বাংলার রোগীদের ভিনরাজ্যে যাওয়া আটকাতে ‘স্বাস্থ্যনগরী’ তৈরির পরিকল্পনা
একমাসের মধ্যে প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করে রাজ্য সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে। আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ ইনচার্জ সুগত দাসগুপ্ত তৈরি করবেন ওই স্বাস্থ্যনগরীর চিকিৎসা পরিষেবার রূপরেখা।
কলকাতা: রাজ্যের রোগীদের দাক্ষিণাত্য অভিযান আটকাতে ‘হেলথ হাব’ বা ‘স্বাস্থ্যনগরী’ গড়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিতে চলেছে স্বাস্থ্য কমিশন। বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়।
বহু বছর ধরেই রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবায় অনাস্থা জাহির করে রাজ্যবাসীর একাংশের মধ্যে চিকিৎসার জন্য চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কর্নাটক যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। বছরখানেক আগে রাজ্যের রোগীদের এ ধরনের দাক্ষিণাত্য টানকে খোঁচা দিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে এসএসকেএম চত্বরে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন রাজ্যের বিশিষ্ট হেপাটোলজিস্ট চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। অভিজিৎবাবুর প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘উন্নত চিকিৎসার সন্ধানে দক্ষিণ (হায়দরাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু) অভিযাত্রার পর প্রত্যাগতদের প্রতি আমার সবিনয় নিবেদন- আপনাদের সেবা করার প্রয়োজনীয় পারদর্শিতা আমার নেই, মাফ করবেন’। ঘটনাচক্রে, নন্দনে এদিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন অভিজিৎবাবুও।
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের রাজ্যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকেরা রয়েছেন। রাজ্যের মানুষের মধ্যে চিকিৎসার জন্য ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা এড়াতে স্বাস্থ্যনগরী গড়ার কথা ভেবেছি।” প্রকল্পের প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করার দায়িত্বে রয়েছেন আরজিকরের সিসিইউ ইন-চার্জ সুগত দাশগুপ্ত। প্রকল্পে অনুমোদনের জন্য সেই রূপরেখা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাবে কমিশন।
স্বাস্থ্যনগরীর মাধ্যমে রোগীদের দাক্ষিণাত্য অভিযান কী ভাবে আটকানো যাবে? কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, প্রস্তাবিত হেলথ হাবে অন্য হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে আসা রোগীদের ভর্তি করা হবে বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। রোগী ভর্তির পরে ওষুধ থেকে শুরু করে রিহ্যাব- সব পরিষেবা থাকবে এক ছাদের তলায়। প্রথমে পাঁচশো, পরে শয্যা সংখ্যা হাজার করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যনগরী সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে হবে কি না, তা পরবর্তীক্ষেত্রে স্থির হবে। তবে পরিচালনার ভার সম্পূর্ণ রূপে কমিশনের হাতে থাকবে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন: পিছিয়ে গেল ২০২১ সালের মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, নির্ঘণ্ট জানাল রাজ্য সরকার
এদিনের বৈঠকে হাজির স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “মানুষকে উন্নতমানের পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রকল্পের রূপরেখা অনুমোদনের জন্য সরকারি আধিকারিকদের কাছে দেওয়া হবে। চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে বাকি বিষয়গুলি ঠিক হবে।” সুগতবাবুর কথায়, “এটা একটা স্বপ্নের প্রকল্প। সেই প্রকল্পের প্রাথমিক রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। বিদেশে এবং সরকারি হাসপাতালে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তা কাজে লাগিয়ে প্রকল্পটিকে সার্থক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করব।” ভোটের আগে এদিনের ঘোষণার মধ্যে চিকিৎসকদের একাংশ বিশেষ তাৎপর্যও খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, সবার জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ঘোষণা করে ইতিমধ্যে জনমানসে ভাল সাড়া পাওয়া গিয়েছে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত আরও একটি কাঙ্খিত প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে নবান্ন।
আরও পড়ুন: ‘নতুন’ করোনা আরও শক্তিশালী, কেন্দ্রও স্বীকার করে বলল ‘সুপার স্প্রেডার’