প্যানডেমিকের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ইনফোডেমিক! জেনে নিন ‘ইনফোডেমিক’-এর সাত সতেরো
হাজার সতর্কতা সত্ত্বেও রোখা যাচ্ছে না ভুয়ো খবরের বাড়বাড়ন্ত। সম্পূর্ণ রটনার ভিত্তিতে ঘটে যাচ্ছে বড় বিপদ। এই সার্বিক পরিস্থিতিকেই বলা হয়ে ইনফোডেমিক। যার জেরে আতঙ্কে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
২০২০ সালে করোনার জেরে অনেক নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে আমজনতা। তার একটি ‘ইনফোডেমিক’। গত কয়েক মাস ধরে ‘প্যানডেমিক’ বা মহামামির সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ‘ইনফোডেমিক’-এর প্রকোপ।
কী এই ইনফোডেমিক?
একুশ শতকে সোশ্যাল মিডিয়া খবরের অন্যতম মাধ্যম। মাত্র এক ক্লিকেই হাতের মুঠোয় এসে যায় রিয়েল টাইম নিউজ। কিন্তু সেই সঙ্গেই উড়ে আসে কিছু ভুয়ো খবর। রিয়েল নিউজের পাশাপাশি এখন রমরমা রয়েছে ফেক নিউজেরও। এর থেকে নিস্তারের উপায় জানা নেই কারও। বরং প্রতিদিন ফেক নিউজের জালে আরও বেশি করে জড়িয়ে পড়ছেন অসংখ্য মানুষ। হাজার সতর্কতা সত্ত্বেও রোখা যাচ্ছে না ভুয়ো খবরের বাড়বাড়ন্ত। সম্পূর্ণ রটনার ভিত্তিতে ঘটে যাচ্ছে বড় বিপদ। এই সার্বিক পরিস্থিতিকেই বলা হয়ে ইনফোডেমিক। যার জেরে আতঙ্কে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
কীভাবে, কেন এবং কারা ছড়াচ্ছে ভুয়ো খবর?
স্মার্টফোন আজকাল সবার হাতেই। সেই সঙ্গে সকলে সড়গড় হয়েছেন হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে। যোগাযোগ রাখার স্বার্থে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। সমীক্ষা বলছে এই গ্রুপগুলো থেকেই সবচেয়ে বেশি ছড়ায় ফেক নিউজ। মূলত ফরওয়ার্ড মেসেজেই থাকে ভুয়ো তথ্য। হয়তো যিনি পাঠাচ্ছেন তিনি ব্যাপারটা জানেনই না। অথচ তাঁর অগোচরেই ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়ো খবর।
অবশ্য সবক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে (রাজনৈতিক মতাদর্শ, ব্যবসায়িক লাভ কিংবা নিছক মজা) অনেক সময় ভুয়ো খবর ছড়ানো হয়। হোয়াটসঅ্যাপ ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যান্য মাধ্যম থেকে ভুয়ো খবর ছড়ায়। ফেসবুক তার মধ্যে অন্যতম। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং অজান্তে এই দু’ধরণের মানসিকতা বা সাইকোলজির ফলেই সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে হু-হু করে ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়ো খবর।
ইনফোডেমিকের প্রভাব?
সঠিক তথ্য না-জানার ফলে একে অন্যের ব্যাপারে মনগড়া ধারণা তৈরি করে নিচ্ছে মানুষ। বাড়ছে হতাশা, ক্ষোভ, মানসিক অবসাদ। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে সমাজ ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়বে। কোনটা সত্যি কোনটাই বা মিথ্যে, তা যাচাই করার ক্ষমতা হারাবেন সাধারণ মানুষ। ক্রমাগত বাড়বে মানসিক সমস্যা।
করোনার সময় সবচেয়ে বেশি রটে যাওয়া ‘ফেক নিউজ’?
১। ভ্যাকসিন কবে আসবে
২। করোনা দূর করার ঘরোয়া টোটকা
৩। মদ বা অ্যালকোহল করোনা তাড়ায়
সতর্কতায় কী-কী করবেন?
১। যে কোনও খবর ১০০ শতাংশ যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না। খবর ঝাড়াই-বাছাই করুন। এটাই ফেক নিউজ রুখে দেওয়ার থাম্বরুল।
২। যে কোনও টোটকার কথা শুনলে দয়া করে আগে নিজের বাড়ির চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তারপর প্রয়োগ করুন। অযথা আতঙ্কিত হবেন না।
৩। ভ্যাকসিন এবং ভাইরাস দুটোর সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য গুগল সার্চ করুন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইট, তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ (সরকারি), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করুন।
৪। কোনও খবর আপনার কাছে এলে সত্যতা যাচাই না করে কাউকে ফরওয়ার্ড করবেন না। গুগলে সার্চ করুন, সম্ভব হলে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন। ‘সূত্রের খবর’ বা ‘অমুকের দাবি’-র মতো ব্যাপার যাচাই করে দেখুন অবশ্যই। খবরের থেকে ক্যাচি শব্দ তুলে গুগলে সার্চ করে সত্যতা যাচাই করে নিন। পরখ না করে বিশ্বাস করবেন না একেবারেই।
এই ফেক নিউজ ছড়ানো, সমাজে ভুয়ো খবরের প্রভাব এবং কীভাবে হবে প্রতিকার তা নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল আইআইএমসি, ঢেঙ্কানালের অ্যাসিস্ট্য়ান্ট প্রফেসর সম্বিত পালের সঙ্গে। সম্বিত গুগল নিউজের ‘ইন্ডিয়া ট্রেনিং নেটওয়ার্ক’ (যা ফেক নিউজ ভেরিফিকেশন ও ফ্যাক্ট চেকিং-এর কাজ করে)-এর সঙ্গে যুক্ত।
ভুয়ো খবর ছড়ানোর সামাজিক প্রভাব কী?
সম্বিত- ধরা যাক এক জায়গায় ছেলেধরা দেখা গিয়েছে, এমন খবর কেউ পেলেন। সতর্কতাস্বরূপ আরও কয়েকজনকে এই তথ্য তিনি জানালেন। কিন্তু বার্তা দেওয়ার আগে যাচাই করে নিলেন না খবরটা আদৌ সত্যি কি না। এরপর দেখা গেল সন্দেহের বশবর্তী হয়ে হয়তো কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। পরবর্তীকালে জানা গেল পুরোটাই ছিল ভুয়ো, রটনা। এক্ষেত্রে যিনি খবরটা ছড়ালেন, তিনিও এবার মেন্টাল ট্রমায় আক্রান্ত হবেন। প্রতি মুহূর্তে তাঁর মনে হবে যে, তাঁর জন্যই এত বড় কাণ্ড ঘটে গেল।
ভুয়ো খবরের জাল থেকে মুক্তির উপায়?
সম্বিত- মানুষকে সতর্ক হতে হবে। কোনও খবর পেয়েই সেটাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস না-করে যাচাই করতে শিখতে হবে। কারণ এই ক্ষেত্রে সরকার যদি আইনের খুব কড়াকড়ি করে, তাহলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই সাধারণ মানুষের সতর্ক হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।