Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

৭ দিনে মাত্র ২ ঘণ্টার রোদ কলকাতায়, কী ভাবে মাপল আলিপুর?

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, জুনে মাত্র দু'দিন ৯ ঘণ্টার বেশি রোদ পেয়েছে কলকাতা। ৩ জুন ৯ ঘণ্টা ১৮ মিনিট আর ৬ জুন ৯ ঘণ্টা ৬ মিনিট। তার পর ধীরে ধীরে আকাশের দখল নিতে শুরু করে সাগরের মেঘ।

৭ দিনে মাত্র ২ ঘণ্টার রোদ কলকাতায়, কী ভাবে মাপল আলিপুর?
অলংকরণ: অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Updated on: Jun 22, 2021 | 4:47 PM

কমলেশ চৌধুরী: মেঘের কোলে রোদ নয়। এ যেন মেঘের কোপে রোদ! সাত দিনে মাত্র ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিটের রোদ প্রাপ্তি কলকাতার। আলিপুর অবজার্ভেটরির সানশাইন রেকর্ডার থেকে বেরিয়ে এল এই পরিসংখ্যানই। নেপথ্যে, জোড়া নিম্নচাপ, নিম্নচাপ অক্ষরেখা, ঘূর্ণাবর্ত, এমনকী ভূমধ্যসাগরের পশ্চিমী ঝঞ্ঝাও। কাপড় শুকোতে গিয়ে গেরস্ত বিপাকে। বিপত্তির খতিয়ান শেষ নয় এখানেই।

গ্রীষ্মের ভ্যাপসা গরমের পর বর্ষার অপেক্ষায় দিন গোনে বাংলা। এ বার বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। নির্ধারিত সময়েই রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। উল্টে বর্ষার শুরুতেই অতিবৃষ্টি। দ্বিগুণ বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে, কলকাতাতেও। আর মেঘ-বৃষ্টির দাপটে উধাও রোদ।

sunlight-1

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, জুনে মাত্র দু’দিন ৯ ঘণ্টার বেশি রোদ পেয়েছে কলকাতা। ৩ জুন ৯ ঘণ্টা ১৮ মিনিট আর ৬ জুন ৯ ঘণ্টা ৬ মিনিট। তার পর ধীরে ধীরে আকাশের দখল নিতে শুরু করে সাগরের মেঘ। ১৪ জুন রোদ উঠেছিল মাত্র ১ ঘণ্টা ৩৬ মিনিটের জন্য। ৪২ মিনিটের রোদ পাওয়া যায় ১৮ জুন। ১৪ থেকে ২০ জুনের মধ্যে গত সাত দিনে পাঁচ দিন পুরোপুরি নিখোঁজ ছিল উজ্জ্বল সূর্যালোক।

sunlight-2

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস

সোমবার টানা প্রবণতায় ছেদ পড়ে। কিন্তু আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, মঙ্গলবার থেকে আবার মেঘ ঢুকবে। বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টিও হতে পারে রাজ্যে। তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র রয়েছে, যন্ত্র রয়েছে বৃষ্টির পরিমাণ মাপারও। কিন্তু কত ক্ষণের জন্য রোদ উঠল, এটা কী ভাবে জানা সম্ভব?

উত্তর পেতে সানশাইন রেকর্ডার ব্যবহার করেন আবহবিদরা। যন্ত্রের মধ্যে থাকে কার্ভ কার্ড। তিন ধরনের কার্ড হয়– লং, স্ট্রেট, শর্ট। এক-এক মরসুমে এক-একটি ব্যবহার করা হয়। যন্ত্রের কাচে রোদ প্রতিফলিত হয়ে এই কার্ডে পড়ে। রোদ থাকলে কার্ড পুড়তে পুড়তে যায়। রোদ না উঠলে অক্ষত থাকে। যেমন হয়েছে গত ক’দিনে। এমন কি হাল আমলে আর হয়েছে?

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ২১ জুলাই থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে ৯ দিনে মাত্র ২৪ মিনিটের রোদ পেয়েছিল আলিপুর। নেপথ্যে, গভীর নিম্নচাপ আর মৌসুমি অক্ষরেখা। আর ১০ অগস্ট পর্যন্ত ২২ দিনে মিলেছিল মাত্র ৩২ ঘণ্টা ৪২ মিনিটের রোদ। তার পর টানা মেঘলা-আঁধার এই প্রথম। বিশেষ করে বর্ষার শুরুতেই।

কেন একটানা দাপট বর্ষার?

মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের একটি নিম্নচাপের হাত ধরে বর্ষা ঢুকেছিল বাংলায়। এইরকম পরিস্থিতিতে বৃষ্টি সবসময়ই বেশি পাওয়া যায়। পরে দক্ষিণবঙ্গের উপর থাকা একটি ঘূর্ণাবর্ত বিহারের উপর পৌঁছে নিম্নচাপে পরিণত হয়। কিন্তু ভূমধ্যসাগর থেকে কাশ্মীরে ঢুকে আসা একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জন্য সেই নিম্নচাপ পূর্ব উত্তরপ্রদেশের পরে আর এগোতে পারেনি। রাজস্থানের উপর একটি হিট লো-ও ছিল।

এর ফলে দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের সর্বত্র যেমন বর্ষা এগোতে পারেনি, তেমনই নিম্নচাপের প্রভাবে একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে পূর্ব ভারতে।’ এই মুহূর্তে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে নিম্নচাপ অক্ষরেখা। বাংলাদেশের উপর একটি ঘূর্ণাবর্তও রয়েছে। এদের যৌথ প্রভাব থাকবে। ফলে মেঘ থাকবে। থাকবে বৃষ্টিও। বারান্দায় রোদ্দুর থাকার সম্ভাবনা কম।

sunlight-3

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস

কিন্তু বৃষ্টি যেমন দরকার, তেমন প্রয়োজন রোদও। গেরস্ত মাত্রেই তিতিবিরক্ত একটানা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায়। কাপড় ধোয়ার উপায় নেই। ধোয়াধুয়ি করলেও শুকোনোর জো নেই। এখানেই শেষ নয়। করোনা-লকডাউনে এমনিতেই মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত বহু মানুষ। তার মধ্যে এমন মেঘলা আকাশ স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া বড়সড় প্রভাব ফেলে মানবমনে। বাড়ে অবসাদ। ঠিক যেমন দেখা যায় নরওয়ের মতো স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলিতে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সরকারের কথায়, ‘স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলির সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হল, গ্রীষ্মের গরমের পর সবাই বর্ষার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। তাই বর্ষা এলে সবাই খুশিই হয়। কিন্তু একটানা মেঘলা থাকলে মনের উপর চাপ পড়ে। বাইরে বেরিয়ে সব কাজ সারা যায় না। তারও প্রভাব পড়ে মনে। মেঘলা আকাশের জন্য যে অবসাদ, তাকে আমরা বলি সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার। রোদ না-থাকলে শরীরে মেলাটোনিন বেড়ে যায়, ফলে ঘুম ঘুম পায়। মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের পরিমাণ কমে যায়, তাই মুড সুইংও হয়। এই কারণে অনেক সময় লাইট থেরাপিও দিতে হয় আমাদের।’

তবে এই ধরনের পরিবেশ ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার জন্য আশীর্বাদ। ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, ‘মেঘলা আবহাওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার পোয়াবারো, দ্রুত বংশবৃদ্ধির সুযোগ পায়। বাড়তে পারে পতঙ্গবাহিত রোগও।’ যত্রতত্র যাতে জল না জমে, তাই সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।

আরও পড়ুন: ‘লোকসভায় ভুল তথ্য দেওয়া বেআইনি’, নুসরতের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষকে চিঠি বিজেপি সাংসদের

বড় ক্ষতি নিশ্চিত ভাবেই চাষে। শুধু সব্জি নয়, ধানচাষেও। আমন ধানের চাষের জন্য জমিতে জল জমা জরুরি। কিন্তু বর্ষার শুরুতেই অতিবর্ষণে উল্টে ক্ষতি। পূর্ব বর্ধমানের মতো রাজ্যের বহু জেলায় জমি জলে ডুবে। ফলে অনেক জায়গায় নষ্ট হয়েছে বীজতলা। নতুন করে বীজ ফেলতে হবে। ফলে চাষির আর্থিক ক্ষতি। মেঘলা আবহাওয়া, একটানা আর্দ্রতা বেশি থাকলে কীটপতঙ্গেরও বাড়বাড়ন্ত। স্পষ্টতই, নিম্নচাপে নানাবিধ ‘ডিপ্রেশন’। নানাস্তরেও। তাই কলকাতা রোদ ফেরত চায়। গোটা বাংলাও।