15 year old vehicles: রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও বাসের দেখা নেই, কোথায় ‘উধাও’ হল? কী বলছে পরিবহণ দফতর…

15 year old vehicles: শহর কলকাতার পরিবেশ রক্ষার জন্য ২০০৯ সালে একটি মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর অভিযোগ, পুরনো বাসের কালো ধোঁয়া বাতাসে মিশে দূষিত করছে কলকাতার আকাশকে। উৎসবের এই মরশুমে কলকাতার রাস্তায় ক্রমশ কমছে পুরনো বাস। ২০২৫ সালের শেষে প্রায় ১৫০০ বাসের বয়স ১৫ বছর পেরিয়ে যাবে। বেসরকারি গণপরিবহণ নিয়ে তাই চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে।

15 year old vehicles: রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও বাসের দেখা নেই, কোথায় 'উধাও' হল? কী বলছে পরিবহণ দফতর...
কলকাতার রাস্তায় কমছে বেসরকারি বাস
Follow Us:
| Updated on: Oct 19, 2024 | 10:41 PM

অফিস যাওয়ার তাড়া। রাস্তায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কিন্তু, আপনার রুটে বেসরকারি বাসের ‘দেখা নেই’। কিছুদিন আগেও এইসময় একটা বাস পেয়ে যেতেন। কিন্তু, এখন পাচ্ছেন না। এই সমস্যা শুধু আপনার একার নয়। বিভিন্ন রুটেই বেসরকারি বাসের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এক ধাক্কায় কমেছে বাসের সংখ্যা। কলকাতার বিভিন্ন রুট থেকে ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছে ৫৬৫টি বাস। হঠাৎ হলটা কী? উৎসবের মরশুমে কেন কমল বেসরকারি বাসের সংখ্যা? নেপথ্যে কলকাতা হাইকোর্টের এক নির্দেশ। কী সেই নির্দেশ? বেসরকারি বাসের সংখ্যা কমা নিয়ে কী বলছে পরিবহণ দফতর? কী বলছে বিরোধীরা? পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন…

হঠাৎ বেসরকারি বাস ‘উধাও’ হয়ে যাচ্ছে কেন?

শহর কলকাতার পরিবেশ রক্ষার জন্য ২০০৯ সালে একটি মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর অভিযোগ, পুরনো বাসের কালো ধোঁয়া বাতাসে মিশে দূষিত করছে কলকাতার আকাশকে। তাঁর সেই মামলার ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, বাসের বয়স ১৫ বছরের বেশি হলে কলকাতা শহর তথা কলকাতা মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট অথিরিটি (কেএমডিএ)-র এলাকায় চালানো যাবে না। পরে এই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় বাসমালিকদের সংগঠন। শীর্ষ আদালত বিষয়টি পাঠিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্টে। এদিকে, গত ১ অগস্ট থেকে ১৫ বছরের পুরনো বাস রাস্তা থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ কার্যকর করেছে পরিবহণ দফতর। তার পর থেকে রাস্তা থেকে একের পর এক বাস ‘উধাও’ হয়ে যাচ্ছে। যে বাসগুলি ২০০৯ সালের অক্টোবরের আগে রাস্তায় নেমেছিল, সেগুলি আর রাস্তায় নামানো যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৫৬৫টি বাস রাস্তায় নামতে পারছে না।

কী বলছে বাস সংগঠনগুলি?

এক বাস চালক বলেন, “পুলিশের কাছে কাতর অনুরোধ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। পুলিশ বলছে, ১৫ বছরের পুরনো বাসকে আর রাস্তায় ছাড়া যাবে না। আমাদের সকাল ৫টা ২০ মিনিট, সকাল ৬টার বাস আর ছাড়া যাচ্ছে না।” পুরনো বাস রাস্তা থেকে তুলে নেওয়ায় তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন বলে জানান ওই বাস চালক।

জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেন, ২ বছর ছাড় দেওয়ার জন্য তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদেন জানিয়েছিলেন। কারণ, করোনার জন্য ২০২০ এবং ২০২১ সালে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বাস ও মিনিবাসের মালিকরা। কিন্তু, তাঁদের কথা শোনা হয়নি। তাই, তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানান। একইসঙ্গে তিনি জানান, আগে একাধিক জেলায় বিভিন্ন রুটে গড়ে ১০০টি বাস চলত। গত চার বছরে সেই সংখ্যা কমতে কমতে ২০-৩০টি বাসে এসে পৌঁছেছে।

৬ বছর আগে শেষবার বাসভাড়া বেড়েছিল বলে দাবি করে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শেষবার বাসভাড়া বেড়েছিল ২০১৮ সালে। তার পর এই ৬ বছরে পেট্রোল ও ডিজেল ভাড়া একাধিকবার বেড়েছে। কিন্তু, বাসভাড়া বাড়েনি।

কলকাতা পৌরনিগম এলাকায় ক্রমশ কমছে বেসরকারি বাস-

কলকাতা পৌরনিগম এলাকায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা যে ক্রমশ কমছে, তথ্য তুলে ধরে দাবি করে বাস সংগঠনগুলি। একটি বাস সংগঠনের এক পদাধিকারী বলেন, ২০০৯ সালের আগে কলকাতা পৌরনিগম এলাকায় প্রায় ৭ হাজার বাস চলত। ২০২৪ সালে বাসের সংখ্যা কমে হয়েছে ৩ হাজার।

এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি বাস মালিকদের লিজের ভিত্তিতে সরকারি বাস ব্যবহারে ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। কিন্তু তাতেও বিশেষ কোনও লাভ হচ্ছে না বলে বেসরকারি বাস পরিবহণের কর্তারা জানিয়েছেন। সিটি সাব-আর্বান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলছেন, এই বিষয়ে প্রশাসন সদর্থক ভূমিকা নিলে যাত্রীরাও উপকৃত হবেন। বহু বাস মালিক বুঝেই উঠতে পারছেন না, কী করা উচিত।

কী বলছে পরিবহণ দফতর-

রাজ্য পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা বলছেন, যদি কোনও গাড়ির অবস্থা ভাল হয়, তা হলে তা ১৫ বছরের পুরনো হলেই বসিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এক আধিকারিক বলেন, “১৫ বছরের পুরনো বাস বসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ শুধুমাত্র কলকাতা ও দিল্লিতে লাগু রয়েছে। দেশের আরও কোথাও এই নির্দেশ নেই।”

একই বক্তব্য পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীরও। তিনি বলেন,১৫ বছর পরও অনেক বাসের ইঞ্জিন ভাল থাকতে পারে। বাসের বয়স ১৫ বছর হলে তা পরীক্ষা করা দরকার। সেগুলি যদি ভাল অবস্থায় থাকে, তাহলে তা যাতে রাস্তায় চলতে পারে, তা নিয়ে নিয়ম থাকা দরকার। প্রয়োজন পড়লে বাসগুলির সংস্কার করে চালানো যেতে পারে। একইসঙ্গে তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী চান, বাসের এই বয়সসীমা ২০ বছর হওয়া উচিত।

জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পরিবহণ দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের মধ্যে এই নিয়ে উদ্যোগ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দফতরের একাংশ বলছে। এই নিয়ে অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে, বাস-মিনিবাসের সংখ্যা বাড়বে না। যে সংখ্যা রয়েছে সেটা হয়তো থাকবে।

বেসরকারি বাসের সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের পরিবহণ খরচ ৫ গুণ বেড়ে গিয়েছে। বেসরকারি পরিবহণ কমছে। সরকারি পরিবহণ তুলে দিয়ে বেসরকারি হাতে তুলে দেবেন। গণ পরিবহণকে তুলে দিয়ে মানুষের বিপদ ঘটানো মুখ্যমন্ত্রীর কাজ।”

২০২৫ সালের শেষে প্রায় ১৫০০ বাসের বয়স ১৫ বছর পেরিয়ে যাবে। ফলে রাস্তায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা আরও কমবে। তখন কী হবে, তা নিয়ে যাত্রীদের আশঙ্কাও বাড়ছে। উল্টোডাঙায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে এক যুবক গেয়ে উঠলেন, ‘তোমার দেখা নাই রে, তোমার দেখা নাই’। ২০২৫ সালের পর এই ‘অপেক্ষা’ কি আরও বাড়বে? আশঙ্কার মেঘ এখনই ঘনাচ্ছে।