৭৩ বছর বয়সে থেমে গিয়েছে জাকির হুসেনের তবলার বোল। তাঁর জীবন চক্রকে সারা জীবনের মতো থামিয়ে দিয়েছে ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস। ফুসফুসের এই কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সান ফ্রানসিসকোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন কিংবদন্তী তবলা বাদক। কী এই ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস?
আমেরিকার ন্যাশনাল হার্ট, লাং এবং ব্লাড ইনস্টিটিউট (এনআইএইচ) জানিয়েছে এটি ফুসফুস জনিত এক ধরনের কঠিন ব্যাধি। কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর প্রভাবে ফুসফুসের বায়ু থলি বা অ্যালভিওলির চারপাশের টিস্যুগুলির উপরে এর প্রভাব পরে। ফুসফুসের টিস্যু ঘন এবং শক্ত হয়ে আসে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই রোগের প্রভাবে ফুসফুসে ক্ষতি হয়। যা শ্বাস প্রশ্বাসকে প্রভাবিত করে, একে ফাইব্রোসিস বলা হয়। এই রোগের প্রভাবে ক্রমশ ব্যক্তির শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। যদি পরিবারে কারও এই আইপিএফ রোগ থেকে থাকে বা অসম্ভব ধুমপানের অভ্যাস থাকে তাহলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
আইপিএফ হলে কী হয়? এই রোগের ফলে টিস্যুতে দাগ পরে যায়। এই দাগের কারণ বার বার ফুসফুসের ক্ষতি এবং তা আবার সেরে ওঠা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এই টিস্যুর নিরাময় প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে তখন সেই ক্ষতযুক্ত টিস্যুগুলিই রয়ে যায়।
একটি সুস্থ সবল ফুসফুসের ক্ষেত্রে, অক্সিজেন সহজেই ফুসফুসের বায়ু থলির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ক্যাপিলারিস হয়ে রক্তে মিশে যায়। তবে আইপিএফের রোগীদের ক্ষেত্রে, ফুসফুসের বায়ু থলিগুলি ঘন হয়ে যায়, ফলে রক্তে অক্সিজেন প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
কী ভাবে চিকিৎসা সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে আইপিএফ-এর কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। তবে ওষুধের সাহায্যে ফুসফুসের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষতকে সারানোর চেষ্টা করা হয়। যা ধীরে ধীরে ফুসফুসের অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে সাধারণ জীবন যাপন ফিরে পেতে সাহায্য করে।
এনআইএইচ জানিয়েছে, নিন্টেডানিব বা পিরফেনিডোন জাতীয় ওষুধ ফুসফুসকে ভাল ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এই ধরনের রোগীর যাতে অম্বল বা অ্যাসিডিটি না হয়, সেই দিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। তাই অ্যান্টাসিড দেওয়া হয়।
যদি আইপিএফ-এর প্রভাবে শ্বাসকষ্ট অসম্ভব বেড়ে যায়, তাহলে রোগীকে অক্সিজেন দিতে হয়। এমনকি প্রয়োজনে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দিতে হতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সিভিয়ার অসুখের ক্ষেত্রে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয় অনেক সময়।
কীভাবে নিজেকে সুস্থ রাখবেন? ধূমপান ছেড়ে দেওয়া, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা সর্বোপরি নিয়মমাফিক জীবন যাত্রাই এই রোগের থাবা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। মানসিক চাপ কম রাখাটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে সঠিক জীবনযাত্রাই হতে পারে তার একমাত্র পথ।