলকাতা শহরে করোনার পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হবে বলে রাজ্য আশা করছে। সেই মতো মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভোট করতে সরকার প্রস্তুত বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কমিশনকে।
আরও পড়ুন: বঙ্গে পুরভোট কবে? রাজ্যের কাছে জবাব চাইল সুপ্রিম কোর্ট
উল্লেখ্য, কলকাতা পুরসভার প্রশাসক নিয়োগের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন শরদ কুমার সিং। অতিমারি পরিস্থিতির কারণে সেই সময়ে প্রশাসক নিয়োগ রাখার ক্ষেত্রেই সায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন আবেদনকারী। সেই মামলার শুনানিতে গত ৭ ডিসেম্বর আদালত রাজ্যের কাছে জানতে চায়, কলকাতা পুরসভার ভোট কবে হবে। জবাব দেওয়ার জন্য ১০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয় রাজ্যকে। সেই মতো এবার মার্চের মাঝামাঝি সময়ে কলকাতা পুরসভার ভোট করতে রাজ্য সরকার প্রস্তুত বলে কমিশনকে তারা জানিয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ফিরহাদে ‘না’, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই মুখোমুখি হবেন জিতেন্দ্র