দেহদানে নয়া দিশা, ব্রজ রায়ের শরীরে কী প্রভাব করোনার? ময়নাতদন্তে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট
হিস্টোপ্যাথলজিস্ট চিকিৎস সুকান্ত চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বয়সজনিত কারণে কিছু পরিবর্তন ছাড়া ফুসফুস ও কিডনিতে করোনার পরিবর্তন স্পষ্ট ধরা পড়েছে ব্রজ রায়ের অটোপসিতে।
কলকাতা: মরণোত্তর দেহ ও অঙ্গদান আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল ব্রজ রায়ের। ‘গণদর্পণ’ গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ব্রজ রায় ৮৪ বছর বয়সে করোনায় (COVID 19) প্রয়াত হন। মৃত্যুর পর তিনি নিজের ইচ্ছায় দেহ দান করে যান ময়নাতদন্তের জন্য। কোনও নতুন রোগ চেনার উপায় এই অটোপসি বা ময়নাতদন্ত। দেহে ওই রোগের ফলে কী কী পরিবর্তন আসছে, তা জানা যায় অটোপসিতে। ব্রজ রায়ের অটোপসিতে একাধিক নতুন বিষয়ে চোখে পড়েছে চিকিৎসকদের। যা করোনার সঙ্গে যুঝতে অনেকটাই সাহায্য করবে বলে মত চিকিৎসক মহলের। এ বিষয়ে হিস্টোপ্যাথলজিস্ট চিকিৎসক সুকান্ত চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বয়সজনিত কারণে কিছু পরিবর্তন ছাড়া ফুসফুস ও কিডনিতে করোনার পরিবর্তন স্পষ্ট ধরা পড়েছে ব্রজ রায়ের অটোপসিতে।
ব্রজ রায়ের প্যাথলজিকাল অটোপসি হয়েছিল। আগে বুঝতে হবে এই প্যাথলজিক্যাল অটোপসি কী?
সাধারণত অটোপসি ২ ধরনের হয়। মেডিক্যাল অটোপসি ও মেডিকোলিগাল অটোপসি। কোনও অপরাধমূলক কারণ শনাক্ত করার জন্য মেডিকোলিগান অটোপসি করা হয়। কোনও মানুষের যদি রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তখন কোন রোগে ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। সেই রোগ খুঁজে বের করতে মেডিক্যাল অটোপসি করা হয়। চিকিৎসায় কোনও ভুল ছিল কি না বা আর কী উন্নতি করা যেত তা জানার জন্য এই মেডিক্যাল অটোপসি করা হয়। এই ক্ষেত্রে ব্রজবাবু দেহে করোনা কী কী প্রভাব ফেলেছে তা চিহ্নিত করার জন্য দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে মাইক্রস্কোপে পরীক্ষা করা হয়।
ব্রজ রায়ের বিভিন্ন অঙ্গে কী প্রভাব ফেলেছিল করোনা?
ব্রজবাবুর অটোপসিতে ৩ ধরনের পরিবর্তন ধরা পড়েছে। প্রথমত তাঁর বয়সজনিত কারণে অঙ্গে পরিবর্তন, দ্বিতীয়ত ক্রনিক রোগের জন্য পরিবর্তন ও তৃতীয়ত করোনার জন্য পরিবর্তন। তাঁর হৃদপিন্ডে একটি ব্লকেজ পাওয়া গিয়েছে, যা বয়সজনিত কারণে। কিন্তু ফুসফুস ও কিডনিতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে করোনাভাইরাস। ফুসফুসে ৯০ শতাংশ পরিবর্তনের জন্য দায়ী করোনা। ফুসফুসে একটি অংশে অ্যালভিওলাই সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিয়েছে মারণ ভাইরাস। কিডনিতে বয়সজনিত কারণের প্রভাবই বেশি। তবে সেখানেও প্রভাব ফেলেছে কোভিড-১৯।
ব্রজ বাবুর এই অটোপসি চিকিৎসা বিজ্ঞানে কতটা সাহায্য করবে?
চিকিৎসক সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, প্যাথোফিজিওলজিতে যথেষ্ট সাহায্য করবে ব্রজবাবুর অটোপসি। জীবন্ত মানুষের অঙ্গের বড়জোর ছবি তোলা যায়। কিন্তু অঙ্গের গভীরে কী প্রভাব ফেলল একটি রোগ। তা জানার একমাত্র উপায় এই অটোপসি। একটা নতুন রোগ বুঝতে হলে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিডে প্রয়াত সামান্য কয়েকজনেরই অটোপসি হয়েছে, দেশে ব্রজ রায়ই প্রথম। তাই তাঁর এই অটোপসির পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত লাভজনক হবে বলে মত চিকিৎসকদের।
আরও পড়ুন: ‘স্বীকার করে নিলেই ভাল, মহত্ত্ব বাড়ে’, সম্পর্ক ভাঙনে নুসরতকে ‘পরামর্শ’ সৌমিত্রর