Kali Puja 2021: প্রতিমা পূজার বিরোধী হলেও বিবেকানন্দই ছিলেন করুণাময়ী মা ভবতারিণীর একনিষ্ঠ ভক্ত!

দেবী কালীর একনিষ্ঠ ভক্তে পরিণত হওয়া বিবেকানন্দ বলেছিলেন, কালী হলেন “ব্রহ্মাণ্ডের দিব্য জননী”, যিনি “নিজের মধ্যে সৃষ্টি ও ধ্বংস, প্রেম ও ভীতি, জীবন ও মৃত্যুকে আত্মীভূত করেছেন।

Kali Puja 2021: প্রতিমা পূজার বিরোধী হলেও বিবেকানন্দই ছিলেন করুণাময়ী মা ভবতারিণীর একনিষ্ঠ ভক্ত!
দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে স্বামী বিবেকানন্দের প্রার্থনা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 03, 2021 | 6:01 PM

দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে স্বামী বিবেকানন্দের প্রার্থনা হল স্বামী বিবেকানন্দের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৮৮৪ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংস নরেন্দ্রনাথ দত্তকে (স্বামী বিবেকানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম) দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে আর্থিক উন্নতির জন্য প্রার্থনা করতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্রনাথ শেষ পর্যন্ত শুদ্ধ জ্ঞান, ভক্তি ও বৈরাগ্য প্রার্থনা করেন। গবেষকেরা এই ঘটনাটি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে এটিকে বিবেকানন্দের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, বিবেকানন্দ প্রথম দিকে প্রতিমা পূজার বিরোধী হলেও, এই ঘটনার পর থেকে তিনি কালীমূর্তি পূজা মেনে নেন এবং কালীমূর্তির কাছে প্রার্থনা করেন।

আর্থিক সমস্যা দূর করার উদ্দেশ্যে তিন বার কালীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে গিয়ে তিন বারই নরেন্দ্রনাথ উচ্চারণ করেছিলেন: “মা, জ্ঞান ও ভক্তি ছাড়া আর কিছুই আমি চাই না।” আর্থিক সমস্যা দূর করার উদ্দেশ্যে তিন বার কালীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে গিয়ে তিন বারই নরেন্দ্রনাথ উচ্চারণ করেছিলেন: “মা, জ্ঞান ও ভক্তি ছাড়া আর কিছুই আমি চাই না।” মা ভবতারিণী জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রেই এক নয়া সাফল্যের ঠিকানায় ভক্তদেরকে পোঁছে দেন। ভবতারিণীর আর্শীবাদেই গদাধর চট্টোপাধ্যায় শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংশদেবে পরিণত হয়েছিলেন।

১৮৮১ সালে নরেন্দ্রনাথের সঙ্গে ১৯শ শতাব্দীর মরমিয়া সন্ত রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাক্ষাৎ ঘটেছিল। তিনি মাঝে মাঝেই রামকৃষ্ণ পরমহংসের সঙ্গে দেখা করতে দক্ষিণেশ্বরে যেতেন। এই দুরবস্থার মধ্যে নরেন্দ্রনাথের দক্ষিণেশ্বরে যাতায়াত বৃদ্ধি পায়। তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের উপদেশে শান্তি পেতে থাকেন। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবী কালীর পূজা করতেন। প্রথম দিকের সাক্ষাতে নরেন্দ্রনাথ কালীকে গ্রহণ করতে বা তার পূজা করতে সম্মত ছিলেন না। রামকৃষ্ণ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “যদি আমার মা কালীকে নাই মানবি, তাহলে এখানে আসিস কেন?” নরেন্দ্রনাথ উত্তরে বলতেন, “আমি আপনাকে দেখতে আসি। আমি আসি, কারণ, আপনাকে আমি ভালবাসি।”

ঘটনা এক- একদিন নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণ পরমহংসকে কালীর কাছে তাদের পরিবারের প্রয়োজনে আর্থিক সুরাহার জন্য প্রার্থনা করতে বলেন। তা শুনে রামকৃষ্ণ বলেন, “আজ মঙ্গলবার। ভাল দিন। তুই নিজে মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা কর।” রামকৃষ্ণ কালী সম্পর্কে নরেন্দ্রনাথকে বলেছিলেন: “তিনি সর্বোচ্চ জ্ঞান, ব্রহ্মের অখণ্ড শক্তি এবং তাঁর ইচ্ছামাত্রেই তিনি জগৎ সৃষ্টি করেছেন। সব কিছু দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর।” তখন নরেন্দ্রনাথ তার গুরুর কথায় বিশ্বাস করে আর্থিক দুরবস্থার সমাধান কল্পে কালীর কাছে প্রার্থনা করবেন বলে মনস্থির করেন। রামকৃষ্ণের নির্দেশ অনুসারে, রাত্রি ৯টার সময় নরেন্দ্রনাথ মন্দিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। মন্দিরে প্রবেশ করে কালীমূর্তির দিকে তাকিয়েই তার মন ভক্তি ও প্রেমে আপ্লুত হয়ে যায়।তিনি কালীমূর্তির সামনে নতজানু অয়ে বসে পড়েন এবং “আনন্দের উচ্ছ্বাসে” কালীর নাম বারংবার উচ্চারণ করতে থাকেন। মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে তার মনে হয় মূর্তিটি “জীবন্ত ও চৈতন্যময়, দিব্য প্রেম ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।” তিনি কালীর কাছে দিব্য জ্ঞান, ভক্তি ও দেবীর দিব্য দর্শন প্রার্থনা করেন এবং যে জন্য তিনি এসেছিলেন, সেই পারিবারিক আর্থিক অবস্থার উন্নতি কল্পে প্রার্থনা করতেই ভুলে যান।

পরবর্তী জীবনে দেবী কালীর একনিষ্ঠ ভক্তে পরিণত হওয়া বিবেকানন্দ বলেছিলেন, কালী হলেন “ব্রহ্মাণ্ডের দিব্য জননী”, যিনি “নিজের মধ্যে সৃষ্টি ও ধ্বংস, প্রেম ও ভীতি, জীবন ও মৃত্যুকে আত্মীভূত করেছেন।

পরবর্তীকালে বিবেকানন্দ যখন পাশ্চাত্যে বেদান্ত প্রচারে গিয়েছিলেন, তখন তিনি ভগিনী নিবেদিতাকে একটি চিঠিতে লেখেন যে, মা তাকে রক্ষা করছেন এবং হৃদয়ের সমর্থন জোগাচ্ছেন। তিনি এও বলেছিলেন যে, “কালীপূজা আমার বিশেষ ধারা” এবং তিনি এও বলেন যে তিনি কাউকে কালীপূজা করতে উপদেশ দেন না। কারণ কালীপূজা তার কাছে গোপনীয়।

আরও পড়ুন:  Kali Pujo 2021: কালীপুজোর ভোগে থাকে চুনো মাছের টক! তিন কালীতীর্থে ভোগে কী কী নিবেদন করা হয়, জানেন?