Mount Everest: এভারেস্ট জয় যেন গ্রীষ্ম দুপুরে পান্তাভাত খাওয়ার মতই অনায়াস! অবিশ্বাস্য কামি রিতার ‘স্পেশাল ২৬’

Kami Rita Sherpa: জীবন-মৃত্যুর এহেন দোলাচলের মধ্যে দাঁড়িয়েও কামি রিতা জানিয়েছেন অন্য এক গল্প। যেখানে অন্য ব্যক্তিরা ছুটছেন রেকর্ডের পিছনে, সেখানে কামি রিতার কাছে এভারেস্ট অভিযান রুটি রুজির প্রশ্ন।

Mount Everest: এভারেস্ট জয় যেন গ্রীষ্ম দুপুরে পান্তাভাত খাওয়ার মতই অনায়াস! অবিশ্বাস্য কামি রিতার 'স্পেশাল ২৬'
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 13, 2022 | 10:52 PM

বেস ক্যাম্পে পৌঁছতেই পায়ে পায়ে জড়িয়ে পাকিয়ে উঠে আসে সম্ভাব্য শীতল মৃত্যু। কানের কাছে বাতাসের শব্দ যেন হিস হিস করে! শীতল, শীতল এবং ভাবনার চাইতেও শীতল তাপমাত্রা নেমে যায় শূন্যের নীচে, অনেকখানি নীচে, কখনও কখনও মাইনাস ৩০ ডিগ্রিতে পৌঁছে জমিয়ে দিতে চায় শরীরের রক্ত! বাতাসে অক্সিজেন নামমাত্র। অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কে এক আচ্ছন্নভাব! সেই ঘোর নিয়ে খাড়া ঢাল বেয়ে শরীরটাকে টেনে নিয়ে যাওয়া! যে কোনও মুহূর্তে আসতে পারে তুষারঝড়। নিমেষে বদলে যেতে পারে আবহাওয়া। ভয়াবহ এবং বিপজ্জনক তুষারঝড় ছিনিয়ে নিতে পারে প্রাণখানি। এ যেন ঈশ্বরের তৈরি অথচ তাঁর নিয়ন্ত্রণহীন এলাকা। যেন সেখানে খাটে না নিস্তরঙ্গ পৃথিবীর ছাপোষা নিয়ম!

ভয়ঙ্কর আততায়ীর মতো ঘাপটি মেরে থাকে খাদ, ঝড়, অক্সিজেনের অভাব! এক ঝটকায় আত্মা ছিনিয়ে নিয়ে যায় মেফিস্টো! কখনও কখনও নিষ্পন্দ দেহখানিও আর ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। পুরু বরফের আস্তরণের নীচে একখানি মানুষ লীন হয়ে যায় পর্বতের সঙ্গে! এই হল এভারেস্ট। দুর্গম গিরির কী ভয়ঙ্কর টান! প্রতি ক্ষণে যেন প্রাণ নিয়ে জুয়া খেলা। তবু বাঘের জিভে গরম রক্তের স্বাদের মতোই এড়ানো যায় না নেশা।

অভিযাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, এভারেস্টে ওঠার সময় নীচের দিকে না তাকিয়ে থাকা যায়। তবে নীচে নামার সময় কুহেলী ঢাকা অতল খাদ যেন সম্মোহন করে, গুলিয়ে দেয় উচ্চতা, দূরত্বের হিসেবনিকেশ। মাথা ঠান্ডা রেখে তখন নামতে হয় ধীরে ধীরে। ফিরে আসা যেন ওঠার থেকেও অনেক বেশি ভয়ঙ্কর! এককথায় এই হল তাবড় পর্বতারোহীর অভিজ্ঞতা। অথচ এই দর্শনের ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ৫২ বছরের এক নেপালি শেরপা! এভারেস্ট যাওয়া তার কাছে বোধ করি গ্রীষ্মের দুপুরবেলায় কাঁচালঙ্কা সমেত পান্তাভাত খাওয়ার শামিল! এভারেস্ট যাত্রা তাঁর কাছে যেন একটু ‘ওপাড়া’ ঘুরে আসার মতোই সহজসাধ্য! ইতিমধ্যেই সবমিলিয়ে ২৬ বার এভারেস্ট যাত্রা করেছেন তিনি। তাঁর নাম কামি রিতা শেরপা। সরকারি হিসেব অনুসারে কামি রিতা এর মধ্যেই এভারেস্ট যাত্রায় রেকর্ড করে ফেলেছেন। এমনকী গত বছরে নিজেই ভেঙেছেন নিজের রেকর্ড।

সূত্রের খবর অনুসারে, ৮৮৪৮.৮৬ মিটার দুর্লঙ্ঘ্য পর্বতকে কামি রিতা নেপালের দিক থেকে বা দক্ষিণ-পূর্ব পথ থেকে বারবার জয় করেছেন। নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুর পর্যটন বিভাগের প্রধান অধিকর্তা তারানাথ অধিকারী এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালে নিউজিল্যান্ডের স্যার এডমন্ড হিলারির এবং নেপালের তেনজিং নোরগে প্রদর্শিত পথেই কামি রিতা এভারেস্ট আরোহণে বারবার সাফল্য পেয়েছেন। সূত্র অনুসারে, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৩১৬ জনকে এভারেস্ট অভিযানের পারমিট দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে একাধিক অভিযাত্রীকে পারমিট দেওয়া এবং প্রচুর প্রাণহানির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনা শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক মহলে। অনেকেই দাবি করেছিলেন বহু অদক্ষ অভিযাত্রীকে এভারেস্ট অভিযানের পারমিট দেওয়া হয়েছিল। সেই কারণেই মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছিল। এই বছর তাই পারমিট দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

জীবন-মৃত্যুর এহেন দোলাচলের মধ্যে দাঁড়িয়েও কামি রিতা জানিয়েছেন অন্য এক গল্প। যেখানে অন্য ব্যক্তিরা ছুটছেন রেকর্ডের পিছনে, সেখানে কামি রিতার কাছে এভারেস্ট অভিযান রুটি রুজির প্রশ্ন। কামি রিতার বাবাও ছিলেন একজন শেরপা। বাবাকে দেখেই তাঁর এই পেশাই আসা। সেই ১৯৯৪ সাল থেকে, অভিযাত্রীদের সঙ্গে কামি বারবার ছুটে গিয়েছেন এভারেস্টে। শুভ্র তুষারে পড়েছে তাঁর পদচিহ্ন যা উঠে গিয়েছে উঁচুতে আরও উঁচুতে, পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গে যেখান থেকে নীচে তাকালে পৃথিবীকে বড় শান্ত দেখায়! সব যুদ্ধ, মৃত্যু এবং শোকের ঊর্ধ্বে থাকা মুক্তির আকাশ ছোঁয়া সেখান থেকে কি খুব সহজ? উত্তর সম্ভবত রয়েছে কামির কাছে।