‘বিজেমূল তত্ত্ব’ বোঝানো যায়নি, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে সাবধানী হওয়ার বার্তা সিপিএমের

"সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কোনও পোস্ট করা নিয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। প্রতিদিন নিজের নিজের যে সব অ্যাকাউন্ট বা পেজ আছে, তা চেক করতে হবে। অনেকেই নিজে সবটা করেন বা অন্য কেউ করেন। তাঁদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।"

'বিজেমূল তত্ত্ব' বোঝানো যায়নি, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে সাবধানী হওয়ার বার্তা সিপিএমের
বিমান বসু ও সীতারাম ইয়েচুরি (ফাইল ছবি)
Follow Us:
| Updated on: Jun 20, 2021 | 9:10 PM

কলকাতা: একুশের ভোটের প্রচার ময়দানে বিজেমূল তত্ত্ব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। শুধু আম নাগরিক নয়। শুধু আম নাগরিক নয়। দলীয় কর্মী সমর্থকদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি মোর্চা। সিপিএম (CPIM) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠকে এমনই জানালেন নেতারা।

রবিবার ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও একাধিক পলিটব্যুরো সদস্য এই সভায় ছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর্যালোচনাই ছিল এই সভার আলোচ্য। মোট ৫২জন রাজ্য কমিটি সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। অনেকে লিখিত বক্তব্যও পেশ করেছেন।

পার্টির রাজ্য সম্পাদক যে পর্যালোচনার খসড়া পেশ করেছেন সেখানে পার্টি ও বামফ্রন্টের নির্বাচনী বিপর্যয়ের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কারণগুলি অনুসন্ধান করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সিপিআই(এম) ও বামফ্রন্টের ভোটের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। শ্রেণি ও জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমর্থন হ্রাস পেয়েছে। রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ থাকলেও ক্রমে বিজেপি-বিরোধী মনোভাবের ফলে তারা লাভবান হয়েছে। বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে তীক্ষ্ণ মেরুকরণ হয়েছে। জনগণ তৃণমূলকেই বিজেপি-বিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে বেছে নেন।

বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পকে তৃণমূল জনগণের সমর্থন লাভের জন্য ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। ধর্মীয় মেরুকরণ এই ফলাফলের প্রধান কারণ না হলেও একটি কারণ। বিজেপি-র আগ্রাসী প্রচারের বিরুদ্ধে বাংলার জাতিসত্তাকে তৃণমূল ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। বিজেপি, তৃণমূল উভয়েই পরিচিতিসত্তার রাজনীতি করেছে, তার যথাযথ মোকাবিলা করা যায়নি। বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট সর্বোচ্চ সম্ভব এক জায়গায় আনতে এবং বাম, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির সমাবেশের প্রয়োজনীয়তা থেকেই রাজ্যে বামফ্রন্ট থাকলেও সংযুক্ত মোর্চা গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু মোর্চাকে বিকল্প হিসাবে জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। পার্টির সাংগঠনিক দুর্বলতা নির্বাচনী সংগ্রামে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, নির্বাচনী বিপর্যয়ের অভিন্ন কারণ হল পার্টির গণভিত্তি হ্রাস। এই দুর্বলতা আমরা কাটাতে পারিনি। যে ভুলগুলির কথা আগেই পার্টিতে আলোচিত হয়েছে তা অতিক্রম করা যায়নি। ভুলকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থতা আরো বড় ভুলের জন্ম দেয়। রাজ্যে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা ছিল। যার ফলে ২০১৯-এ বিজেপি’র লাভ হয়েছিল।

কিন্তু পরে তৃণমূল কিছু পদক্ষেপ নেয় এই অসন্তোষ হ্রাসের জন্য। বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পকে তারা একাজে ব্যবহার করে। বিজেপি’র হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে বাঙালি জাত্যাভিমানকেও তারা ব্যবহার করেছে। ইয়েচুরি বলেন, পার্টির ২২তম কংগ্রেসেই বলা হয়েছিল বিজেপি-কে পরাস্ত করা মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।

অপরদিকে গত কয়েকদিন ধরে নন্দীগ্রামের সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের একের পর এক বিতর্কিত পোস্ট নিয়ে শোরগোল শুরু হয়। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের পোস্ট নিয়ে বিতর্ক দেখা যায়। যার প্রেক্ষিতে এদিন মন্তব্য করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কোনও পোস্ট করা নিয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। প্রতিদিন নিজের নিজের যে সব অ্যাকাউন্ট বা পেজ আছে, তা চেক করতে হবে। অনেকেই নিজে সবটা করেন বা অন্য কেউ করেন। তাঁদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।” পাশাপাশি পেজ ও প্রোফাইল হ্যাকের প্রশ্ন তোলেন তিনি।

আরও পড়ুন: বিকাশরঞ্জনের ফেসবুক পোস্টে ‘কংগ্রেসী গুন্ডা’! সূর্যকান্তের কাছে জবাব তলব প্রদেশ কমিটির

তিনি জানান, বিজেপির আইটি সেল নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।অনেক সময় হ্যাক করা হচ্ছে প্রোফাইল।

আরও পড়ুন: মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সিপিএম নেতৃত্বকে তুলোধোনা করে একের পর এক পোস্ট! তড়িঘড়ি হচ্ছে ডিলিটও