Motorcycle Ride: মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ২৮–বামনি আর তু্র্গা জলপ্রপাত পুরুলিয়া জুড়ে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ

Weekend Trip To Purulia: জায়গাটি বেশ পরিষ্কার এবং গোছানো; শীতকালের নানা ধরনের পাখি এবং প্রকৃতিকে দেখার জন্য একটি পরিদর্শন স্তম্ভও আছে। এটি বেশ উঁচু এবং জায়গাটিও বেশ গোছানো। এই ওয়াচ টাওয়ারে যাওয়ার রাস্তা এবং উপর থেকে খয়রাবেড়া ড্যামের ভিউ দেখার মতো।

Motorcycle Ride: মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ২৮–বামনি আর তু্র্গা জলপ্রপাত পুরুলিয়া জুড়ে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 26, 2023 | 9:30 AM

ভোরবেলার দিকে কখন যে ঘুম এসে গেল, বুঝতেও পারিনি। সারারাতের হাওয়ার শোঁ-শোঁ শব্দ। তার সঙ্গে দূরের এক জায়গায় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর শব্দ, আবার কোথাও জঙ্গলে শিয়াল এবং কুকুরের আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে রাতে দু’বার হাতির আওয়াজও পেয়েছিলাম। হাওয়ার সঙ্গে ভেসে-আসা এসব শব্দ কখনও খুব জোরে, আবার কখনও আস্তে-আস্তে শুনতে পাচ্ছিলাম। প্রথমদিকে ভয় অবশ্যই হয়েছিল। এত ঘণ্টা পরে তার সব মিলিয়ে গেল প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে। ভোরবেলার দিকে হাওয়ার গতি কম থাকায় কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম, বুঝতেই পারিনি। সকাল সাতটার সময় ঘুম ভেঙ্গে দেখি, সারা প্রকৃতি আবারও নতুন সাজে সেজে উঠেছে, টেন্টের উপরে বিন্দু-বিন্দু শিশিরের কণা সূর্যের আলোয় হারিয়ে যাচ্ছে। আরও একটু সময় কাটিয়ে ভোরের পাখির ডাক, আর ক্যামেরাবন্দি করা কিছু ছবি নিয়ে সকাল আটটা নাগাদ জিনিসপত্র গুছিয়ে আবার দাদার বাড়ির দিকে রওনা হলাম। বাড়িতে কিছুটা সময় কাটিয়ে, চা-বিস্কুট এবং ব্রেকফাস্ট শেষ করে আমরা দশটার মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম বাইক নিয়ে সাত এবং নয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দু’টি জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে। প্রথমটির নাম বামনি জলপ্রপাত, দ্বিতীয়টির নাম তুর্গা ফলস। বামনি জলপ্রপাতটি বেশ বড়, এটি দু’টি ভাগে বিভক্ত। উপরের অংশ থেকে নীচের অংশ যাওয়ার সেরকমভাবে রাস্তা না থাকার ফলে পাহাড়ের গা দিয়েই নামতে হয়। নামা-ওঠায় আপনার বেশ কিছুটা সময় চলে যাবে এখানে। নীচে বিস্তীর্ণ জলাধারা এবং নীচ থেকে ঝরনাটিকে দেখতে খুবই সুন্দর।

তারপর অযোধ্যা হিল রোড ধরে তুর্গা ফলস দেখে আমরা পৌঁছে গেলাম তুর্গা ড্যাম (বাঁধ)-এ। এই ড্যাম-এ বছরের দু’টি সময় আসার ফলে খুব সুন্দর ছবি রইল আপনাদের জন্য। এই ড্যামটি বেশ সুন্দর, এখানে চারিপাশে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত পরিষ্কার নীল জল আপনাকে অনেকক্ষণ আটকে রাখতে বাধ্য করবে। একটি পাম্প স্টেশন থাকার ফলে এই ড্যামটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে বাইক নিয়ে পৌঁছে গেলাম আজকের পরবর্তী গন্তব্যস্থান, যা ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাম। এই স্থানটি বেশ বড়-বড় পাহাড়ের নীচে অবস্থিত একটি সুন্দর ড্যাম। ড্যামের একপাশে জলধারার ঠিক পাশেই অনেক হোটেল এবং অতিথিশালাও আছে। এখানেই আমরা দুপুরের খাবার শেষ করেছিলাম। জায়গাটি বেশ পরিষ্কার এবং গোছানো; শীতকালের নানা ধরনের পাখি এবং প্রকৃতিকে দেখার জন্য একটি পরিদর্শন স্তম্ভও আছে। এটি বেশ উঁচু এবং জায়গাটিও বেশ গোছানো। এই ওয়াচ টাওয়ারে যাওয়ার রাস্তা এবং উপর থেকে খয়রাবেড়া ড্যামের ভিউ দেখার মতো।

এরপরে পৌঁছে গেলাম মরগুমা ড্যামে, যার দূরত্ব খয়রাবেড়া ড্যাম থেকে ২৮ কিলোমিটার। পাহাড়ের ভিতর দিয়ে উঁচু-নিচু এই ২৮ কিলোমিটারের রাস্তায় বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা ভোলার নয়, মাঝে দু’বার দাঁড়িয়ে পড়লাম প্রকৃতির অপরূপ শোভা দেখতে। তারপর ঠিক দক্ষিণ আকাশে ঢলে পড়া সূর্যের আলোয় পৌঁছে গেলাম মরগুমা ড্যামে। আজকে রাতে এখানেই টেন্ট খাটাব বলে জায়গা ঠিক করে নিলাম ড্যামের ঠিক পাশে, পাহাড়ের নীচের একটি স্থান। বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের আলোয় ড্যাম-এর চারিদিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে বেশ ভাল লাগছিল। শেষে একটি পছন্দ মতো জায়গায় তাবু খাটালাম।

এরপর শুরু হল আমাদের সংসার পাতার পালা। মানে, আমাদের পরবর্তী দিনের ঘোরার জন্য বেশ কিছু স্পট থাকা সত্ত্বেও আমরা এখানেই দু’রাত ছিলাম। এই জায়গাটা এতটাই ভাল লেগে গিয়েছিল যে, এখানে আমরা দু’দিন ধরে ছিলাম। সে এক বিশাল দক্ষযজ্ঞ। ড্যামের এক কোণে তাঁবু খাটিয়ে, বাইক নিয়ে একটি দল চলে গেল রাতের খাবার আনতে। আরেকটি দল দোকান থেকে কাঠ নিয়ে এল। প্ল্যানমতো আজকের রাতে খাওয়া হবে তন্দুরি চিকেন আর মুড়ি। রাত প্রায় একটা পর্যন্ত আগুন জ্বালিয়ে, খাওয়া এবং গল্পের মধ্য দিয়ে এই প্রকৃতির কোলে সুন্দর একটা রাত কাটালাম।

যেহেতু চিকেন রান্না এবং খাওয়া তাঁবুর পাশেই হয়েছিল, তাই সারারাত কুকুর এবং শিয়ালের উৎপাতের আজকের রাতেও ঘুম হল না। বেশ কিছুক্ষণ পরপরই তাঁবুর পাশ দিয়ে পশুর হাঁটাচলার শব্দে ঘুম তো হলই না, সঙ্গে ভয়ও খুব লাগছিল। এই বুঝি চাঁদের পাহাড়ের সেই দৈত্যটা আমাদের মেরে ফেলবে। যাই হোক, কোনওমতে শেষ রাতে একটু ঘুম হয়েছিল। না, সকালে উঠে আর সেই দৈত্যের তিনটি আঙ্গুলের ছাপ পায়নি। তাঁবুর চেনটা খুলে দেখি, সেই আগুনের ছাইয়ের মধ্যে একটি কুকুর কুণ্ডলি পাকিয়ে শুয়ে আছে। সকালে আবার আগুন জ্বালিয়ে ম্যাগি, ডিমের ওমলেট এবং কফি খেয়ে আর ইচ্ছে করল না আবার বাইক নিয়ে অন্য কোথাও বেরোতে, তাই ঠিক হল এখানে আজকের রাতটা কাটানো হবে। দুপুরে এই ড্যাম-এর জলে বেশ কিছু আঞ্চলিক ছেলেদের স্নান-করা দেখে আমরাও প্রায় এক ঘণ্টা জলের মধ্যেই কাটিয়ে দিলাম। শেষে ড্রাই ফুট খেয়ে দু’তিন ঘণ্টা টানা ঘুমিয়ে নিলাম। আজকের রাতে আর রান্না করা হয়নি। হোটেল থেকে খাবার নিয়ে আসা হল, আর এই আগুন জ্বালিয়ে চলল আজকের রাতের আড্ডা। তারপরে সকালবেলা সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে শুরু হল বাড়ি ফেরার পালা। রাস্তা প্রায় ৩০০ কিলোমিটারের পথ। পুরুলিয়া শহর হয়ে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুরের জয়পুর ফরেস্টের বনলতায় সকলের খাবার খেয়ে ডানকুনি হয়ে কলকাতা। এই ৩০০ কিলোমিটার আসতে প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লেগে যাবে।