ভয় করো-না: ১০৫ বছরের বৃদ্ধ করোনাকে হারাতে পারলে আপনিও পারবেন, কিন্তু কীভাবে?
মনোবিদ-চিকিৎসক সকলেরই পরামর্শ, মনের জোর ধরে রাখুন। করোনা জয় নিশ্চিত।
কলকাতা: সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম যেন বদলাচ্ছে না। প্রতিদিনই করোনা (COVID) রেকর্ড গড়ছে। মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। এরই মাঝে সুড়ঙ্গের ভিতর থেকে আলো দেখা দিচ্ছে। এই যেমন, মধ্য প্রদেশের ১০৫ বছরের বৃদ্ধ করোনা জয় করে বাড়ি ফিরলেন। শুধু তাই নয়, একশো ছুঁই ছুঁই তাঁর স্ত্রীও করোনাকে নক আউট করে দিয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত যেমন বহু মানুষ হচ্ছেন, তার সিংহভাগ সুস্থও হচ্ছেন। অতএব, এই আশার আলো থেকেই প্রশ্ন উঠছে, যদি ১০৫ বছরের এক বৃদ্ধ ৯ দিন আইসিউতে কাটিয়ে করোনা জয় করে বাড়ি ফিরতে পারেন, তাহলে আপনি কেন নয়?
করোনায় বয়স্কদের ভারি বিপদ। একাধিক কো-মর্বিডিটির জন্য মারণ কামড় বসায় ভাইরাস। ১০৫ বছরের ধেনু চবন ও তাঁর ৯৫ বছর বয়সী স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। ছেলে সুরেশ বাবা-মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবেশীরা বলেছিল, এই বয়সে আর হাসপাতাল থেকে কেউ ফেরে না। কিন্তু ধেনু চবন ও তাঁর স্ত্রী মোতাবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চিকিৎসকরা বলছেন সঠিক সময়ে চিকিৎসা আর অদম্য মনের জোরই বাঁচিয়েছে দু’জনকে। তাই মনোবিদ-চিকিৎসক সকলেরই পরামর্শ, মনের জোর ধরে রাখুন। করোনা জয় নিশ্চিত।
এ বিষয়ে বিশদে জানতে অভিনেত্রী মনোবিদ সন্দীপ্তা সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় টিভি নাইন বাংলার তরফে। তাঁর মতে, মনের জোর কোভিড থেকে ক্য়ান্সার, সব জায়গাতেই গুরুত্বপূর্ণ। মন আর শরীরকে আলাদা করে দেখলে হবে না। আতঙ্কও প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে। তখন এই ১০৫ বছরের বৃদ্ধর খবর শুনে নিজের আতঙ্ক কমাতে হবে। তিনি বলেন, “হাল ছাড়লে হবে না। মস্তিষ্ক আর মন অতোপ্রতভাবে জড়িত।” তাই যাঁরা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন তাঁদের জন্য সন্দীপ্তার পরামর্শ, শরীরে খুব ব্যথা থাকলে শুয়ে শুয়েই মেডিটেশন করুন। আর যাঁরা করোনা পজিটিভ কিন্তু খুব অসুস্থ নন তাঁরা পছন্দের কাজ করুন, গান শুনুন, সিনেমা দেখুন। তিনি বলেন, “যেটা ভাল লাগে সেটা করুন। বাড়িতে বন্ধ হয়ে গেলে কিছু করণীয় নেই, এটা ভাবলে হবে না। একটা ঘরের মধ্যে থেকেই পছন্দের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। একটা মিউজিক চালিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নিন। তাহলেই অনেকে সাহায্য হবে।”
চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বয়স খুব একটা ফ্যাক্টর হয় না। প্রদাহ কম হলে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল হলে ভাইরাসকে প্রতিহত করা সম্ভব।” তাঁর মতে, হয়ত এই ১০৫ বছরের বৃদ্ধর ক্ষেত্রে কো-মর্বিডিটি কম ছিল তাই তিনি করোনাকে প্রতিহত করতে পেরেছেন। বয়স্কদের তাঁর পরামর্শ, যাঁরা যে রোগের ওষুধ খাচ্ছেন তা চালিয়ে যান। তাহলে কো-মর্বিডিটি রোখা সম্ভব হবে। তবে মর্নিং ওয়াকে আপত্তি রয়েছে অরিন্দমবাবুর। কারণ জনসমাগম এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
আরেক মনোবিদ উর্মি চট্টোপাধ্যায়েরও একই মত। তিনিও জানান, মনের জোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনার এই অনিশ্চিয়তার সময়ে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। তাঁর মতে, পৃথিবীতে কোনও কিছুই স্থায়ী হয় না। করোনাও স্থায়ী হবে না। তাই সাবধানতা অবলম্বন করে এই আশা নিয়ে মনের জোর ধরে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: ভয় করো-না: আইসিইউতে ৯ দিন কাটিয়ে সস্ত্রীক করোনা জয় ১০৫ বছরের বৃদ্ধর