মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ৩২–রাঁচি শহর ঘুরে দেখা, নাইট স্টে পাত্রতু ভ্যালি
Patratu Valley: বহু পর্যটক আসে পাত্রাতু ভ্যালি যাওয়ার রাস্তা উপভোগ করতে। একপাশে লেক, অন্যপাশে পাহাড়ে ঘেরা সবুজ জঙ্গলের মাঝের আঁকাবাঁকা রাস্তায় বাইক চালানোর মজা উপভোগ করতে। সবুজ ঘন জঙ্গলের মাঝে পিচকালো রাস্তার সৌন্দর্য এক কথায় অসাধারণ।
ঘুম তাড়াতাড়ি ভেঙে গেল স্যারের ডাকে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ, হালকা ঠান্ডা এবং এসির সহযোগে সারারাত কম্বলের মধ্যেই বেশ ঘুম হল। ইলেকট্রিক কেটলিতে চা বানিয়ে বিস্কুটের সঙ্গে খাওয়া শেষ করে, সকাল আটটার মধ্যে স্নান করে রেডি হয়ে নিলাম—রাঁচি শহরটা ঘুরে দেখার জন্য। আজকের নাইট স্টে পাত্রতু ভ্যালি, তাই লাগেজপত্র বাইকের সঙ্গে বেঁধেই রওনা দিলাম। হোটেলের পাশেই একটি রেস্তোরাঁয় সকালে পেট ভর্তি করে খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম যোনহা ফলসের উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে এই ঝর্ণার দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার।
বেশিরভাগ মানুষ রাঁচিতে দু’দিন থেকেই এসব জায়গা ঘুরে নেয়। কিন্তু আমার মতে, একই জায়গায় দু’দিন থাকাটা লোকসানের। তাই আমি প্ল্যানটা এভাবে করেছিলাম: হোটেল থেকে বেরিয়ে রাঁচি-পুরুলিয়া হাইওয়ে ধরে সোজা পৌঁছে গেলাম অঙ্গারা, এখান থেকে ডান দিক নিয়ে পৌঁছে গেলাম যোনহা ফলসে। রাস্তা বেশ ভাল। এবং চওড়া রাস্তা দিয়ে কখনও ছোট-বড় পাহাড়, কখনও জঙ্গল, আবার কখনও গ্রামের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে যাবেন এই ফলসে। ফলসটি বেশ বড়। বেশ কয়েকটি সিঁড়ি নেমে নীচের থেকে দেখলে ঝর্ণাটিকে আরও ভাল লাগে। এটির দু’পাশে সবুজে ঢাকা পাহাড় আর রাড়হু নদীর পাশে বিস্তীর্ণ জঙ্গলের মাঝ থেকে ওঠা সুন্দর একটি জলপ্রপাত। শীতকালে এই ড্যামটিতে নানা ধরনের পাখির সমাবেশ দেখা যায়। এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে আসুন পরবর্তী গন্তব্য স্থান গেটালসুদ ড্যাম-এ।
২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ড্যামটি রাঁচি শহরের সবথেকে বড় ড্যাম। পানীয় জলের সরবরাহ এবং বৈদ্যুতিক কাজে এই ড্যামের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ড্যামের উপরের চওড়া রাস্তা দিয়ে বাইক চালাতে বেশ ভাল লাগে। এই ড্যামটি থেকে সুবর্ণরেখার নদীর জল নির্ধারণ করা হয়। এখানে নানা ধরনের রিভার অ্যাক্টিভিটিজ় এবং বোটিংয়ের সুবিধাও আছে। এরপর চলে আসুন মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হুন্ডরু ওয়াটার ফলস-এ।
এটি সুবর্ণরেখা নদীর ওপর অবস্থিত একটি বিখ্যাত ওয়াটার ফলস। এখানে আপনি প্রচুর পর্যটকের ভিড় দেখতে পাবেন। এখানে অনেকটাই সময় দিতে হবে, তার কারণ প্রায় এক কিলোমিটার নীচে না গেলে আপনি এই ঝর্ণাকে উপভোগ করতে পারবেন না। এরপরে আবার রাঁচি শহরের মধ্যে এসে দেখে নিলাম রাঁচি লেক এবং টেগর হিল।
রাঁচির লেকটি এবং টেগর হিল শহরের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় রাস্তা বেশ জ্যামজট পূর্ণ। এই টেগর হিল থেকে পুরো শহরের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ আপনার বেশ ভাল লাগবে। এছাড়াও এখানে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি (যত্নের অভাবে প্রায় খারাপ অবস্থায় পড়ে আছে)। এরপর চলে আসুন ৬ কিলোমিটার দূরে রক গার্ডেন-এ।
এই গার্ডেন দেখে মনে হতে পারে এটি বড়দের পার্ক, তা একদমই নয়। বাচ্চাদের খেলার অনেক ধরনের সরঞ্জাম আছে। এছাড়াও ট্রেন, গাড়ি এবং সাইকেল করে ঘোরার ব্যবস্থাও আছে। এটি একটি বড় পাহাড়ের উপর গড়ে ওঠা পার্ক এবং এখানে পাথরের নানা আকৃতি দেখলে অন্য সভ্যতার কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানের চারপাশের শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে। মানব নির্মিত সবুজ গাছপালার মাঝে এই গার্ডেনের বিকল্প কিছু নেই। এরপর চলে আসুন আজকের দিনের শেষ গন্তব্য স্থান পাত্রাতু ভ্যালি।
রাঁচি থেকে পাত্রাতু ভ্যালি তথা পাত্রাতু লেকে দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। এখানে বহু পর্যটক আসে পাত্রাতু ভ্যালি যাওয়ার রাস্তা উপভোগ করতে। একপাশে লেক, অন্যপাশে পাহাড়ে ঘেরা সবুজ জঙ্গলের মাঝের আঁকাবাঁকা রাস্তায় বাইক চালানোর মজা উপভোগ করতে। সবুজ ঘন জঙ্গলের মাঝে পিচকালো রাস্তার সৌন্দর্য এক কথায় অসাধারণ। এই রাস্তাটি এনএইচ ৩৩-এর অন্তর্গত। এই লেকের প্রায় গা বরাবর উঁচু রাস্তা দিয়ে লেকের চারপাশে বাইক না-চালালে খুব মিস করবেন এখানকার সৌন্দর্যকে। পড়ন্ত বিকেলের লাল আলোয় লেকের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। এখানে বোটিং-এর ব্যবস্থাও আছে। মাথাপিছু প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাগতে পারে। এখানে থাকার জন্য আছে অনেক হোটেল আর ম্যারেজ হল। খুব কম খরচেই আপনি এখানে থাকতে পারেন। আর এই লেক এবং চারপাশের গভীর জঙ্গলের মজা নেওয়ার জন্য একটা রাত কাটানো অবশ্যই দরকার। এখানে আগে থেকে কোন বুকিংয়ের দরকার নেই। এখানে এসে আপনি মনের মতো হোটেল খুঁজে নিতে পারেন, এছাড়াও আছে ভাল সরকারি হোটেলের ব্যবস্থা।
‘দ্য কুইন অফ ছোটনাগপুর মালভূমির’ পরবর্তী অংশ রয়েছে আগামী পর্বে……