Fake Medicine: চিনে নিন আপনার হার্ট কিংবা গ্যাসের ওষুধটা আদৌ আসল কি না, চিনিয়ে দিচ্ছেন ওষুধ বিশারদ
Counterfeit Medications: অনেকে ভাবতেও পারবেন না এমনও কিছু ওষুধে মেশানো থাকতে পারে বলে আশঙ্কার কথা শোনালেন অধ্যাপক কৃষ্ণাংশু রায়। তাঁর কথায়, ইঁদুরের বিষ, কেমিক্যালস মার্কারি, আর্সেনিকও থাকতেই পারে। এগুলো শরীরে গেলে কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
কলকাতা: খাস কলকাতায় ২ কোটি টাকার নকল ওষুধ উদ্ধার করেছে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোলার অরগাইজেশন বা সিডিএসসিও (CDSCO)। গত শুক্রবার এক অভিযানে যে ওষুধগুলি উদ্ধার হয়, সে ওষুধ হার্টের, গ্যাসের কিংবা কিডনির সমস্যার জন্য ব্যবহৃত হয়। এমন ওষুধ ধীরে ধীরে রোগীকে নিয়ে যেতে পারে বড় বিপদের দিকে। আবার সে ওষুধের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে রোগীর। প্রায়শই এই জাল ওষুধ উদ্ধারের কথা শোনা যায়। কিন্তু কোন ওষুধ জাল কীভাবে বুঝবেন, শরীরে কীভাবে ক্ষতি করে এই নকল ওষুধ শোনালেন প্রাক্তন রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলার অধ্যাপক কৃষ্ণাংশু রায়।
কোন ওষুধকে আমরা জাল বলব?
অধ্যাপক কৃষ্ণাংশু রায়ের কথায়, “ধরুন একটা ক্যাপসুল, তার ভিতরে যে ওষুধটা থাকার সেটাই নেই। ধুলো, বালি বা কাঠের গুঁড়ো ভরা আছে। এটাকে আমরা জাল ওষুধ বলব। আবার ট্যাবলেট চকের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি, দেখে বোঝার জো নেই। সেটাও জাল ওষুধই।” খুব স্বাভাবিক, কে বা অ্যান্টি বায়োটিক ক্যাপসুলটা খুলে দেখেন তার ভিতরে কী ভরা আছে। কে বা দেখতে যান ধবধবে সাদা গ্যাসের ট্যাবলেট আসলে ওষুধে তৈরি নাকি চকের গুঁড়োয়।
কী কী মেশানো হতে পারে ওষুধে
অনেকে ভাবতেও পারবেন না এমনও কিছু ওষুধে মেশানো থাকতে পারে বলে আশঙ্কার কথা শোনালেন অধ্যাপক কৃষ্ণাংশু রায়। তাঁর কথায়, ইঁদুরের বিষ, কেমিক্যালস মার্কারি, আর্সেনিকও থাকতেই পারে। এগুলো শরীরে গেলে কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। এগুলি শুধু জাল ওষুধ নয়, জীবনহানির জন্যও যথেষ্ট।
পরিমাণ মতো ওষুধ না থাকলে সেটাও জাল
ওষুধে ভুল জিনিসের ব্যবহার যেমন, জাল ওষুধের সংজ্ঞাকে জোরাল করে। একইভাবে কোনও ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলে যে পরিমাণ ওষুধ থাকা দরকার, তার থেকে ওষুধের পরিমাণ যদি কম থাকে, সেটাকে সাবস্ট্যান্ডার্ড ড্রাগ বলি, জানালেন কৃষ্ণাংশুবাবু। একইসঙ্গে বলেন, সবটাই আইনগতভাবে অপরাধ যোগ্য। যারা এটা করছে জেনে করুক বা না জেনে, ধরা পড়লে ৬ মাসের জেল, ১ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।
জাল ওষুধে কী কী ক্ষতির সম্ভাবনা?
অধ্যাপক কৃষ্ণাংশু রায়ের কথায়, “প্রথমত অসুখ সারবে না। ওষুধ হয়ত ১৫ দিন খাওয়া হয়ে গিয়েছে, তারপরও উপকার নেই। অর্থাৎ থেরাপিউটিক ফেলিওর হবে। যদি ক্ষতিকারক বস্তু থাকে যেমন, মার্কারি বা আর্সেনিক, তাহলে এর জন্য যা যা ক্ষতি হওয়ার সেটাও হবে। যদি ওষুধ সাবস্ট্যান্ডার্ড থাকে অর্থাৎ যতটা থাকার কথা না থাকে, তার মানে আন্ডার ডোজ়। সবথেকে বড় ক্ষতি, রেজিস্ট্যান্স পাওয়ারটা শরীরের নষ্ট হতে শুরু করবে।”
জাল-কারবার কীভাবে রোখা যায়?
কৃষ্ণাংশুবাবু বলছেন, তৈরির পদ্ধতিতা ভালভাবে নজরদারিতে রাখতে হবে। আইন করে যেসব সংস্থার গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাক্টিস লাইসেন্স আছে তাদের দিয়েই ওষুধ তৈরি করাতে হবে। দুই, যারা বিক্রি করছে, ডিস্ট্রিবিউশনে নজর দিতে। তবে আমরা যারা ওষুধ কিনছি তাদের দায়িত্বও কম নয় বলছেন অধ্যাপক রায়। তাঁর কথায়, “আমরাও যখন ওষুধ কিনব, দেখে নিতে হবে। টনিক বা সিরাপ যখন কিনব দেখে নেব সিলটা ইনটাক্ট আছে কি না। আলোতে ঝাঁকিয়ে দেখে নিতে হবে দ্রবক ঠিকমতো গুলছে কি না। কোনও মশা মাছি পড়ে আছে কি না।”
দায়িত্ব আছে ক্রেতারও
ওষুধের মোড়কে ওষুধের লাইসেন্স নম্বর আছে কি না দেখে নিতে বলছেন কৃষ্ণাংশু রায়। DL বা ড্রাগ লাইসেন্স নম্বরও আছে কি না দেখে নিতে বলছেন তিনি। ম্যানুফ্যাকচারিং যাদের, তাদের ঠিকানা আছে কি না তাও দেখা দরকার। কারণ, কোনও সমস্যা হলে রোগী কোথায় গিয়ে যোগাযোগ করবেন? এক্সপায়ারি ডেট তো দেখতেই হবে।
সরকারি নজরদারি
অধ্যাপক কৃষ্ণাংশু রায় বলছেন, “সর্বোপরি আমাদের ভেষজ নিয়ন্ত্রণ দফতর আছে। ড্রাগ কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট বলে যাকে। প্রতিটি রাজ্যে তা আছে। ভারত সরকারেরও আছে। এদের ইন্সপেক্টর আছেন। ঘুরে ঘুরে দেখবেন সে ব্যবস্থা রাখা উচিত। তাঁদের ওষুধের দোকান, ডিপো ঘুরে দেখা উচিত।”