AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Kiriteswari Village: দেশের সেরা পর্যটন গ্রাম বাংলার কিরীটেশ্ব‌রী, কীভাবে পৌঁছাবেন এই প্রাচীন মহাপীঠে?

Best Tourism Village: গ্রামের মুসলিম বাসিন্দাদের সহযোগিতায় এই হিন্দু ধর্মের শক্তিপীঠের রক্ষণাবেক্ষণ হয়। এমনকী কিরীটেশ্ব‌রী মন্দির পরিচালনার কমিটিতে একাধিক মুসলিম সদস্য রয়েছে। এই হিন্দু ধর্মের শক্তিপীঠের ইতিহাসের সঙ্গেও মুসলিম সম্প্রদায় যুক্ত।

Kiriteswari Village: দেশের সেরা পর্যটন গ্রাম বাংলার কিরীটেশ্ব‌রী, কীভাবে পৌঁছাবেন এই প্রাচীন মহাপীঠে?
| Edited By: | Updated on: Sep 26, 2023 | 2:31 PM
Share

দেশের ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত ৭৯৫টি আবেদনের মধ্যে ২০২৩ সালের ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্ব‌রী। মুর্শিদাবাদের সঙ্গে জড়িয়ে প্রাচীন বাংলার নবাবি আমলের ইতিহাস। ছুটিতে কাটাতে এবং ইতিহাসকে জানতে অনেকেই বেড়াতে যান মুর্শিদাবাদে। ঘুরে দেখেন হাজারদুয়ারি প্রাসাদ, কাঠগোলা বাগানবাড়ি, কাশিমবাজার রাজবাড়ি ইত্যাদি। তবে, এবার মুর্শিদাবাদ গেলে অবশ্যই ঘুরে আসুন কিরীটেশ্ব‌রী গ্রাম থেকে। এখানে হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে সম্প্রীতির বার্তা দেয়।

ভাগীরথীর পশ্চিম পারে মন্দির অধ্যুষিত গ্রাম কিরীটেশ্ব‌রী। যদিও গ্রামের নাম কিরীটকণা। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, দক্ষযজ্ঞে সতীর মুকুট এই গ্রামে পতিত হয়েছে। তাই অনেকের কাছে ‘মুকুটেশ্বরী’ গ্রাম নামেও পরিচিত। যদিও এই স্থান শাক্ত সাধনার জায়গা। প্রাচীন মহাপীঠ নামে বেশ জাগ্রত। গ্রামের মুসলিম বাসিন্দাদের সহযোগিতায় এই হিন্দু ধর্মের শক্তিপীঠের রক্ষণাবেক্ষণ হয়। এমনকী এই মন্দির পরিচালনার কমিটিতে একাধিক মুসলিম সদস্য রয়েছে। যদিও এই হিন্দু ধর্মের শক্তিপীঠের ইতিহাসের সঙ্গেও মুসলিম সম্প্রদায় যুক্ত।

কিরীটেশ্ব‌রী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে নানা মতো প্রচলিত রয়েছে। শোনা যায়, ১১০৪ বঙ্গাব্দে নাটোরের রানি ভবানী এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে মহারাজা যোগেন্দ্রনারায়ণ রাই এই মন্দিরের সংস্কার করেন। শোনা যায়, পলাশির যুদ্ধে মিরজাফর যে দিন রাজা রাজবল্লভকে ডুবিয়ে মারেন, এই মন্দিরের এক শিবলিঙ্গ হঠাৎ করে ফেটে গিয়েছিল। মিরজাফর শেষ বয়সে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন এবং তিনি দেবীর চরণামৃত পান করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মুঘল সম্রাট আকবরের থেকে এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান লালগোলার রাজা ভগবান রায়। ১৪০৫ সালে দেবীর মন্দির ভেঙে যায়। পরবর্তীকালে, ভগবান রায়ের বংশধর ছিলেন রাজা দর্পনারায়ণ রায় নতুন করে মন্দিরটি নির্মাণ করেন। পাশাপাশি এই রাজা দর্পনারায়ণ রায়ের আমল থেকে এখানে পৌষ মেলার সূচনা হয়। এখনও পৌষ মাসের প্রতি মঙ্গলবার এখানে বিশেষ মেলা বসে। যদিও কিরীটেশ্ব‌রী মন্দিরে মাঘ মাসের রটন্তী অমাবস্যার পুজো খুবই জাগ্রত। এছাড়া এখানে ধুমধাম করে আয়োজিত হয় দুর্গাপুজো ও কালিপুজো। এসব বিশেষ দিন উপলক্ষে শ’য়ে শ’য়ে পর্যটক ও ভক্তরা ভিড় করেন কিরীটেশ্ব‌রীতে।

কিরীটেশ্ব‌রী গ্রামে অনেক ছোট ছোট মন্দির রয়েছে। রয়েছে অনেকগুলো শিব মন্দিরও। দেবীর কিরীট যেখানে রাখা আছে, সেই জায়গাটির নাম গুপ্তমঠ। মন্দিরের কাছে অবস্থিত হলেও আপনাকে গ্রামের মধ্যে দিয়ে গুপ্তমঠে পৌঁছাতে হবে। এই জায়গাটি গ্রামের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। কিরীটেশ্ব‌রী মন্দিরের বিশেষত্ব হল, এখানে দেবীর কোনও মূর্তি বা ছবি পূজিত হয় না। লাল রঙের একটি শিলামূর্তি রয়েছে, সেটাই পূজিত হয়। এছাড়া শোনা যায়, এখানে ভৈরবরূপে দেবীর যে মূর্তি পুজো করা হয়, সেটা একটি প্রাচীন বৌদ্ধমূর্তি। তাই এটি ‘ধ্যান বৌদ্ধমূর্তি’ নামেও পরিচিত।

গুপ্তমঠে প্রতিদিন দেবীর পুজো হয় এবং দেবীর অন্নভোগে ৩৬৫ দিনই মাছ থাকে। দুর্গাপুজোর অষ্টমীতে গুপ্তমঠে মহাপুজোর আয়োজন করা হয়। শিলামূর্তি উপর যে কাপড়ের আবরণ রয়েছে, তা প্রতিবছর অষ্টমীতে বদলানো হয়। আর কালিপুজোর দিন সারারাত ধরে মায়ের পুজো হয় এবং পুজোর শেষে এখানে পাঁঠা বলি দেওয়া হয়।

কিরীটেশ্ব‌রী মন্দিরে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষ ভিড় জমায়। কিরীটেশ্ব‌রী গ্রাম যাওয়ার এবং থাকার ব্যবস্থা খুব একটা ভাল নয়। পীঠস্থান হিসেবে জাগ্রত হলেও, এখানে পর্যটকদের রাত কাটানোর জন্য তেমন ব্যবস্থা নেই। বহরমপুর বা হাজারদুয়ারিতে রাত কাটিয়ে আপনাকে যেতে হবে কিরীটেশ্ব‌রী গ্রামে। ভাগীরথী নদী পার করে পৌঁছাতে হবে কিরীটেশ্ব‌রী মন্দিরের কাছে। যদিও নদী পার করার পরও টোটোয় চেপে যেতে হবে অনেকটা পথ। ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’-এর স্বীকৃতি পাওয়ার পর হয়তো হাল ফিরবে কিরীটেশ্ব‌রী মন্দির ও গ্রামের।