একুশের আগে ‘সেমিফাইনালে’ বিজেপির ‘গুজরাট মডেলের’ পাল্টা তৃণমূলের হাতিয়ার ‘কলকাতা মডেল’
একদিকে বিজেপি যখন কথায় কথায় গুজরাট মডেল প্রসঙ্গ টেনে আনছে। সেই সময় পুরভোটে জয়লাভ করে পাল্টা কলকাতা মডেল তৈরি করারও একটা সুযোগ থাকছে তৃণমূলের সামনে।
কলকাতা: আগামী মার্চ মাসে কলকাতা পুরসভায় ভোট করার বিষয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সবুজ সংকেত দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে কয়েক মাস আগে পর্যন্তও তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে বিধানসভা ভোটের আগে পুরভোট করার বিষয়ে দোদুল্যমানতা ছিল, রাজনৈতিক মহলের অভিমত এমনটাই। কারণ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে যে ব্যাপক হিংসা ছড়িয়েছিল, তার ফলাফল শাসকদলকে ভুগতে হয়েছিল লোকসভা ভোটে।
সেই কারণে, বছরখানেক আগে যখন পুরভোট নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বৈঠক করেছিলেন, সেখানে খুব স্পষ্টভাবে একটা কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরদের। সেটা হল- কোনও ভাবেই স্থানীয় পুলিস বা প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটে আঘাত দেওয়া যাবে না। বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত কিশোর, পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা উপস্থিত ছিলেন সেই বৈঠকে। কেউ ভোট করিয়ে দেবে, এই আশা নিয়েও কেউ যেন ভোটে লড়তে যাবেন না। এমনটাও পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দেন শীর্ষ নেতৃত্ব।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ফের পুলিস দিয়ে ভোট করিয়ে যদি কোনও অঘটন ঘটে, তার দায় সোজা এসে পড়বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাড়ে। সেই কারণেই স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য ছাড়াই ভোটে যেতে বলা হয় কাউন্সিলরদের। এমনকী সল্টলেক পুরনির্বাচনের সময় সেখানেও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যা কখনই প্রশাসনের জন্য ইতিবাচক বিজ্ঞাপন নয়। পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার হাতেগরম ফলাফল লোকসভায় পাওয়ায় ফের একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি চায়নি শাসকদল।
কিন্তু তৃণমূলের সেই হাইপ্রোফাইল বৈঠকের পর অতিমারি পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় কলকাতা পুরসভার পুরভোটের প্রসঙ্গও আর উঠে আসেনি। সূত্রের খবর, পুরভোট পিছিয়ে যাওয়ায় তৃণমূল নেতৃত্বের একটা বড় অংশ চেয়েছিলেন যাতে বিধানসভা ভোট আগে করে নেওয়া যায়। কেননা, পুরভোটে নিজেদের আসন ধরে রাখতে গিয়ে কাউন্সিলররা কীভাবে পুলিস-প্রশাসনের সাহায্য নেবেন, এবং পরিস্থিতি কখন হিংসাত্মক আকার ধারণ করবে তা বলা যায় না। যদি আশঙ্কা সত্যি হয়, তবে তার পুরো প্রভাবটাই আসন্ন বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের ভোটবাক্সে পড়বে।
তবে এর মধ্যে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শোনা যাচ্ছিল যে, ফেব্রুয়ারির মাঝে বা মার্চের শুরুতে পুরভোট করতে আগ্রহী তৃণমূল শিবির। মঙ্গলবার শেষমেশ নবান্নের পক্ষ থেকে মার্চ মাসে ভোট করার জন্য অগ্রসর হওয়ার সবুজ সংকেত দেওয়া হল।
এদিনই আবার কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম দলের আরেকটি ভাবনার কথা স্পষ্ট করেন। তিনি জানান, কলকাতা পুরসভা এবং এর কাউন্সিলরদের পারফর্মেন্স খুব ভাল। ফলে কলকাতা পুরসভায় পুনরায় ক্ষমতা দখল করতে তাঁদের খুব একটা বেগ পেতে হবে বলে মনে করছে না তৃণমূল। একদিকে বিজেপি যখন কথায় কথায় গুজরাট মডেল প্রসঙ্গ টেনে আনছে। সেই সময় পুরভোটে জয়লাভ করে পাল্টা কলকাতা মডেল তৈরি করারও একটা সুযোগ থাকছে তৃণমূলের সামনে।
আরও পড়ুন: মার্চেই কলকাতা পুরসভায় ভোট চাইছে রাজ্য সরকার
বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ঠিক এই কারণেই কলকাতার পুরভোট বিধানসভা নির্বাচনের আগেই করে ফেলতে চাইছে রাজ্য সরকার। যেহেতু শহরের বুকে তৃণমূলের অবস্থা অন্যান্য জায়গার থেকে অনেকটাই ভাল। তাই এই ভোটে জিতলে কলকাতার উন্নয়নকে মডেল করে বাড়তি অক্সিজেন ও মনোবল নিয়ে বিধানসভা ভোটে ঝাঁপাতে পারবে শাসকদল।
কলকাতা পুরভোটে জিতলে এক ঢিলে দুটি পাখি মারতে পারবে তৃণমূল। প্রথমত, মানুষ যে দলের কাজ ও উন্নয়নকে দেখে তাদের ভোট দিয়েছেন সেই দাবি করা যাবে প্রচারে। দ্বিতীয়ত, গুজরাটের পাল্টা কলকাতা মডেলকেও হাতিয়ার করা যাবে একুশের বিধানসভা ভোটের আগে। তবে বিরোধীদের একাংশের দাবি, আসন্ন বিধানসভায় তৃণমূল জিততে পারবে না এটা জেনেই মান বাঁচাতে তারা আগেভাগে এই ভোট সেরে ফেলতে চাইছে।
সূত্রের খবর, রাজ্যের পুর আইন অনুযায়ী আগামী বছর নভেম্বর মাসে মধ্যে রাজ্যের বাকি পুরসভার ভোটগুলিও করা ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
আরও পড়ুন: শুভেন্দু অধিকারী আজও কেন বিয়ে করেননি, ব্যাখ্যা দিলেন নিজেই