Firhad Hakim: ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতে গিয়েই কি ফ্যাসাদে পড়তে হল ফিরহাদকে?

Firhad Hakim: কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, এই ধরনের এক্সটেনশন বা টেন্ডার না হওয়ার প্রক্রিয়ায় মাথা গলিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

Firhad Hakim: 'ঘুঘুর বাসা' ভাঙতে গিয়েই কি ফ্যাসাদে পড়তে হল ফিরহাদকে?
ফিরহাদ হাকিম।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 11, 2023 | 11:06 PM

কলকাতা: কলকাতা পুরনিগমে নিয়োগ, মিড ডে মিল-সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ বিরোধীদের। এবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন পার্কিং। গাড়ি পার্কিংয়ের টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে কলকাতা পুরনিগমে। পুরকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, টেন্ডার ছাড়াই শহরের ২৭০টি পার্কিং লট চলে বলে অভিযোগ। ৩২টি সমবায় এবং ২০টি এজেন্সি তার দায়িত্বে। সমবায় ও এজেন্সিগুলির অধিকাংশই শাসকদলের অনুগামীদের বলে অভিযোগ। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, সেই ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতে গিয়ে ‘ফ্যাসাদে’ পড়তে হয়েছে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে। পার্কিং লট বন্টনের শেষ ‘ফিজিকাল টেন্ডার’ হয়েছিল ২০১৪ সালে। এরপর নতুন করে টেন্ডার হয়নি। সূত্রের খবর, যাঁরা টেন্ডার পেয়েছিলেন, তাঁদের বছরের পর বছর এক্সটেনশন দিয়ে রাখা হচ্ছিল। বাড়তি ফি দিয়ে টেন্ডারের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল বলেও অভিযোগ।

কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, এই ধরনের এক্সটেনশন বা টেন্ডার না হওয়ার প্রক্রিয়ায় মাথা গলিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কোভিড পরবর্তী পর্যায়ে তিনবার ফাইল পৌঁছেছিল মেয়রের টেবিলে। তিনি বিষয়টিতে সহমত পোষণ করে ফিজিক্যাল টেন্ডার প্রক্রিয়ার পরিবর্তে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবতীয় কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে কোনও এক ‘অজ্ঞাত কারণে’ তা আর হয়ে ওঠেনি।

বর্তমানে কলকাতা পুর এলাকায় ২৭০টি পার্কিং লট রয়েছে। মোট গাড়ি থাকে ১৪,৮৯৭টি। এই পার্কিং লটগুলির মধ্যে ৩২টি কো-অপারেটিভের হাতে রয়েছে এবং ২০টি এজেন্সির হাতে রয়েছে। এই পার্কিং লটগুলিতে ২০১৪ সালে শেষবার টেন্ডার হয়এরপর নির্দিষ্ট শতাংশ বাড়তি ফি দিয়ে লটের দায়িত্বে থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এই প্রক্রিয়া একেবারেই বেআইনি।

এদিকে অভিযোগ, টেন্ডার না করার জন্য একের পর এক অজুহাত গত দেড় বছরে পুর কমিশনার এবং মেয়রের টেবিলে ফাইল আকারে পৌঁছেছে। টেন্ডার না করার চাপও ছিল বলে সূত্রের দাবি। তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কো-অপারেটিভগুলি সহজেই দায়িত্ব পেয়েছে লটগুলির। গত বছরের জুলাই-অগস্ট মাসে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের তরফে একটি ফাইল এসে পৌঁছয় পুর কমিশনারের কাছে।

সূত্রের দাবি, সেখানে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছিল, বেশ কিছু কো-অপারেটিভের নামেই দায়িত্ব রয়েছে। চালাচ্ছে একাধিক ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়ন। সেগুলি যে সবক’টি শাসকদলের ছত্রছায়ায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কারণে পার্কিং লটগুলির নতুন করে বণ্টনে টেন্ডার করার জন্য লালবাজারে তরফেও কলকাতা পুরনিগমকে আর্জি জানানো হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে পার্কিং বিভাগের সঙ্গে লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের বারবার বৈঠকও হয়। কিন্তু সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত ফাইল বন্দি অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছে।

পুরনিগমের পার্কিং বিভাগ সূত্রে খবর, ২০০৭-২০১২ সাল পর্যন্ত পার্কিং লট বিলি নিয়ে কোনও ওপেন টেন্ডার হয়নি। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একই সমবায়গুলি ক্ষমতা ভোগ করে এসেছে। প্রতি বছরই মেয়াদ শেষে লাইসেন্স ফি নামমাত্র বাড়িয়ে অতিরিক্ত সময়সীমা দেওয়া হয়েছে কো-অপারেটিভগুলিকে। ২০১২ সালের পর পার্কিং লট নিয়ে টেন্ডার হলেও, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।

এ নিয়ে সিপিএম নেতা চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, “মানুষ যা বোঝার বুঝে ফেলেছে। দুর্নীতির পক্ষে দাঁড়িয়ে একদল লোক রোজ বিবৃতি দেন। এই দুর্নীতি পর পর চলছে।” বিজেপি নেতা সজল ঘোষের বক্তব্য, “সাড়ে ৮-৯ বছর কলকাতার পার্কিং লটের কোনও টেন্ডার হয় না। যাঁকে মেয়রের পছন্দ হয় বা যাঁরা মেয়রকে খুশি করতে পারেন, থাকেন।”

টেন্ডার নিয়ে যদিও ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, “হ্যাঁ টেন্ডার করেনি। আমি বলেছি পুরনিগমে ই-টেন্ডার সকলকে করতে হবে। একটা দিয়েছিল ফিজিকাল টেন্ডারের জন্য। আমি বলেছি সব ই-টেন্ডারে যেতে হবে। এটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ফিনান্সিয়াল রুলস-এর মধ্যে পড়ে। তা মেনে চলতেই হবে।”