Justice Abhijit Ganguly: বিচারপতি সৌমেন সেনের বেঞ্চে কতবার খারিজ হয়েছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অর্ডার?
Justice Abhijit Ganguly- High Court: বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একবার নয়, একাধিকবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া নির্দেশ খারিজ হয়ে গিয়েছে বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চে। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলাও রয়েছে তার মধ্যে।
কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টে আজ যে সংঘাতের ছবি দেখা গিয়েছে, তা অতীতে হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না বর্ষীয়ান আইনজীবীরাও। একেবারে প্রকাশ্যে এক বিচারপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন আর এক বিচারপতি। নির্দেশনামায় খোদ বিচারপতিকেই রাজনৈতিক মদতপুষ্ট বলে উল্লেখ করলেন আর এক বিচারপতি। মেডিক্যালে ভর্তি সংক্রান্ত মামলায় প্রকাশ্যে এসেছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও বিচারপতি সৌমেন সেনের এই সংঘাত। বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চে নির্দেশ খারিজ হয়ে যাওয়ায় এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। তবে এটাই প্রথমবার নয়, আগেও একাধিকবা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া অর্ডার খারিজ হয়ে গিয়েছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়ের ডিভিশন বেঞ্চে।
খারিজ হয়ে যাওয়া মামলার মধ্যে যেগুলি উল্লেখযোগ্য, একনজরে
কলেজ সার্ভিস কমিশন মামলা (৬ অক্টোবর, ২০২৩)
কলেজ সার্ভিস কমিশনের একটি মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ খারিজ করে দেয় বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। কমিশনের চেয়ারম্যান দীপক কুমার করকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে কমিশন ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হলে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ খারিজ হয়ে যায় বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে।
প্রাথমিক নিয়োগ মামলা (১৬ অগস্ট, ২০২৩)
প্রাথমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া নির্দেশ খারিজ হয়ে যায় বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চে। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ ছিল, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে পার্শ্ব শিক্ষকরাও পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয় দুটি সম্পূর্ণ পৃথক প্রক্রিয়া, তাই সিঙ্গল বেঞ্চের রায় খারিজ করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, উচ্চ প্রাথমিকের পার্শ্বশিক্ষকরা প্রাথমিক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না।
মানিক ভট্টাচার্যের মামলা (১০ অগস্ট, ২০২৩)
নিয়োগ মামলায় জেলে বন্দি রয়েছেন প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি ৫ লক্ষ টাকা জরিমানাও ধার্য করেন। সেই মামলায় বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে স্বস্তি পান মানিক। খারিজ হয়ে যায় সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ।
প্রাথমিক টেট মামলা (১০ জানুয়ারি, ২০২৪)
২০১৪ সালের টেটের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ১০ দিনের মধ্যে প্যানেল প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল সিঙ্গল বেঞ্চ। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় পর্ষদ। ১০ জানুয়ারি সেই নির্দেশ খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ।
৩২ হাজার চাকরি বাতিল (৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩)
৩২ হাজার চাকরি বাতিলের ক্ষেত্রেও সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে আপত্তি জানায় বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। গত বছরের মে মাসে ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। অ্যাপটিটিউড টেস্ট ছাড়াই চাকরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। বিচারপতির রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়ে দেয় শীর্ষ আদালত ও মামলা ফেরত পাঠায় হাইকোর্টে। সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সেই স্থগিতাদেশ বহাল রাখে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ ছিল, মামলাটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কারও চাকরি যাচ্ছে না।
মেডিক্যালে ছাত্র ভর্তি (২৫ জানুয়ারি, ২০২৪)
মেডিক্যালে ছাত্র ভর্তি নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলায় সিবিআই-কে এফআইআর করার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ডিভিশন বেঞ্চে খারিজ হয়ে যায় সেই নির্দেশ। বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, মূল মামলাকারী তাঁর আবেদনে এফআইআর-এর কথা বলেননি। কীসের ভিত্তিতে সিবিআই তদন্ত হবে? সেই প্রশ্নও তোলে ডিভিশন বেঞ্চ।